করোনার উৎস ও বিস্তারে চীনের ভূমিকা জানতে তদন্ত চায় ১০০ দেশ

আজ গোটা বিশ্বে এক আতঙ্কের নাম করোনাভাইরাস। এই ভাইরাসের তাণ্ডবে মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর রাষ্ট্র আমেরিকা। একই রকম শোচনীয় অবস্থা ইউরোপের দেশ ইতালি, স্পেন ও ফ্রান্সের। এর ধ্বংসযজ্ঞে অসহায় হয়ে পড়েছে ব্রিটেনও।প্রাণঘাতী এই করোনাভাইরাসের আঁতুরঘর হল চীনের উহান।

সেখান থেকেই আজ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চলে কালো থাবা বসিয়েছে এই ভাইরাস। তবে নতুন করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার শুরুতে সংক্রমণ রোধে চীনের ভূমিকা কী ছিল সে বিষয়ে তদন্ত করতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) ৭৩তম সম্মেলনে একটি প্রস্তাবনা উত্থাপন করবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। ১০০টি দেশ ইইউর এই খসড়া প্রস্তাবনায় সমর্থন দিয়েছে।

সোমবার (১৮ মে) সিএনএন অনলাইনের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

১০০টি দেশের মধ্যে চীনের ঘনিষ্ঠ মিত্র রাশিয়াও রয়েছে। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন একদা চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে ‘নিঃসঙ্গ লড়াকু’ বলে উল্লেখ করেছিলেন। চীনের বিরুদ্ধে তদন্ত চেয়ে নিজের কথার সত্যতা প্রমাণ করলেন পুতিন।

মহামারির মধ্যেই সোমবার থেকে চার দিনব্যাপী বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জেনেভায়। এটি হবে অনলাইন সম্মেলন। এই সম্মেলনে চীনের বিরুদ্ধে তদন্তের প্রস্তাব দেবে ইইউ। তবে ইইউর খসড়া প্রস্তাবনা তৈরিতে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছে যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র অস্ট্রেলিয়া।

অস্ট্রেলিয়ার তৎপরতা ও খসড়া প্রস্তাবের বিরুদ্ধে চীন তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। বেইজিং হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, অস্ট্রেলিয়ার এ ধরনের কর্মকাণ্ড দায়িত্বহীনতার পরিচয়। এতে মহামারি মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতার বিষয়টি ব্যাহত হবে। যার ভুক্তভোগী হবে মানুষ।

অস্ট্রেলিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রী গ্রেগ হান্ট সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, মঙ্গলবার দিনের শুরুর দিকেই প্রস্তাবটি অনুমোদিত হওয়ার আশা করছেন তিনি।

অস্ট্রেলিয়ান টিভি নেটওয়ার্ক এবিসির খবরে বলা হয়েছে, কমপক্ষে ১১৬টি দেশ স্বাধীন তদন্তের দাবিতে খসড়া প্রস্তাবটির কো-স্পনসর হয়ে স্বাক্ষর করেছে। ব্রিটেন, কানাডা, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, জাপান, নিউজিল্যান্ড ও রাশিয়া তাতে সমর্থনের ইঙ্গিত দিয়েছে।

ইইউর খসড়া প্রস্তাবে চীনের বিরুদ্ধে ‘নিরপেক্ষ, স্বাধীন ও ব্যাপক তদন্ত’ করতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। জাতিসংঘের এ সংস্থাটি মহামারি মোকাবিলায় প্রধান আন্তর্জাতিক সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছে।

খসড়া প্রস্তাবে ইইউ কিছুটা নরম ভাষা ব্যবহার করেছে। অথচ ভাইরাসের উৎপত্তি ও চীনের ভূমিকা নিয়ে তদন্তের ব্যাপারে অস্ট্রেলিয়ার কড়া অবস্থান কিছুদিন আগেও ছিল চোখে পড়ার মতো। খসড়া প্রস্তাবটি পাস করাতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বেশিরভাগ সদস্য দেশের সই দরকার। রাশিয়ার মতো চীনের মিত্র দেশগুলোর সই যোগাড় করতেই সম্ভবত কৌশল হিসেবে খসড়া প্রস্তাবে নরম ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে।

এর আগে বেইজিং বলেছিল, যে অভিযোগ তোলা হচ্ছে সে বিষয়ে একমাত্র বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তদন্ত মেনে নেবে চীন। তবে জাতিসংঘের স্বাস্থ্য বিষয়ক সংস্থাটির বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সংস্থাটিকে ‘চীনঘেঁষা’ বলে উল্লেখ করেছেন। এমনকি মহামারি মোকাবিলায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ তুলে তা তদন্ত করতে নিজের প্রশাসনকে অনুমতিও দিয়েছেন।

গত সপ্তাহে ব্রিটেনে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লিও জিয়াওমিং বলেছিলেন, ‘আমাদের লুকানোর কিছু নেই। আমাদের সমস্ত কার্যক্রম স্বচ্ছ। সেহেতু আমাদের ভয় পাওয়ারও কিছু নেই। আমরা আন্তর্জাতিক, স্বাধীন মূল্যায়নকে স্বাগত জানাই। তবে এ কাজ হতে হবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মাধ্যমে।’

ইইউ এবং অস্ট্রেলিয়ার তৎপরতার বিরুদ্ধে চীন কী পদক্ষেপ নেয় এখন তাই দেখার বিষয়। বিশ্ব সংস্থার সম্মেলনের প্রথম দিনেই ভিডিও লিংকের মাধ্যমে ভাষণ দেবেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জিনপিংয়ের ভাষণটিকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।

করোনা মহামারির কারণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ইতিহাসে এবারই প্রথম বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে। সংস্থাটি জানিয়েছে, তাদের জন্য এবারের সম্মেলন অনেক গুরুত্বপূর্ণ।এখান থেকে মহামারি নিয়ন্ত্রণ ও পরবর্তী করণীয় বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ অনেক সিদ্ধান্ত আসতে পারে ।

বৈশাখী নিউজজেপা