আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কার’ জয়ী সাদাত এখন বাংলাদেশে

আপডেট: November 16, 2020 |

‘আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কার’ জয়ী সাদাত রহমান দেশে এসেছে। নেদারল্যান্ডস থেকে আজ সোমবার (১৬ নভেম্বর) সকাল ৯টায় ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায় সাদাত।

বিষয়টি নিশ্চিত করে ‘সাইবার টিনস’ এর হেড অব ক্যাম্পেইন শফিকুল ইসলাম বলেন, এ সময় সাইবার টিনস, নড়াইল ভলান্টিয়ার্সের সদস্যরা, সাদাতের বাবা ও আত্মীয়-স্বজন বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন।

গত ১৩ নভেম্বর নেদারল্যান্ডসের হেগে সাদাত রহমানকে নোবেলজয়ী মালালা ইউসুফজাই ভারচুয়ালভাবে ‘আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কার’ তুলে দেন। পুরস্কারের সঙ্গে এক লাখ ইউরো পেয়েছে সাদাত।

‘সাইবার অপরাধ’ থেকে শিশুদের সুরক্ষা নিয়ে কাজ করে বিশ্বমঞ্চের তালিকাতে যুক্ত হয়েছে ১৭ বছর বয়সী কিশোর সাদাত রহমান। বন্ধুদের সহযোগিতায় ‘সাইবার টিনস’ মোবাইল অ্যাপ তৈরি করে ‘সাইবার অপরাধ’ থেকে শিশুদের সুরক্ষায় ২০১৯ সালের ৯ অক্টোবর থেকে কাজ করে যাচ্ছে সাদাত।

পুরস্কার লাভের পর সাদাত রহমান তার প্রতিক্রিয়া বলেছে, এ পুরস্কার বাংলাদেশি হিসেবে তাকে গর্বিত করেছে। তার টিমের সকল সদস্য, জেলা ও পুলিশ প্রশাসন এ কাজে তাকে সব সময় সহযোগিতা করেছে।

‘সাইবার টিনস’ এর হেড অব ক্যাম্পেইন শফিকুল ইসলাম বলেন, সাইবার ক্রাইমের শিকার হয়ে ১৫ বছর বয়সী পিরোজপুরের রুকাইয়া রূপা নামে এক স্কুলছাত্রী আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। বিষয়টি তাদের মনে নাড়া নেয়। সেই থেকে ‘সাইবার টিনস’ অ্যাপ তৈরির উদ্যোগ নেয় সাদাত রহমানসহ তার বন্ধুরা। বর্তমানে এই টিমের সদস্য সংখ্যা ১০। এই অ্যাপের মাধ্যমে কিশোর-কিশোরীরা জানতে পারে- কীভাবে ইন্টারনেট দুনিয়ায় তারা নিরাপদ থাকবে এবং এ সংক্রান্ত কোনো সমস্যা হলে তার সমাধান পাবে। সাদাতের এই অ্যাপ দ্রুত জনপ্রিয়তা পাওয়ায় ইতোমধ্যে এক হাজারের বেশি কিশোর-কিশোরী এটি ব্যবহার করছে। এর সাহায্যে আটজন সাইবার অপরাধী আটক হয়েছে। ২৫০ জনের বেশি কিশোরী এই অ্যাপসের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান পেয়েছে।

নড়াইলের আব্দুল হাই সিটি কলেজের অধ্যক্ষ মনিরুজ্জামান মল্লিক বলেন, সাদাত এই কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক দ্বিতীয়বর্ষের মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী। তার এই পুরস্কার প্রাপ্তিতে কলেজের সবােই আনন্দিত।

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, ‘সাদাতের চিন্তা-ভাবনাগুলো আমরা আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বাস্তবায়ন করেছি। এর মাধ্যমে আমরা বেশ কিছু অপরাধীকে ধরেছি, মামলা করেছি। তার কাজের অংশীদার আমরাও। পুলিশ সব সময় সহযোগিতা করে আসছে।’

জেলা প্রশাসক আনঞ্জুমান আরা বলেন, ‘সাইবার টিনস’ অ্যাপস উন্নয়নের ক্ষেত্রে শুরু থেকে জেলা প্রশাসন তাকে সহযোগিতা করে যাচ্ছে।

পারিবারিক ও বন্ধুদের সূত্রে জানা যায়, সাদাত রহমানের বাড়ি মাগুরা জেলা সদরের আলোকদিয়া গ্রামে। তার বাবা শাখাওয়াত হোসেন, মা মলিনা বেগম। বাবা এক সময় নড়াইল জেলা ডাকঘরের প্রধান কর্মকর্তা ছিলেন। বর্তমানে কুষ্টিয়া ডাকঘরে কর্মরত। সাদাত রহমান নবম শ্রেণি থেকে নড়াইলে পড়ালেখা করছে। বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান সাদাত রহমান।

আয়োজক সূত্রে জানা যায়, ২০০৫ সালে রোমে অনুষ্ঠিত নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ীদের শীর্ষ সম্মেলনে ‘আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কার’ চালু করে ‘কিডস-রাইটস’ নামের এক সংগঠন। শিশুদের অধিকার উন্নয়ন ও নিরাপত্তায় অসাধারণ অবদানের জন্য প্রতি বছর এই পুরস্কার দেওয়া হয়। ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সীরা এই পুরস্কারের জন্য আবেদন করতে পারে।

আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কারের জন্য সাদাতের সঙ্গে চূড়ান্ত তালিকায় স্থান পাওয়া অন্য দুই প্রতিযোগী ছিল- মেক্সিকোর ইভান্না ওরতেজা সেরেট এবং আয়ারল্যান্ডের সিয়েনা ক্যাস্টেলন। এই পুরস্কারের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক নোবেল শান্তি পুরস্কারপ্রাপ্ত আর্চ বিশপ ডেসমন্ড টুটু গত ২৯ অক্টোবর ওই তিন প্রতিযোগীর নাম ঘোষণা করেন। কিডস রাইটসের বিশেষজ্ঞ কমিটি ৪২টি দেশের ১৪২ প্রতিযোগীর মধ্য থেকে শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত করে সাদাত রহমানের নাম।

বৈশাখী নিউজ/ বিসি

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর