সৈয়দ জহির আহসান জাহিদ। পরিবারের রাখা এই নামের বাইরে তিনি এখন পরিচিত 'পিস্তল জাহিদ' নামে। দুর্ধর্ষ এই সন্ত্রাসীর জীবনাচরণ যেন রোমাঞ্চকর কোনো সিনেমাকেও হার মানায় বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী। ক্ষমতার অন্ধ দাপট আর দুর্বিনীত চরিত্রের জাহিদের পরিচিতি কেবল তার বসবাসের এলাকাতেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, অপরাধমূলক কাজে তার বিস্তৃতি ছড়িয়েছে বিভিন্ন এলাকায়। প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এই পেশাদার সন্ত্রাসীর নানান চমকপ্রদ তথ্য।
পিতা সৈয়দ মাহবুবুল আহসান (মৃত) - এর পুত্র সৈয়দ জহির আহসান জাহিদ পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদের ধ্যানধারণায় বিশ্বাসী সংগঠন ‘নাজারিয়া-ই-পাকিস্তান’ এর সাথে সংযুক্ত এবং এর বাংলাদেশ শাখার আমির। তার পরিবারের একাধিক সদস্যের সাথেও এই সংগঠনের সংশ্লিষ্টতা বিদ্যমান।
ঢাকাস্থ শান্তিনগর নিবাসী জিনাত সুফিয়া নামের এক নারী ঢাকা জেলা প্রশাসন বরাবর জাহিদের আগ্নেয়াস্ত্র বাজেয়াপ্তকরণ আবেদনের আর্জি চেয়ে লেখা এক দরখাস্তে বিস্তারিত তুলে এনেছেন জাহিদের অপরাধের ঘটনাসমূহ। উক্ত চিঠি থেকে জানা যায়, ২০১৩ থেকে ২০২১ অবধি উক্ত নারী নিজে এবং তার পরিবারের একাধিক সদস্য অব্যাহত অত্যাচার, ভীতি এবং সম্পত্তি বেদখলের আশংকায় দিনাতিপাত করছেন। একই চিঠিতে তিনি জাহিদকে সিদ্ধেশ্বরী এলাকার একজন পেশাদার সন্ত্রাসী অভিহিত করে তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা ও জিডি। অস্ত্রের লাইসেন্স করার পর অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠে জাহিদ। সুফিয়া জিনাত তার অভিযোগনামায় উল্লেখ করেছেন যে, তিনি ২০১৩ সালের ২০ জুলাই জাহিদের বিরুদ্ধে রমনা থানায় প্রাণনাশের হুমকির মামলা (নং ১৩০৯) করেন। আর এরপর থেকেই আরো বেশি মাত্রায় চড়াও হয় জাহিদ।
সপরিবারের সুফিয়া জিনাতকে হুমকিও দেয় জাহিদ। এমনকি বকেয়া বিল চাইতে গিয়েও জাহিদের রোষানলে পড়ে সুফিয়া জিনাত এবং তার স্বামী। সর্বশেষ ০৩রা জুন ২০২১ সালে বেলা ১০ টা নাগাদ বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক (কেয়ারটেকার) বকেয়া ইউটিলিটি চাইতে গেলে কেয়ারটেকার সুহাগ মিয়াকে বাম কোমরে গুজে রাখা অস্ত্র দেখিয়ে সরাসরি গুম ও হত্যার হুমকি দেয় জাহিদ, যা সেখানে উপস্থিত সকলেই প্রত্যক্ষ করেন।
জানা যায়, জাহিদের মূল পরিচয় তিনি আন্ডার গ্রাউন্ড সংগঠন ‘নাজারিয়া ই পাকিস্তান’ বাংলাদেশের আমির। এই সংগঠন প্রতিষ্ঠা পায় বিএনপির প্রথম শাসনামলে ১৯৯২ সালে। মূলত পাকিস্তানি ফান্ডে বাংলাদেশে জিন্নাহবাদি আদর্শ বিস্তার- এই সংগঠনের প্রাথমিক উদ্দেশ্য। আর এই সংগঠনের সাথে জাহিদের সম্পৃক্ততা মূলত শেকড়ের, কেননা, জাহিদ পারিবারিকভাবেই পাকিস্তানপন্থী মতবাদে বিশ্বাসী। জাহিদের দাদা পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের স্পিকার সৈয়দ জিয়াউল আহসান এবং পিতা সৈয়দ মাহবুবুল আহসান ছিলেন পাকিস্তান নেভির কর্মচারী। ’৯২ সাল থেকেই সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েই আজকের সন্ত্রাসী এই জাহিদ। ২০২০-এ চাচা সৈয়দ নাসারুল আহসানের মৃত্যুর পর থেকে সংগঠনের শীর্ষ পদ পান জাহিদ এবং তার মূল সহকারী হন তারই ছেলে জুবায়ের আহসান। স্বাধীন সার্বভৌম দেশে বসে ভিনদেশি এজেন্ডার এজেন্ট জাহিদ গং চেয়েছিল বাংলাদেশকে সন্ত্রাসী রাষ্ট্রে পরিণত করতে।
২০২০ সালেই জাহিদ গ্রেপ্তারের পর অনুসন্ধানে দেখা যায়, তার থেকে জব্দকৃত গোলা বারুদের সাথে তার ক্রয়কৃত গুলির তারতম্য। ক্রয় রশিদ অনুযায়ী রাইফেল ও পিস্তল মিলিয়ে ১৫০ রাউন্ড গুলি কিনেছিল জাহিদ কিন্তু গ্রেপ্তার কালে নথি অনুযায়ী পাওয়া যায় মোট ৬২ রাউন্ড গুলি। অর্থাৎ ৮৮ রাউন্ড গুলির কোন সদুত্তর দিতে পারেনি জাহিদ। পেশা এবং রাজনৈতিক পরিচয়ে একজন সন্তাসী জাহিদের এত বিপুল সংখ্যক গুলির হদিস না মেলা এক বিশাল আশংকার জন্ম দেয়। ২০২০ সালে জাহিদ যখন সর্বশেষ তার অস্ত্রের নবায়ন করে তখন তার নিকট থাকা গুলির সংখ্যা খতিয়ে দেখার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে, কেননা এর উপরই ভিত্তি করে জানা যাবে জাহিদের অস্ত্রের ব্যবহার সম্পর্কে।
এছাড়াও কয়েকটি ভুঁইফোড় সংবাদ মাধ্যমের পরিচয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সাথে সখ্যতা বজায় রাখতো জাহিদ।
সুত্র: ভোরের পাতা।
সম্পাদকীয় : নাহার ম্যানশন (৩য় তলা), ১৫০ মতিঝিল ঢাকা।
নিউজ ও কমার্শিয়াল : মুন কমপ্লেক্স (৩য় তলা) ৫৯/১, পাটুয়াটুলি, ঢাকা।
ই-মেইল: boishakhinews24.net@gmail.com
হট লাইন: ০১৬৮৮৫০৫৩৫৬
https://www.boishakhinews24.net/