নারীর প্রতি সহিংসতা: মানব মূল্যবোধের চরম অবক্ষয়

সময়: 3:55 pm - September 30, 2020 | | পঠিত হয়েছে: 5 বার

মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। কিন্তু সেটা তার শারীরিক আকার, গঠনের দিক থেকে নয়। সেটা একমাত্র তার উপযুক্ত ইতিবাচক আচরনের কারনে। ইতিবাচক আচরন তখনি একজন মানুষ শিখতে পারে যখন তার মধ্যে মূল্যবোধ, শৃঙ্খলাবোধ, শ্রদ্ধার মানসিকতা, অন্য একজন মানুষকে দেখলে সম্মান দাওয়ার ইচ্ছা জাগ্রত হবে। আহা সম্মান কথাটা বলতেও এখন ঘৃণা হয়। কিছু মানুষরুপী হিংস্র পশুরা আজকের দিনে নারীকে শুধু ব্যবহারের পণ্য ছাড়া, ভোগ বিলাসের বস্তু, শারীরিক চাহিদা মিটানোর হাতিয়ার ছাড়া আর কিছুই ভাবেনা। এই খবরগুলো শুনলে আর মাুনষকে সৃষ্টির সেরা জীব বলতে ও লজ্জা হয় নিজের।

ধর্ম ও সমাজ স্বীকৃত নিয়ম নারী পুরুষ সমান অধিকার। তবে এখন নারীর সেই বেচে থাকার জন্য অপরিহার্য মৌলিক অধিকার গেলো কোথায়? নারীকে ঘরবন্দি করার পরও কি নারীরা আজ নিরাপদ? নাহ নিরাপদ নাহ। একজন নারী প্রতিনিয়তই সহিংসতার শিকার হচ্ছে। হোক সেটা নিজেরই ঘরে,অথবা নিজের ঘরের বাইরে। নারী তার ঘরে আপনজনদের দ্বারাই নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। শিশু হোক বা কিশোরী কেউই ওই হায়নার নির্মম অত্যাচারের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না। একজন নারী আজ বিবাহিত হওয়ার পরও, তার নিজের স্বামী সাথে থাকার পরও জীবনের নিরাপত্তাটুকু পর্যন্ত পায়না। এ কেমন সমাজের মধ্যে আমরা বাস করি? ভাই, বন্ধু, মামা, চাচা,আর পাশের বাড়ির প্রতিবেশির কথা তো না হয় বাদ ই দিলাম। আচ্ছা এই হলো তাহলে নারীর ঘরবন্দি অবস্থায় জীবনের নিরাপওা ব্যবস্থা, বাহ অসাধারন নিরাপওা। এইবার যদি বাহিরের জগতে নারীকে নিয়ে যাওয়া যায়, তাহলে কতোটুকু নিরাপওা নারীর জন্য রয়েছে। নারীর একা কি দরকার এতো ভোরবেলা কাজে যাওয়ার। কি পোশাক পড়লে এইটা তুমি সবাই তো তাকিয়ে থাকবেই, তুমি কেন রাস্তার বকাটেদের সামনে দিয়েই আসলে, এমন তো হবেই দেখেছিলাম কতো ছেলের সাথে ওঠাবসা ছিলো এই মেয়ের,ওরে বাবা রে, এই ধরনের হাজার হাজার কথা আমরা হরহামেশাই শুনি আমাদের খুব আদরের বাইরের জগতের মানুষের কাছ থেকেই। কি সুন্দর নিরাপওা ব্যবস্থা তৈরি করাই থাকে নারীর জন্য, ভাবতেই অবাক লাগে।

কথায় বলেনা, “যতো দোষ নন্দ ঘোষ।” পাড়ার লোকে তখন নারীর আওয়াজ শুনতে পেলে দোষটা কার নারীর, কারন নারীর তো চিত্কার করা বারন। মুখবুজে সহ্যকরাই নারীর ধরন।
কিন্তুু পাষণ্ড লোকেরা এইটা জানতে চেষ্টা ও করেনা যে কেন, কোন পর্যায়ে গেলে একজন নারীও পুরুষের মতো চেচায়। আরে নারী তো ঘরের লক্ষী। সে কেন চাইবে অযথা তার সংসার,তার সম্মান, তার মর্যাদাকে ক্ষয়িষ্ণু করতে। নারী তো চাই সবকিছুকে একসাথে জুড়ে রাখতে। বোকা সমাজ এইটা বুজেনা। শুধু অপরাধ টা ঘটে যাওয়ার পরে তদন্তের নামে একটা আইনগত নিয়মের আওতায় নারীকে এনে সঠিক বিচারের কথা দিয়ে নারীর মুখে সারা জীবনের জন্য আঠা লাগিয়ে দেওয়া হয়।

নারীর অধিকার নারীকেই আদায় করতে হবে। তবে অবশ্যই সমাজ, পরিবার আর রাষ্ট্রকে ও এগিয়ে এসে নারীকে সাহায্য করতে হবে। কেমন করে তার কিছু উদাহরন বলছিঃ
১। মেয়েকে অবশ্যই শিক্ষার সমান সুযোগ দিতে হবে।
২। মেয়ে সন্তান, তাই তাকে তাড়াতাড়ি বিয়ে দিতে হবে কোন ভাবেই এই চিন্তা মাথায় আনা যাবেনা অভিভাবকদের।
৩। চাকরি করার জন্য মেয়ে সন্তানকে উত্সাহ দিতে হবে।
৪। শারীরিক নির্যাতন বন্দের ব্যাপারে সচেতন হতে হবে সবাইকে।
৫। সহিংসতার প্রথম থেকেই সবাই মিলে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করতে হবে।
৬। নারীর প্রতি সকল ক্ষেএেই ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির বহিঃপ্রকাশ করতে হবে।
৭। ধর্মের দোহাই দিয়ে নারীকে দুর্বল ভাবা যাবেনা।
৮। নারীকে সুন্দর ভাবে চলাফেরার স্বাধীনতা দিতে হবে।
৯। নারীকে কেন ভাবেই চাহিদা পূরনের হাতিয়ার ভাবা যাবেনা।
১০। সর্বোপরি সুস্থ মস্তিকে নারী কে নারী না ভেবে মায়ের জাতি ভাবা উচিত।

যেদিন আমাদের সমাজ আমাদের শিশু, কিশোরী, নারীকে নারী না ভেবে মানুষ হিসাবে ভাববে সেদিন আমাদের সমাজে নারীর প্রতি এই সহিংসতাও বন্ধ হবে। তাই আসুন, আমরা নারীকে লিঙ্গান্তর না করে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির ও মূল্যবোধের স্থানান্তর করি। সুন্দর রাষ্ট্র গড়ে তুলি।

সানজিদা মাহমুদ মিষ্টি
আইআর,প্রথম বর্ষ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর