নিষেধাজ্ঞা থেকে বাঁচতে ভারতের ‘কাবুল-তাস’

আপডেট: October 8, 2021 |

২০১৮ সালের অক্টোবরে রাশিয়ার সঙ্গে ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিময়ে এস-৪০০ মিসাইল সিস্টেমের পাঁচটি ইউনিট কেনার চুক্তি করেছিল ভারত। ওই চুক্তি অনুযায়ী চলতি বছরেই ভারতের হাতে আসার কথা এই ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার প্রথম চালান।

রাশিয়ার কাছ থেকে ভারতের এই এস-৪০০ মিসাইল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেনার বিষয়টিকে মোটেই ভালো চোখে দেখছে না যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের দিক থেকে বলা হচ্ছে, ইরান এবং রাশিয়া থেকে জ্বালানি কিংবা যুদ্ধাস্ত্র কিনলে যুক্তরাষ্ট্রের নিষিদ্ধ তালিকায় চলে যেতে হবে ভারতকে। অন্যদিকে ভারত বলছে, দেশের স্বার্থে যা সিদ্ধান্ত নিতে হয় তাই নেবে ভারত।

ভারতও শুরু থেকেই নিজেদের অবস্থানে অনড় রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা নিয়ে দায়বদ্ধ মোদি সরকার। কিন্তু দেশের সুরক্ষার স্বার্থে কোনো চাপের কাছে মাথা নত করতে রাজি নয় প্রশাসন। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রেকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে এই ব্যাপারে মার্কিন চাপ পাত্তা দিতে রাজি নয় ভারত।

এরইমধ্যে আফগানিস্তানে ক্ষমতার পালাবদল হয়েছে। বিশ্বরাজনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ এই ঘটনার সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করছে ভারত। যুক্তরাষ্ট্রের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী উইন্ডি শেরম্যানের সঙ্গে বৈঠকে সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞা এড়াতে তাই হাতে থাকা ‘কাবুল-তাস’ খেলল মোদির ভারত।

যুক্তরাষ্ট্রকে ভারত আসলে বোঝানোর চেষ্টা করেছে আফগানিস্তানে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে গুরুত্ব বেড়েছে ইরান ও রাশিয়ার। ভারত বলতে চাচ্ছে এ দেশ দুটিকে কাজে লাগানোর এখনই সময়।

শেরম্যানের সঙ্গে বৈঠকে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা তাকে বলেছেন, ইরান ও রাশিয়া আফগানিস্তান ইস্যুতে আন্তর্জাতিক মানচিত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভৌগোলিক এবং রাজনৈতিক, দু’দিক থেকেই তালেবান সরকারের সঙ্গে দর কষাকষির ক্ষেত্রে তেহরান এবং মস্কোর ভূমিকা ভবিষ্যতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। সন্ত্রাস-প্রসঙ্গে যখন আফগানিস্তানের আরেক পড়শি দেশ পাকিস্তানকে বিশ্বাস করা যায় না, তখন এই দু’টি দেশ তালেবান নৈরাজ্য সামলানোর প্রশ্নে কাজে আসতে পারে।

এর পাশাপাশি ইরান ও রাশিয়ার সঙ্গে যে ভারতের ঘনিষ্ঠ একটা সম্পর্ক আছে, ফলে এভাবেও দেশ দুটিকে কাজে লাগানো সম্ভব। সে কথাও তুলে ধরা হয়েছে। সব মিলিয়ে ভারত যুক্তরাষ্ট্রেকে বোঝানোর চেষ্টা করেছে, যুক্তরাষ্ট্রের নিজেদের স্বার্থেই তাদের উচিত ভারতের সঙ্গে রাশিয়া এবং ইরানের সম্পর্কে নাক না গলানো।

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে রাশিয়ার কাছ থেকে পাঁচটি এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেনার চুক্তি করে ভারত। ২০২৫ সালের মধ্যে এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা ভারতের হাতে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। ৫০০ কোটি ডলার মূল্যের এ চুক্তির মধ্যে নয়াদিল্লি ইতোমধ্যেই মস্কোকে ৮০ কোটি ডলার পরিশোধ করেছে।

এর আগে এস-৪০ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা কেনায় তুরস্কের বিরুদ্ধেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল ওয়াশিংটন। আর তাই তুরস্কের মতো ভারতের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ঝুঁকি রয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

ইউক্রেনের কাছ থেকে ক্রিমিয়া দখল এবং ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হস্তক্ষেপের অভিযোগে রাশিয়ার ওপর বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা এবং গোয়েন্দা বিভাগও ওই নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়েছে। ফলে নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা রুশ অস্ত্র কিনলে সংশ্লিষ্ট দেশকেও মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়তে হতে পারে।

বৈশাখী নিউজ/ বিসি

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর