হারিয়ে যাচ্ছে মৌটুসির মতো ছোট পাখি

চঞ্চল ছোট পাখি মৌটুসি। ফুলে ফুলে মধু খেয়ে বেড়ায় বলে মধুচোষা বা মধুচুষকি নামেও পরিচিত। রঙ-রূপে মনোহর। সবজি ক্ষেতে বাড়ির আঙিনায় কিংবা আশপাশের ঝোপে-ঝাড়ে, শিম লতায় চঞ্চল বিচরণ এদের। ১ দশমিক ৬ সেন্টিমিটার কাস্তের মতো বাঁকানো ঠোট। লম্বায় মাত্র ১০ সেন্টিমিটার এ পাখিটি।

রোদের আলোয় পুরুষ পাখিটির গলার গাঢ় বেগুনি ব্যান্ড, পাখার গোড়ার অংশ ও মাথার চাঁদি থেকে চোখ ধাধানো চিকচিকে দ্যুতি ছড়ায়। ব্যান্ডের নিচে বুক কমলা-হলুদ। বুকের কমলা হলুদ রঙ পেছনের দিকে সাদায় মিলেছে। পায়ু পথের পালক সাদা। কালো পা। ঝোপ-ঝাড় কমে যাওয়ায় বাসস্থান, প্রজননে বাসা তৈরি খাদ্য সংকট ছাড়াও আবাদি জমিতে কিটনাশকের ব্যবহারে কমছে দুর্লভ প্রজাতির এই ছোট পাখির সংখ্যা।

বেগুনি-গলা মৌটুসি, সিঁদুরে-লাল মৌটুসি, মাকড়সাভূক মৌটুসি, নীল টুনি, সোনা চোখা, সিঁদুরে-হলুদ টুনি, দুর্গাটুনি, সরষে টুনি, চুনিমুখোসহ বিভিন্ন প্রজাতির মৌটুসি পাখির মধ্যে দেখতে সবচেয়ে আকর্ষনীয় চঞ্চল বেগুনি-গলা মৌটুসি। কলার মোচা, শিম, নারকেল, রঙ্গনসহ বিভিন্ন ফুলের মধু খেতেই এরা বেশি পছন্দ করে।

ফুলের মধু প্রধান খাদ্য। তবে কীট পতঙ্গও খেয়ে থাকে। সাধারণত মার্চ থেকে জুন এদের প্রজনন সময়। তবে কখনো কখনো জুলাই আগস্টেও গড়ায় এ সময়। স্ত্রী পাখি ঘাস, পাতা, আঁশ, মাকড়সার জাল দিয়ে ছোট গাছে বাসা বানায়। ডিম দেয় ২-৩ টি।

বাসা তৈরিতে পুরুষ পাখিটি স্ত্রী পাখিটিকে সাহায্য করে। ডিমে তা না দিলেও পুরুষ পাখি বাচ্চাদের খাবার জোগাতে অংশ নেয়। মেয়ে পাখি দেখতে সাদামাটা। চিপ-চিপ স্বরে ডাকে। অনেক আনন্দে পুরুষ পাখি সুরেলা কন্ঠে টুইট-টুইট শব্দে গান ধরে। চঞ্চল এই পাখিটির উড়ার গতিও শৈল্পিক। বাক নিয়ে তীরের গতির মতো উড়ে।

পাখি বিশেষজ্ঞ পটুয়াখালী সরকারি কলেজের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অবসর প্রাপ্ত সহকারী অধ্যাপক পিযুষ কান্তি হরি বলেন, ‘অত্যন্ত চঞ্চল, চতুর ও বুদ্ধিমান ছোট পাখি মৌটুসি। ঝোপঝাড়ে ছোট গাছে ঝুলন্ত বাসা বানিয়ে ২-৩টি ডিম পারে। স্ত্রী পাখিটি ১৬-১৮ দিন একাই তা দিয়ে বাচ্চা ফোটালেও বাচ্চাদের খাবার যোগাতে পুরুষ পাখিটিও অংশ নেয়। ২৭-২৮ দিনে আকাশে ডানা মেলে বাচ্চারা। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বৈরি প্রভাব, উপকূলীয় ম্যানগ্রোভ জাতীয় গাছপালা, নারকেল-সুপারির বন, বাঁশ বাগান, হোগলা পাতার বন, জোপ-জঙ্গল কমে যাওয়াসহ কিটনাশকের ব্যবহারের কারণে মৌটুসিরমতো ছোট পাখিগুলো কমে যাচ্ছে।’

বৈশাখী নিউজ/ বিসি