সামাজিক মাধ্যমে সক্রিয় জঙ্গিরা, এক বছরে গ্রেফতার ৪২৬

আপডেট: April 6, 2022 |

দেশে প্রতিদিন গড়ে একজনেরও বেশি উগ্রবাদী ব্যক্তিকে গ্রেফতার হয়। যারা মানসিকভাবে কট্টর মৌলবাদী ও আক্রমণত্মক এবং নিষিদ্ধ ঘোষিত বিভিন্ন উগ্রবাদী সংগঠনের কর্মী। তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন সময় উগ্রবাদে উসকানিমূলক বই, দেশীয় অস্ত্র ও বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়েছে।

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কোনও ঘটনা ঘটলে এসব উগ্রবাদী ব্যক্তি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আরও সরব হয়ে ওঠে। তাদের মতাদর্শ ও বিদ্বেষমূলক বক্তব্য ছড়িয়ে দেয়। নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠনগুলো এ সময় তাদের সমমনা ব্যক্তিদের টার্গেট করে বিভিন্ন কৌশলে দলে ভেড়ানোর চেষ্টা করে।

জঙ্গিবাদ বা উগ্রবাদ মোকাবিলায় পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব), অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিট (এটিইউ) এবং ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) কাজ করছে। এসব ইউনিটের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে নিষিদ্ধ ঘোষিত উগ্রবাদী বা জঙ্গি সংগঠনগুলোর ৪২৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে শীর্ষ জঙ্গি নেতারাও রয়েছে। এই হিসাব অনুযায়ী গড়ে প্রতিদিন ১ দশমিক ৬৭ জন উগ্রবাদী ব্যক্তিকে গ্রেফতার করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

র‌্যাব ২০২১ সালে ১৫৬টি অভিযানে ২৯৫ জন জঙ্গি বা উগ্রবাদীকে গ্রেফতার করেছে। তাদের মধ্যে জেএমবি সদস্য ৮৭ জন। তাদের কাছ থেকে চারটি দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র এবং ১৩ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়াও তিনটি চাপাতি, চারটি চাকু ও নয়টি ছুরি উদ্ধার করা হয়। একই সময় তাদের কাছ থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ উগ্রবাদী বই, পুস্তিকা ও লিফলেট উদ্ধার করেছে র‌্যাব।

র‌্যাবের গণমাধ্যম ও আইন শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন  বলেন, ‘যেকোনও ধর্ম, বর্ণ, গোত্রের উগ্রবাদী রয়েছে। তারা দুইভাবে সক্রিয় থাকে। একটি হচ্ছে নিজেদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট, অপরটি অন্যের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট হয়ে কথা বলে ভালো সাজার চেষ্টা করা। তারা দুটি কাজই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে খুব শক্তভাবে করে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তারা শক্তিশালী গ্রুপ নিয়ন্ত্রণ করে।’

তিনি বলেন, ‘যেকোনও ঘটনা ঘটলেই তারা সক্রিয় থাকার বিষয়টি জানান দিতে চায়। তাদের নিজেদের সদস্যদের চাঙা করা, সক্রিয় করা ও অন্যদের আকৃষ্ট করতে তারা সরব হয়। আবার যেটা তাদের ইস্যু না, সেটা নিয়েও তারা কথা বলে সাধারণ মানুষকে বোঝাতে চায়, তারা ভালো সংগঠন, তারা মানুষের হয়ে কাজ করতে চায়। কিন্তু আড়ালে তারা উগ্র মতবাদ প্রচার করে।’

খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘তারা আসলে নিজেদের অস্তিত্ব আছে বলে মানুষকে জানান দিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয় থাকে।’

এদিকে, পুলিশের অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট (এটিইউ) ২০২১ সালে ৩০টি অভিযানে ৪৬ জন জঙ্গিকে গ্রেফতার করেছে। তাদের মধ্যে রয়েছে– জেএমবির ৭ জন, আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) ২১ জন, আল্লাহর দলের ৫ জন, হিযবুত তাহরীরের ৩ জন ও আনসার আল ইসলামের ১০ জন। তবে তাদের কাছ থেকে কোন আগ্নেয়াস্ত্র বা দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার নেই।

দেশে এই উগ্রতার নেপথ্যে সব ধর্মের অপব্যাখ্যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যে-যার মতো করে ছড়িয়ে দিচ্ছে বলে মনে করছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। সাধারণ মানুষ এখন কোনও ঘটনার সংবাদের সূত্র জানতে যায় না, যাচাই-বাছাই করে না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সত্য-মিথ্যা যা পায় সেটাকেই ধারণ করছে। আবার সেগুলো যদি ধর্মীয় লেবাসধারীর মাধ্যমে প্রচারিত হয়, তাহলে বিশ্বস্ততা আরও বেড়ে যায়।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি) প্রতিষ্ঠার পর থেকে জঙ্গি দমনে ভূমিকা রেখেছে। ডিএমপির এই বিভাগ ২০২১ সালে বিভিন্ন সংগঠনের ৮৫ জন উগ্রবাদী বা জঙ্গিকে গ্রেফতার করে। ৪১টি মামলায় তাদের গ্রেফতার দেখানো হয়। তাদের কাছ থেকে এসময় ২টি বিদেশি পিস্তল, ৮ রাউন্ড গুলি, একটি ম্যাগাজিন, ২টি চাপাতি, ৪টি ছোরা, ১০টি ডেটোনেটর, অ্যাসিড ৫ লিটার, বিস্ফোরক পদার্থ ৬৩০ গ্রাম, ১৭৯টি জঙ্গিবাদী লিফলেট ও ৯৩টি বই উদ্ধার করা হয়।

নেট দুনিয়ায় তরুণদের আকৃষ্ট করতে ও প্রচারের জন্য উগ্রবাদীদের অসংখ্য আইপি, ওয়েবসাইট, ফোরাম, ব্লগ ও বার্তা চ্যানেল রয়েছে। চক্রটি এসব ব্লগের মাধ্যমে জিহাদ ও তাদের মতাদর্শের শাসনের কথা প্রচার করে। এসব চরমপন্থী গোষ্ঠীর নিজস্ব আইপি’ও (ইন্টারনেট প্রটোকল) আছে।

এটিইউয়ের অ্যাডিশনাল ডিআইজি (টিআই অ্যান্ড এ) মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘সাইবার জগতে আমাদের নজরদারি রয়েছে। উগ্রবাদী অনেক ধরনের প্রকাশনা ও প্রচারণা দেশের বাইরে থেকে করা হয়। দেশের মধ্যে যারা উগ্রবাদী কার্যক্রম পরিচালনা করার চেষ্টা করে, তাদের আইনের আওতায় আনা হয়।’

বৈশাখী নিউজ/ শেখ

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর