ডিজিটাল স্বাস্থ্য সেবা নিয়ে আত্নপ্রকাশ করলো ‘শ্যামলী বক্ষব্যাধি’

সময়: 5:55 pm - September 30, 2020 | | পঠিত হয়েছে: 7 বার

ই-হেলথ চালুর মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলাদেশের রুপকার প্রধানমন্ত্রীর ২০২১ সালের ডিজিটাল স্বাস্থ্য সেবা বাস্তবায়নে এক ধাপ এগিয়ে গেলো। স্বাস্থ্য ব্যাবস্থা ডিজিটাল হবার কারনে রোগী দ্রুততম সময়ে সেবা পান এবং চিকিৎসকরাও নির্ভুলভাবে রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা সেবা দিতে পারবেন।

তদুপরি দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের রোগীরা ই-স্বাস্থ্য সেবার কার্যকরী অংশ টেলিমিডিসিন এর মাধ্যমে উপকৃত হতে পারবেন। রোগীদের যাবতীয় তথ্যাদি কেন্দ্রীয় ভাবে ডাটাবেইজ সার্ভারে সংরক্ষিত থাকবে। সঠিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা সংবলিত সফটওয়্যার ও কার্যকরী স্থাপনার মাধ্যমে রোগীদের যাবতীয় তথ্যাদির সদব্যবহার করে সুস্থ ও স্বাস্থ্যবান জাতি গঠনে ই-হেলথ প্রধানমন্ত্রীর ২০২১ সালের ডিজিটাল স্বাস্থ্য সেবা বাস্তবায়নে অপরিসীম ভূমিকা রাখবে।

কেন্দ্রীয় ভাবে মনিটরিং এবং ইভালুয়াশন সেন্টার খুলে সারাদেশের টিবি ক্লিনিকগুলোতে সেবা আউটলেট স্থাপন করে তাদেরকে একটি ডিজিটাল নেটওয়ার্ক এর আওতায় নিয়ে আসলে খুব সহজেই দেশের একটি বড় অংশের নাগরিককে এই সেবার আওতায় আনা সম্ভব।

জাতির জনকের কন্যা প্রধানমন্ত্রীর ৭৪তম জন্মদিনে অত্র হাসপাতালের পক্ষ থেকে উপহার। পূর্বতন টিবি ক্লিনিকটিকে ২০১৬ সালে সরকার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট একটি বিশেষায়িত টিবি ও বক্ষব্যাধি হাসপাতাল হিসেবে প্রতিষ্ঠা করলেও মূলত ২০১৮ সাল হতে হাসপাতালটিতে পরিবর্তনের লছোঁয়া লাগে । ২০১৮ সালে হাসপাতালটিতে পদায়নকৃত প্রকল্প পরিচালক ডা. মোঃ আবু রায়হান-এর পরিকল্পনায় ও অক্লান্ত পরিশ্রমে হাসপাতালটিতে আমূল পরিবর্তন এসেছে বলে জানা যায়।

হাসপাতালটি পরিদর্শন করে দেখা যায়, হাসপাতালের বহিঃ বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের অনলাইনে টিকিট প্রদান করা হয়। এছাড়াও বহিঃবিভাগে চিকিৎসা নিতে আগত রোগী ও তাদের স্বজনদের জন্য আরামদায়ক ভাবে বসার জন্য সুন্দর ব্যাবস্থা করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। গুরুত্বর অসুস্থ ও জরুরী রোগীদের জন্য ওয়ান স্টপ ইমার্জেন্সি সার্ভিসের মাধ্যমে জরুরী বিভাগে চিকিৎসার ব্যাবস্থা আছে এ হাসপাতালটিতে। বহিঃবিভাগের পাশাপাশি এ হাসপাতালের জরুরী বিভাগেও সার্বক্ষণিক ভাবে ইসিজি, স্পাইরোমেট্রি সহ বেশ কিছু টেস্ট করাতে পারে রোগীরা।

হাসপাতালটিতে বহিঃবিভাগে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কাটার পাশাপাশি অনলাইন এপয়েনমেন্ট এর ব্যাবস্থা করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। জরুরী বিভাগ হতে রোগীর ভর্তি ও ডিসচার্জ কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে ডিজিটালাইজড করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

বহিঃবিভাগ ও অন্তঃ বিভাগে রোগীর উপসর্গ, চিকিৎসা ও ব্যাবস্থাপত্র অনলাইনে সংরক্ষণ করা হয় বলে জানা যায়। এর ফলে রোগী পরবর্তীতে এই হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করতে আসলে তার চিকিৎসা ইতিহাস চিকিৎসক সহজে জানতে পারেন, যা রোগীর চিকিৎসায় সহায়ক হয়।

জানা যায় হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ মোঃ আবু রায়হানের প্রচেষ্টায় হাসপাতালটিতে আইসিইউ, এইচডিইউ ও অপারেশন থিয়েটার প্রতিষ্ঠিত হয়। তবে চিকিৎসক স্বল্পতার কারনে এই বিভাগ গুলিতে চিকিৎসা প্রদানে বেগ পেতে হয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে।

তবে করোনা রোগীর চিকিৎসায় শ্যামলীর এই হাসপাতালটি সাফল্য অর্জন করেছে অনেক। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী নন-কোভিড রোগীর পাশাপাশি কোভিড রোগীর চিকিৎসা প্রদানের জন্য জুন মাস হতে ৪০ শয্যার কোভিড ইউনিট চালু করে এ হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ।

হাসপাতালের পরিচালক বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ ডা. মোঃ আবু রায়হানের নেতৃত্বে চিকিৎসক ও নার্সদের অক্লান্ত পরিশ্রমে প্রায় সকল কোভিড রোগীই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। হাসপাতালটির কোভিড ইমার্জেন্সি, কোভিড কেবিন ও কোভিড আইসিইউ এই তিনটি বিভাগের একটি সুন্দর সমন্বয়ের মাধ্যমে কোভিড ইউনিটটি পরিচালনা করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের সেবায় হাইফ্লো অক্সিজেন ব্যাবহার করে চিকিৎসায় সফলতা পেয়েছেন এ হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সরা।

এছাড়াও হাসপাতালটিতে রোগীদের জন্য রয়েছে টেলিমেডিসিন ব্যাবস্থা। দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে মোবাইলে ভিডিও কলের মাধ্যমে বক্ষব্যাধি চিকিৎসকের টেলিমেডিসিন সেবা গ্রহণ করতে পারবে রোগীরা।

হাসপাতালটির ল্যাবরেটরিতে জিন এক্সপার্ট মেশিনে স্বল্প সময়ে টিবির জীবাণু পরীক্ষা করা যায়। টিবির জীবাণু পরীক্ষা করা ছাড়াও এই মেশিনটিতে মাত্র ৪৫ মিনিটে কোভিড -১৯ টেস্ট করে ফলাফল প্রদান করে এই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

সম্প্রতি এই হাসপাতালে করোনা টেস্টের এই পদ্ধতি পরিদর্শন করে প্রশংসা করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। বিভিন্ন ধরনের ল্যাব টেস্টের পাশাপাশি এম.টি সহ রেডিওলোজী বিভাগে এক্সরে, আল্ট্রাসনোগ্রাম, স্পাইরোমেট্রি ইত্যাদি পরীক্ষা নিরিক্ষার ব্যাবস্থা চালু আছে এই হাসপাতালটিতে।

হাসপাতালটিতে চিকিৎসা নিতে আসা বেশ কিছু রোগী ও তাদের স্বজনদের সাথে কথা বলে এই প্রতিবেদক। হাসপাতালটির মনোরম পরিবেশ ও চিকিৎসা ব্যাবস্থায় রোগী ও তাদের স্বজনরা সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন।

টিবি রোগ থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা একজন রোগী এই প্রতিবেদককে জানান, ২০১৯ সালে শ্যামলীর টিবি হাসপাতালে তিনি দীর্ঘদিন ভর্তি থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করে এখন সম্পূর্ণ সুস্থ। হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সদের সেবায় তিনি অত্যন্ত সন্তুষ্ট।

বিশেষত হাসপাতাল থেকে ছুটি হওয়ার পর মোটিভেশন ও স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের নার্সের সেবায় তিনি মুগ্ধ। টিবি থেকে সুস্থ হয়ে ওঠার পরে কিভাবে ওষুধ খেতে হবে, কি ধরনের খাবার খেতে হবে, কিভাবে সুস্থ জীবন যাপন করা যাবে এবং পুনরায় অসুস্থ হলে কোথায় গেলে কিভাবে সেবা পাওয়া যাবে তা বিস্তারিত ভাবে অত্যন্ত সুন্দর করে ওই রোগীকে বুঝিয়ে দেন মোটিভেশন বিভাগের ওই নার্স।

শ্যামলীর ২৫০ শয্যার এই বক্ষব্যাধী হাসপাতালটিতে রয়েছে একটি বিশেষায়িত এজমা সেন্টার। এজমা রোগীর চিকিৎসায় প্রশিক্ষিত চিকিৎসক ও নার্স এ বিভাগে কর্মরত আছেন। প্রতিদিন প্রায় শতাধিক এজমা রোগী এই এজমা সেন্টার থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করেন।

ডিজিটালাইজেশন এর পাশাপাশি এই হাসপাতালটিতে রয়েছে সবুজের সমারোহ। প্রবেশ পথেই রয়েছে মনোমুগ্ধকর ফুলে ফুলে শোভিত বাগান।

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর