জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধুর বাংলায় ভাষণ দেওয়ার ৪৬তম বার্ষিকী আজ

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জাতিসংঘে বাংলায় প্রথম ভাষণ দেওয়ার ৪৬তম বার্ষিকী আজ। ১৯৭৪ সালের আজকের এই দিনে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে প্রথমবারের মতো বাংলায় ভাষণ দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু।

বাংলায় বক্তৃতা দেওয়ার ঐতিহাসিক উদাহরণ স্থাপনের ঘটনা ছিল বঙ্গবন্ধুর গোটা জীবনের স্বাভাবিক এবং যৌক্তিক পরিণতি। এর আগে ১৯৭৪ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ জাতিসংঘের ১৩৬তম সদস্য দেশের মর্যাদা পায়। এর মাত্র সাত দিন পর ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ২৯তম অধিবেশনে বঙ্গবন্ধু বাংলায় ভাষণ দেন। জাতিসংঘে এটিই ছিল প্রথম বাংলায় ভাষণ। এর মাধ্যমে বাংলা ভাষা বিশ্বদরবারে পেয়েছে সম্মানের আসন। বাংলা ভাষাভাষী মানুষ পেয়েছে গর্ব করার সুযোগ।

বিশ্নেষকদের মতে, জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধুর বাংলায় ভাষণের আরেকটি মূল দিক ছিল, এটি বিশ্বের অধিকারহারা শোষিত-বঞ্চিত মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার পক্ষে সোচ্চার এক কণ্ঠস্বর। অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায় প্রতিষ্ঠার একটি বলিষ্ঠ উচ্চারণ ও সাহসী পদক্ষেপ। বিশ্ব পরিসরে বঙ্গবন্ধুর আগে বাংলা ভাষাকে এমন করে কেউ পরিচয়ও করিয়ে দেননি।

ভারতের প্রখ্যাত লেখক ও গ্রন্থ সমালোচক সুরজিৎ দাশগুপ্ত জাতিসংঘে বাংলায় ভাষণ দেওয়ার দিনটিকে বঙ্গবন্ধুর জীবনের সুন্দরতম ও সর্বশ্রেষ্ঠ দিন হিসেবে অভিহিত করেছেন। সৈয়দ বদরুল আহসানের ‘শেখ মুজিবুর রহমান : ফ্রম রেবেল টু ফাউন্ডিং ফাদার’ গ্রন্থের ওপর আলোচনা করতে গিয়ে সুরজিৎ দাশগুপ্ত বলেন, জাতিসংঘের দরবারে ভারতীয় ভাষাগুলোর মধ্যে শুধু বাংলাই সারণি-স্বীকৃত ভাষা। স্বাধীন বাঙালি জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে বাংলা ভাষার এই গৌরব প্রতিষ্ঠা করেন।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বঙ্গবন্ধুর সফরসঙ্গী হিসেবে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ২৯তম ওই অধিবেশনে যোগ দিয়েছিলেন। তোফায়েল আহমেদ বলেন, বঙ্গবন্ধুকে প্রথমে অনুরোধ করা হয়েছিল, ইংরেজিতে বক্তৃতা করার জন্য। কিন্তু প্রিয় মাতৃভাষা বাংলার প্রতি সুগভীর দরদ ও মমত্ববোধ থেকে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন তিনি মাতৃভাষা বাংলায় বক্তৃতা করতে চান। সিদ্ধান্তটি তিনি আগেই নিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর বাংলা বক্তৃতার ইংরেজি ভাষান্তর করার গুরুদায়িত্বটি অর্পিত হয়েছিল লন্ডনে বাংলাদেশের তৎকালীন ডেপুটি হাইকমিশনার ফারুক চৌধুরীর ওপর।

তিনি বলেন, মাতৃভাষা বাংলায় ভাষণ দেওয়ার বঙ্গবন্ধুর এই সিদ্ধান্তটি ছিল তার সমগ্র জীবনের স্বাভাবিক এবং যৌক্তিক পরিণতি। সেদিন বক্তৃতারত বঙ্গবন্ধুর দিকে তাকিয়ে কেবলই মনে হয়েছে, তিনি যেন বহু যুগ ধরে এমন একটি দিনের জন্য অপেক্ষায় থেকে নিজেকে প্রস্তুত করেছিলেন। মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ।

ঐতিহাসিক এ দিনটি উদযাপনে দেশ ও বিদেশে নানা কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। দিনটি স্মরণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদ্‌জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির উদ্যোগে ই-পোস্টার প্রকাশ করা হয়েছে। বিশেষ ডিজাইনের এ পোস্টারের শিরোনাম করা হয়েছে, ‘২৫ সেপ্টেম্বর ১৯৭৪ জাতিসংঘের ২৯তম সাধারণ অধিবেশনে প্রথম বাংলায় ভাষণ দেওয়ার এই অনন্য দিনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করি গভীর শ্রদ্ধায়’। ই-পোস্টারটি স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের আওতাধীন এলাকায় তাদের ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত ইলেকট্রনিক/ডিজিটাল/এলইডি স্ট্ক্রিনে প্রদর্শন করা হবে। এছাড়া ইলেকট্রনিক, অনলাইন ও সোশ্যাল মিডিয়ায় এটি ব্যাপকভাবে প্রচারের জন্য জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনসহ বিভিন্ন সংস্থা ও সংগঠনের উদ্যোগে দিনটি উদযাপনে বিশেষ কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধুর প্রথম বাংলায় ভাষণ প্রদান স্মরণে ই-পোস্টার প্রকাশ করেছে। এ বিষয়ে জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রকাশিত ই-পোস্টার স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোতে তাদের ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত ইলেকট্রনিক/ ডিজিটাল/ এলইডি স্ট্ক্রিনে প্রদর্শন করা হবে। এ ছাড়া ইলেকট্রনিক, অনলাইন ও সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্টারটি ব্যাপকভাবে প্রচারের জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।

প্রসঙ্গত, জাতির পিতার দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাও জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের বিভিন্ন অধিবেশনে মাতৃভাষা বাংলায় ভাষণ দিয়ে আসছেন। এবারও জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৫তম অধিবেশনে ভার্চুয়াল অংশগ্রহণে বাংলায় ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী।

বৈশাখী নিউজজেপা