ট্রাম্পের বক্তব্যে ক্ষুব্ধ রিপাবলিকান সিনেটররা, সাবেক জেনারেলরাও বাইডেনের পক্ষে

ডেমক্র্যাট প্রার্থী যো বাইডেন জয়ী হলে রিপাবলিকান পার্টির সকল সিনেটরই ২০ জানুয়ারিতে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরে পূর্ণ সমর্থন দেবেন। এমনকি, বাইডেনের শপথ অনুষ্ঠানেও যোগদান করবেন।

নির্বাচনে পরাজিত হলে ট্রাম্প শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন না বলে আগের দিনের মন্তব্য খন্ডন করে বৃহস্পতিবার ইউএস সিনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল রিপাবলিকান-নেতা মীচ ম্যাককনেল এক টুইটে বলেন, ‘৩ নভেম্বরের নির্বাচনে বিজয়ী অবশ্যই শপথ নেবেন ২০ জানুয়ারি। ১৭৯২ সাল থেকে চার বছর অন্তর অনুুষ্ঠিত নির্বাচনে বিজয়ী ব্যক্তি হোয়াইট হাউজে অধিষ্ঠিত হবার জন্যে শপথ গ্রহণ করার এ রেওয়াজ চলে আসছে। সে অনুযায়ী সামনের জানুয়ারিতেও তা অনুষ্ঠানে আমরা বদ্ধপরিকর।’

ট্রাম্পের মন্তব্য/মতামতের কোন সমালোচনা না করে রিপাবলিকান সিনেট লিডারের এ বক্তব্যে গণতন্ত্রে বিশ্বাসী প্রতিটি আমেরিকানের মধ্যে স্বস্তি এসেছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বক্তব্যে আমেরিকার গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে প্রশ্নের মুখে ঠেলে দেয়া হয়েছে বলেও মন্তব্য করছেন অনেক রিপাবলিকান। ক্যাপিটল হিলে জড়ো হওয়া সাংবাদিকরা ট্রাম্পের বিতর্কিত ঐ মন্তব্য নিয়ে মীচ ম্যাককনেলের বিস্তারিত মতামত জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আপনারা কী আমার টুইট দেখেননি? টুইটে যা বলেছি সেটিই যথার্থ। সেখানেই পুরো চিত্র রয়েছে।’

রিপাবলিকান পার্টির অপর সিনেটর বেন স্যাসে বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট পাগলের মত কথা বলেছেন। আমরা সব সময়েই শান্তিপূর্ণ উপায়ে ক্ষমতা হস্তান্তর করে আসছি। তা কোনভাবেই পরিবর্তন করা যাবে না।’

আরেক সিনেটর কেভিন ক্র্যামার বলেন, ‘বিতর্কিত বক্তব্য প্রদানে অভ্যস্ত ট্রাম্পের সর্বশেষ এ উক্তির যোন যুক্তি পাওয়া যাবে না। আমেরিকানরা এমন কথায় কান দেবে না।’

ট্রাম্পের উদ্ভট কথাবার্তা নিয়ে ডেমক্র্যাটরাও উদ্বিগ্ন। এতদিন গোপনে দলীয় লোকজনের সাথে ট্রাম্প যা বলেছেন, সেটি এখন প্রকাশ্যে এসেছে বলে ডেমক্র্যাটরা পূর্ণ প্রস্তুতি নিচ্ছেন নির্বাচনের পরবর্তী পরিস্থিতি যথাযথভাবে মোকাবেলার জন্যে। ট্রাম্পের এহেন মনোভাবের পরিপ্রেক্ষিতে যদি সাংবিধানিক সংকট দেখা দেয় তবে তা কীভাবে প্রতিহত করা যাবে-তা নিয়ে দলীয় নীতি-নির্ধারকরা বৈঠকে মিলিত হচ্ছেন বলে জানা গেছে।

‘সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের একটিই পন্থা রয়েছে, আর তা হচ্ছে ভোটারের রায়কে সম্মান জানানো। এ অবস্থায়ও যদি শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ অনুষ্ঠান নিয়ে সন্দেহ পোষণ করা হয়, ফলাফল মানতে না চান, তাহলে আমাদেরকে সবদিকে সতর্ক থাকতে হবে। কোনভাবেই জনগণের রায় ছিনতাই হতে দেয়া যাবে না। তাহলে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হবে’-বলেছেন ডেমক্র্যাট কংগ্রেসম্যান জেমি বি রাস্কিন।

অপরদিকে, কানেকটিকাটের সিনেটর (ডেমক্র্যাট)ক্রিস মারফি বৃহস্পতিবার রিপাবলিকান পার্টির শীর্ষ কর্মকর্তাদের সাথে এ নিয়ে কথা বলেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের ঐতিহ্য সমুন্নত রাখতে সকলে একযোগে কাজের সংকল্প ব্যক্ত করেছেন সে সময়।

রিপাবলিকানরা কখনোই অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সাপোর্ট দেবেন না বলে তার কাছে উল্লেখ করেছেন। ম্যাসাচুসেটসের সিনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেন (ডেমক্র্যাট) বলেছেন, ‘স্বৈরাচারেরা সচরাচর ষড়যন্ত্রের কথা ঘোষণা করে না। কিন্তু ট্রাম্প আজীবন প্রেসিডেন্ট থাকতে চান। যুক্তরাষ্ট্রের রাজা হতে চান। কিন্তু আমাদের গণতন্ত্রে তো তেমন রেওয়াজ নেই। সবকিছু নির্ভর করে ডেমক্র্যাট, রিপাবলিকান আর স্বতন্ত্র পার্টির সিদ্ধান্তের ওপর। আমেরিকার জনসাধারণের মতামতের ওপর সবকিছু নির্ভর করছে, সেটিই আমাদের গণতন্ত্র।’

এদিকে যুক্তরাষ্ট্র সামরিক বাহিনীর সাবেক ৪৮৯ জেনারেল, এডমিরাল, সিনিয়র সামরিক অফিসার, রাষ্ট্রদূত, জাতীয় নিরাপত্তা সম্পর্কিত শীর্ষ ব্যক্তিরা প্রেসিডেন্ট প্রার্থী যো বাইডেনের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার এক যুক্ত বিবৃতিতে তারা উল্লেখ করেছেন, ‘বাইডেন হচ্ছেন নীতিবান, অভিজ্ঞ, পরীক্ষিত এবং দায়িত্বশীল নেতা যিনি আমেরিকাকে নিরাপদ রাখতে সচেষ্ট’।

এক খোলা চিঠিতে তারা বলেছেন, বাইডেনের প্রশংসা করার মত চারিত্রিক গুণাবলী, প্রাজ্ঞতা রয়েছে। বিশ্বকে কল্যাণ আর সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেয়ার মত যোগ্যতা রয়েছে।

বাইডেনকে সমর্থনকারিগণের মধ্যে রয়েছেন ২২ জন অবসরপ্রাপ্ত ফোর-স্টার জেনারেল। জর্জ ডব্লিউ বুশ এবং সিনিয়র বুশের আমলে উচ্চপদে দায়িত্ব পালনকারিরাও বাইডেনের পক্ষে মাঠে নামলেন।

বৈশাখী নিউজফারজানা