করোনায় বেড়েছে হ্যাক

মহামারি আকার ধারণ করা করোনাভাইরাসের আতঙ্কে বিশ্বের অধিকাংশ মানুষ এখন নিজ বাড়িতেই অবস্থান করছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেই তাদের বেশিরভাগ সময় কাটছে। এরই মধ্যে সক্রিয় হয়ে উঠেছে সাইবার অপরাধীরাও। ফেইসবুক, ইমো, হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইবার ও টুইটার অ্যাকাউন্ট হ্যাক করছে তারা। টেক জায়ান্ট গুগলের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, করোনাকালীন এই সময়ে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় হ্যাকিং ও ফিশিং প্রচেষ্টা বেড়েছে বহুগুণ। এ বিষয়ে মনিটরিং বাড়িয়ে কঠোর ব্যবস্থা না নিলে ‘লকডাউনে’ হ্যাকিংয়ের মতো অপরাধ আরও বাড়বে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

হ্যাক ছাড়াও ফেসবুকে আপত্তিকর স্ট্যাটাস ও লিংক শেয়ারের পাশাপাশি হ্যাকাররা করোনা নিয়ে গুজব ছড়িয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। অনলাইনে কেনাকাটা করতে গিয়েও প্রতারিত হচ্ছেন অনেকে।

দেশীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে হ্যাকিংয়ের মতো অপরাধ দিন দিন বেড়েই চলেছে। যেখানে বিল গেটস, ওবামা, বাইডেনদের মতো বিশ্বের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের টুইটার অ্যাকাউন্ট হ্যাকড হয়, সেলিব্রেটিদের অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয় সেখানে সাধারণ মানুষদের নিরাপত্তা কোথায়। এ নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় বিশ্বের বহু মানুষ। এসব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম হ্যাকড করে বিট কয়েন দাবি করছে হ্যাকাররা।

এক টুইটে বিল গেটস বলেন, ‘আপনি আমায় ১ হাজার ডলার পাঠান, আমি আপনাকে ২ হাজার ডলার ফেরত দেব’।

এছাড়া ডয়চে ভেলের খবরে বলা হয়, শুধু বিল গেটসই না, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা থেকে শুরু করে জো বাইডেনসহ অনেকের ভেরিফায়েড টুইটার হ্যান্ডেল থেকে এমন মেসেজ ছড়িয়েছে নেট দুনিয়ায়।

এ নিয়ে রীতিমতো সাড়া পড়ে গেছে গোটা বিশ্বে। পরে টুইটার জানায়, বিশ্বের বহু হাইপ্রোফাইল ব্যক্তির টুইটার অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়েছে, সে কারণেই এমন মেসেজ ছড়িয়ে পড়েছে।

এছাড়াও এলন মাস্ক, সিলিকন ভ্যালির জায়েন্ট সংস্থা উবার, অ্যাপেল সবারই টুইটার অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়। আধঘণ্টার মধ্যে যদি বিট কয়েন বা ক্রিপ্টো কারেন্সির মাধ্যমে তাদের ১ হাজার ডলার দেওয়া হয়, তা না হলে দ্রুত তা দ্বিগুণ হয়ে যাবে। (বিট কয়েন বা ক্রিপ্টো কারেন্সি হলো এক ধরনের ভার্চুয়াল কয়েন। এর মাধ্যমেই ভার্চুয়াল জগতে টাকার আদান-প্রদান করা যায়।)

এ বিষয়ে গুগলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, চলতি বছরের শুধুমাত্র এপ্রিলেই ১৭৭৫ অ্যাকাউন্টে হ্যাকিং প্রচেষ্টার ব্যাপারে সতর্কবার্তা পাঠিয়েছে প্রতিষ্ঠানটির সাইবার নিরাপত্তা বিভাগ। বিভিন্ন রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতায় হ্যাকাররা ওই অ্যাকাউন্টগুলোর নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা চালিয়েছিল বলে উল্লেখ করা হয়।

এমনকি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় (ডব্লিউএইচও) আড়িপাতার জন্য জিমেইল অ্যাকাউন্ট তৈরি করেছে এই প্রতিষ্ঠানগুলো। ওই হ্যাকার গ্রুপগুলোর মধ্যে অধিকাংশই ভারতভিত্তিক বলে দাবি করছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

এদিকে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ওই অ্যাকাউন্টগুলোর মাধ্যমে আর্থিক সেবা, পরামর্শ এবং স্বাস্থ্যসেবা দানকারী সংস্থাগুলোর নেতৃস্থানীয়দের লক্ষ্য করে ফেক আইডি বানিয়ে তথ্য হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চলেছে – বলে জানিয়েছে গুগল।

এক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, স্লোভেনিয়া, কানাডা, ভারত, বাহরাইন, সাইপ্রাস এবং যুক্তরাজ্যসহ বেশ কিছু দেশের একইরকম সংস্থাকে লক্ষ্য করে হ্যাকিং চেষ্টা চলেছে।

এর আগে, কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারির প্রাক্কালে বিশ্বব্যাপী রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় হ্যাকিং বাড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল ইন্টারনেট জায়ান্ট গুগল।

অন্যদিকে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) কর্মীসহ মেডিকেল ও স্বাস্থ্যসেবা পেশাদারদের লক্ষ্য করে হ্যাকিং প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে বলে জানানো হয়েছে।

এদিকে বাংলাদেশেও প্রায়শই শোনা যায় সোশ্যাল মিডিয়ার অ্যাকাউন্ট হ্যাকের খবর। এসব হ্যাকারদের দমাতে উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ।

গতকাল শুক্রবার (১৭ জুলাই) বাংলাদেশ পুলিশের অফিসিয়াল পেজে ‘সোশ্যাল মিডিয়া একাউন্ট হ্যাক হলে করোণীয়’ শিরোনামে একটি একটি পরামর্শমূলক আর্টিকেল প্রকাশ করা হয়েছে।

একাউন্ট হ্যাক হলে তাদের পরামর্শ হলো:

#প্রথমেই http://www.facebook.com/hacked লিঙ্কে প্রবেশ করুন।

#এরপর “Someone else got into my account without my permission”-এ ক্লিক করুন। হ্যাক হওয়া একাউন্টটির তথ্য চাওয়া হলে সেখানে উল্লেখ করা ২টি অপশনের (ইমেইল বা ফোন নাম্বার) যে কোন একটির ইনফরমেশন দিন।

#প্রদত্ত তথ্য সঠিক হলে প্রকৃত একাউন্টটিই দেখাবে এবং আপনার বর্তমান অথবা পুরাতন পাসওয়ার্ড চাইবে; এখানে আপনার পুরাতন পাসওয়ার্ডটি দিয়ে “Continue” করুন।

#হ্যাকার যদি ইমেইল এড্রেস পরিবর্তন করে না থাকে তাহলে আপনার ইমেইলে রিকভারি অপশন পাঠানো হবে। এর মাধ্যমে হ্যাকড ফেসবুক একাউন্ট উদ্ধার করা সম্ভব।

#হ্যাকার যদি ইমেইল এড্রেস, ফোন নাম্বারসহ লগইন এর জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য পরিবর্তন করে থাকে তাহলে, Need another way to authenticate? -> Submit a request to Facebook এ ক্লিক করলে ফেসবুক প্রোফাইলটি উদ্ধারের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য ও আইডি সরবরাহের ফর্ম পূরণের মাধ্যমে হ্যাকড ফেসবুক একাউন্ট উদ্ধার করা সম্ভব।

#সোশ্যাল মিডিয়ায় হ্যাকিং-এর শিকার হলে সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টারে আপনি সরাসরি নিজে এসে অভিযোগ জানাতে পারেন। এছাড়াও নিম্নবর্ণিত যে কোন মাধ্যমে অভিযোগ পাঠাতে পারেন। হটলাইন : ০১৭৩০৩৩৬৪৩১, ইমেইল : smmcpc2018@gmail.com; ফেসবুক পেইজ : https://www.facebook.com/cpccidbdpolice/

এছাড়াও, সোশ্যাল মিডিয়া একাউন্ট হ্যাকের মাধ্যমে ব্ল্যাকমেইলিংয়ের শিকার হলে কালক্ষেপণ না করে নিকটস্থ থানা পুলিশকে অবহিত করুন। প্রত্যেককে সচেতন হওয়ার অন্যকে সচেতন করার মাধ্যমে নিরাপদ জীবন গড়ার আহ্বান জানানো হয়।

বৈশাখী নিউজজেপা