করোনায় কেন গন্ধ এবং স্বাদের অনুভূতি চলে যায়?

করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার অনেক লক্ষণের মধ্যে একটি হলো ঘ্রাণশক্তি হারিয়ে ফেলা। এর পেছনের কারণ বের করতে গবেষণা চালিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। একাধিক গবেষণায় উঠে এগেছে, আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে জ্বর বা কাশি শুরুর আগেই তারা স্বাদ-গন্ধ হারিয়ে ফেলছেন। অন্য উপসর্গ ছাড়া যারা স্বাদ-গন্ধ হারাচ্ছেন, তাদের কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা ৯৫ শতাংশেরও বেশি। এর কারণ হিসেবে হাইপোস্মিয়া বা অ্যানোসিমিয়ার সম্পর্কের কথা উল্লেখ করেছেন গবেষকরা।

ভাইরাসে সংক্রমিত ব্যক্তির গন্ধ এবং স্বাদের অনুভূতি চলে যাওয়ার কারণ বুঝতে তৈরি হয়েছে গ্লোবাল কেমোসেন্সরি রিসার্চ কনসোর্টিয়াম। গবেষকেরা সেখান থেকে অনলাইন সমীক্ষা চালিয়ে বৈশ্বিক তথ্য সংগ্রহ করেছেন। এই তথ্য বিশ্লেষণ করে গবেষকরা দেখতে পান, কোভিড-১৯ এর ফলে আক্রান্ত ব্যক্তির ৮০ শতাংশ ঘ্রাণশক্তি, ৬৯ শতাংশ স্বাভাবিক স্বাদ নষ্ট ও ৩৯ শতাংশ ত্বকের স্বাভাবিক সংবেদন নষ্ট হচ্ছে।

এই গবেষণা প্রতিবেদনটি সম্প্রতি সায়েন্টিফিক আমেরিকান ডটকমে প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবেদনে গবেষকরা বলেছেন, শুধু কোভিড-১৯ এ সংক্রমিত হলে নয়, বিভিন্ন অসুস্থতার কারণে ঘ্রাণশক্তি হারানোর ঘটনা ঘটতে পারে। সাধারণ সর্দি থেকে শুরু করে সাইনাসে সংক্রমণ, প্রাথমিক পর্যায়ের আলঝেইমার এবং পার্কিনসন রোগ বা সাধারণভাবে বার্ধক্যে ঘ্রাণশক্তি কমে যেতে পারে। তবে করোনা শনাক্তের ক্ষেত্রে অ্যানোসিমিয়ার দিকে নজর দেওয়া যেতে পারে।

ভাইরাসে ঘ্রাণশক্তি নষ্ট হওয়ার ব্যাপারে বিজ্ঞানীরা বলেছেন, ঘ্রাণশক্তি হারানোর পেছনে নানা কারণ থাকতে পারে। তবে অধিকাংশ গবেষক একমত হয়েছেন যে, করোনা ভাইরাস নাকের সংবেদী কোষের ওপর প্রভাব ফেলে, এর কারণে মস্তিষ্কে সংকেত পাঠানো বন্ধ হয়ে যায়। আর এই কারণে তখন ঘ্রাণশক্তি হ্রাস পায়।

এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রর (সিডিসি) সাথে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং ফ্রান্স হঠাৎ স্বাদ-গন্ধ নষ্ট হওয়াকে কোভিডের উপসর্গের তালিকার প্রথম দিকে জায়গা দিয়েছে।

অন্যদিকে ব্রিটিশ রিনোলজিক্যাল সোসাইটির প্রেসিডেন্ট এবং শীর্ষ নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ক্লেয়ার হপকিন্স বলছেন, জ্বর বা কাশির চেয়েও হঠাৎ স্বাদ-গন্ধের অনুভূতি চলে যাওয়া কোভিডের আরো ‘বিশ্বাসযোগ্য‘ উপসর্গ হতে পারে। ‘গবেষণায় আমরা দেখেছি অন্য কোনো উপসর্গ ছাড়াই যারা স্বাদ-গন্ধ হারাচ্ছেন, তাদের কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা ৯৫ শতাংশেরও বেশি’ বলে উল্লেখ করেন প্রফেসর হপকিন্স।

ক্লেয়ার হপকিন্স আরও বলছেন, আক্রান্ত হওয়ার সাত থেকে ১৪ দিনের মধ্যে স্বাদ-গন্ধের অনুভূতি ফিরে আসছে। কিন্তু ১০ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে বেশি সময় লাগছে।

আবার ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে কোনো কোনো ক্ষেত্রে রোগীর গন্ধ পাওয়ার ক্ষমতা চিরতরে চলে যেতে পারে। কখনো কখনো তা ফিরে পেতে দেড় বছর লেগে যেতে পারে।

বৈশাখী নিউজজেপা