আজ ঋতুপর্ণ ঘোষের শুভ জন্মদিন

প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক ঋতুপর্ণ ঘোষের জন্মদিন আজ। ১৯৬৩ সালের ৩১ অগস্ট তিনি কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা-মা দুজনেই চলচ্চিত্র জগতের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বাবা সুনীল ঘোষ ছিলেন তথ্যচিত্র-নির্মাতা ও চিত্রকর।

ঋতুপর্ণ ঘোষ সাউথ পয়েন্ট হাই স্কুলের ছাত্র ছিলেন। পরে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ছিলেন ভারতের এলজিবিটি সম্প্রদায়ের এক বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব। জীবনের শেষ বছরগুলিতে তিনি রূপান্তরকামী জীবনযাত্রা নিয়ে নানা পরীক্ষানিরীক্ষা করছিলেন। তিনি নিজের সমকামী সত্ত্বাটিকে খোলাখুলিভাবে স্বীকার করে নেন, যা খুব কম মানুষই করে থাকে।

চলচ্চিত্র জগতে আসার আগে ঋতুপর্ণ ঘোষ ছিলেন কলকাতার একজন ‘অ্যাডভারটাইসমেন্ট কপিরাইটার’। ১৯৮০-র দশকে বাংলা বিজ্ঞাপনের দুনিয়ায় বেশ কিছু জনপ্রিয় এক লাইনের শ্লোগান লিখে দিয়েছিলেন তিনি। সেই সময় কলকাতায় ইংরেজি ও হিন্দি বিজ্ঞাপনগুলো বাংলায় অনুবাদ করে চালানো হত। ঋতুপর্ণ বাংলায় স্বতন্ত্র বিজ্ঞাপনী শ্লোগানের ধারা সৃষ্টি করেন।

ঋতুপর্ণ ঘোষের কর্মজীবন শুরু হয় বিজ্ঞাপনী দুনিয়ায়। তার পরিচালনায় প্রথম সিনেমা ‘হিরের আংটি’ ১৯৯২ সালে মুক্তি পায়। এটি ছিল ছোটোদের চলচ্চিত্র। সিনেমাটি তৈরি হয়েছিল শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের একটি উপন্যাস অবলম্বনে। এতে অভিনয় করেছিলেন বসন্ত চৌধুরী, মুনমুন সেনসহ আরও অনেকে।

১৯৯৪ সালে তার দ্বিতীয় সিনেমা উনিশে এপ্রিল মুক্তি পায়। এই সিনেমাতে এক মা ও তার মেয়ের পারস্পরিক সম্পর্কের কাহিনি দেখানো হয়েছে। সিনেমাটি সমালোচকদের প্রশংসা কুড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বাণিজ্যিকভাবেও সফল হয়। ১৯৯৫ সালে এই সিনেমা শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও পায়। এরপর দহন মুক্তি পায় ১৯৯৭ সালে। ১৯৯৮ সালে এই সিনেমা শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্য বিভাগে জাতীয় পুরস্কার পায় এবং এই সিনেমার দুই অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত ও ইন্দ্রাণী হালদার একসঙ্গে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে জাতীয় পুরস্কার পান।

১৯৯৯ সালে মুক্তি পাওয়া অসুখ সিনেমাতে এক অভিনেত্রী ও তার আয়ের উপর অনিচ্ছুকভাবে নির্ভরশীল বাবার সম্পর্ক দেখানো হয়। এটি শ্রেষ্ঠ বাংলা সিনেমা বিভাগে জাতীয় পুরস্কার পায়। বাড়িওয়ালি মুক্তি পায় ২০০০ সালে। ২০০৪ সালে ঋতুপর্ণের প্রথম হিন্দি সিনেমা রেনকোট মুক্তি পায়। ২০০৫ সালে তার বাংলা সিনেমা অন্তরমহল মুক্তি পায়। ২০০৭ সালে দ্য লাস্ট লিয়ার মুক্তি পায়। ২০০৮ সালে মুক্তি পায় খেলা। এই সিনেমাটি শ্রেষ্ঠ বাংলা চলচ্চিত্র বিভাগে জাতীয় পুরস্কার পায়। ২০০৯ সালে যীশু সেনগুপ্ত, অনন্যা চট্টোপাধ্যায়, দীপংকর দে ও মমতা শঙ্কর অভিনীত সিনেমা আবহমান মুক্তি পায়। এটি শ্রেষ্ঠ পরিচালনা বিভাগে জাতীয় পুরস্কার পায়।

মৃত্যুর আগে তিনি ‘সত্যান্বেষী’র শুটিং শেষ করেছিলেন।

২০১৩ সালের ৩০ মে নিজের কলকাতার বাড়িতেই হৃদরোগে –আক্রান্ত হয়ে ঋতুপর্ণ ঘোষের মৃত্যু ঘটে।

বৈশাখী নিউজজেপা