প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী মুর্তজা বশীরের জন্মদিন আজ

চিত্রশিল্পী, শিক্ষক, লেখক, চলচ্চিত্রনির্মাতা, শিল্পনির্দেশক, গবেষক ও মুদ্রাবিশারদ মুর্তজা বশীরের ৮৮তম জন্মদিন আজ। মাত্র দুদিন আগে শনিবার সকালে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন বরেণ্য এই চিত্রশিল্পী। তিনি দুই মেয়ে মুনিরা বশীর, মুনিজা বশীর, ছেলে মেহরাজ বশীরসহ আত্মীয়-স্বজন, শুভানুধ্যায়ী রেখে গেছেন।

ভাষাবিদ ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর কনিষ্ঠ সন্তান মুর্তজা বশীর ১৯৩২ সালের ১৭ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন। মা মরগুবা খাতুন। জন্মের পর বাবা নবজাতকের নাম রাখেন আবুল খায়ের মুর্তজা বশীরুল্লাহ। পরে বাবার পরিচয়ে পরিচিত হবেন না বলেই তিনি নামের সামনের ও পেছনের অংশ ছেঁটে নাম ধারণ করলেন মুর্তজা বশীর।

তার শিক্ষাজীবন শুরু ঢাকার নবকুমার ইনস্টিটিউশনে। পরে তিনি বগুড়ার করোনেশন ইনস্টিটিউশন, ঢাকা গভর্নমেন্ট ইনস্টিটিউট অব আর্টস (বর্তমানে ঢাবির চারুকলা ইনস্টিটিউট) ও কলকাতা আশুতোষ মিউজিয়ামে পড়ালেখা করেন। ইতালির ফ্লোরেন্স একাডেমি দেল্লেবেল্লে আরতিতে চিত্রকলা ও ফ্রেস্কো নিয়ে, প্যারিসের ইকোলে ন্যাশিওনাল সুপিরিয়র দ্য বোজার্ট এবং আকাদেমি গোয়েৎসেতে তিনি মোজাইক ও ছাপচিত্রের ওপর অধ্যয়ন করেন। ১৯৫৫ সালে মুর্তজা বশীর ঢাকার নবাবপুর সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের ড্রয়িং শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৭৩ সালে চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগে সহকারী অধ্যাপক পদে যোগ দেন। ১৯৯৮ সালে অধ্যাপক হিসেবে অবসর নেন।

চিত্রকলায় অবদানের জন্য ২০১৯ সালে স্বাধীনতা পদক, ১৯৮০ সালে একুশে পদক, ১৯৭৫ সালে শিল্পকলা একাডেমি পদক পেয়েছেন মুর্তজা বশীর। তিনি ১৯৬৩ সালে উর্দু চলচ্চিত্র ‘কারোয়াঁ’র কাহিনী ও চিত্রনাট্য রচনা করেন। ১৯৬৪ সালে হুমায়ুন কবীর রচিত ‘নদী ও নারীর’ চিত্রনাট্যকার, শিল্পনির্দেশক ও প্রধান সহকারী পরিচালক ছিলেন। ১৯৬৫ সালে উর্দু চলচ্চিত্র ‘ক্যায়সে কাহু’র শিল্পনির্দেশক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

মুর্তজা বশীর বাংলা একাডেমি ও এশিয়াটিক সোসাইটি অব বাংলাদেশের আজীবন সদস্য ছিলেন। এ ছাড়া তিনি জাপানের ফুকুওকা এশিয়ান কালচারাল প্রাইজ কমিটির নমিনেটর, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জাদুঘরের বোর্ড অব ট্রাস্টির সদস্য, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের কলা ও মানবিক গবেষণা মূল্যায়ন কমিটি ও কমনওয়েলথ স্কলারশিপ নির্বাচন কমিটির সদস্য ছিলেন।

মুর্তজা বশীর কখনও জাঁকজমকভাবে জন্মদিন উদযাপন করতে পছন্দ করতেন না। এ বিষয়ে তার মেয়ে মুনীরা বশীর বলেন, ‘বাবা জন্মদিন কাটাতেন অন্য সব দিনের মতোই। তবে মানুষের ভালোবাসাকে তিনি উপেক্ষা করতেন না। অনেকে বাবাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতেন। এটা তিনি উপভোগ করতেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাবার জন্মদিনে রান্না করতাম। এবারের জন্মদিনেও রান্না করব। তবে এদিনটিতে আমরা কিছু গরিব মানুষকে খাওয়ানোর পরিকল্পনা করেছি। এ ছাড়া কোনো আনুষ্ঠানিকতা আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে নেই। আমরা সবার কাছে বাবার জন্য দোয়া চাই।’

বৈশাখী নিউজজেপা