প্রধানমন্ত্রী সবাইকে বিদ্যুৎ ব্যবহারে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, সঙ্কটময় মুহূর্তে বিদ্যুতের অপচয় রোধ করতে হবে। বাসা থেকে বের হওয়ার সময় নিজ দায়িত্বে লাইট-ফ্যানের সুইচ বন্ধ করতে হবে। বিদ্যুৎ ব্যবহারে সবাইকে সাশ্রয়ী হতে হবে।
সোমবার গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কাতারে পাঁচ দিনের রাষ্ট্রীয় সফর নিয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ বিন খলিফা আল থানি এবং জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের আমন্ত্রণে গত ৪ থেকে ৮ মার্চ এই সফর করেন তিনি।
দেশে বিদ্যুতের দাম বাড়া নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ইংল্যান্ড বিদ্যুতের দাম দেড়শ’ শতাংশ বাড়িয়েছে। আমরা সেটা করিনি। আমরা বিদ্যুৎ কিনে আনি, ভর্তুকি দিই।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়েছে তাই বিদ্যুতের দাম সমন্বয় করতে হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, প্রতিনিয়ত সমালোচনা শুনেই যাচ্ছি। আমরাই সুযোগ করে দিয়েছি। এর আগে তো এতো টেলিভিশন ছিল না, এতো রেডিও ছিল না। আমরাই সব উন্মুক্ত করে দিয়েছি। কথা বলার সুযোগ করে দিয়েছি। ডিজিটাল বাংলাদেশ। দেশ বিদেশ থেকে বসে বসেও আমাদের সমালোচনা করে। আমাদের করে দেওয়া জিনিস দিয়ে আমাদের সমালোচনা করে। এরপরও শুনতে হয়- কিছুই করি নাই।
এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে যেটাই বলুক, আমাদের আত্মবিশ্বাস আছে কিনা, দেশের মানুষের প্রতি আমাদের দায়িত্ববোধ কর্তব্যবোধ আছে কিনা এটা দেখতে হবে। পরিকল্পিত উন্নয়ন করতে পেরেছি কিনা সেটা আমাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তবে আমি এইটুকু দাবি করতে পারি, সেটা আমরা করতে পেরেছি।
প্রধানমন্ত্রী সবাইকে উৎপাদনমুখী হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আমি গণভবনে সবজি চাষাবাদ করেছি। ৪৬ মন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে। আপনারাও উৎপাদন বাড়ান।
রমজানে ভোগ্যপণ্যের দাম নিয়ে অপর এক প্রশ্নে শেখ হাসিনা বলেন, তবে কেউ খাদ্যপণ্য মজুত করে পচিয়ে ফেললে আমাদের তো কিছু করার থাকবে না। সেদিকে সাংবাদিকদেরও একটু নজর রাখতে হবে।
দ্রব্যমূল্য নিয়ে তিনি বলেন, খাদ্যদ্রব্য নিয়ে সমস্যাটা হচ্ছে, দাম বেশি কমালে উৎপাদকদের লোকসান হবে, আবার দাম বেশি বাড়ালে ভোক্তাদের কষ্ট হয়। এ জায়গায় সবসময় ব্যালেন্স করতে হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বিরোধীদলে থাকার সময়ও বসে থাকিনি। তখন আমরা ভবিষ্যতের কর্মপরিকল্পনা ঠিক করতে কাজ করেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকলে কেমন হয়, তা আমরা প্রমাণ করে দেখিয়েছি। এর মধ্যে অনেক ঘাত-প্রতিঘাত এসেছে। এগুলো মোকাবিলা করে আমরা উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রেখেছি। মানুষের প্রতি যে কমিটমেন্ট আমাদের ছিল, সে জায়গায় অনঢ় ছিলাম বলেই উন্নয়ন করতে পেরেছি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) স্বাধীন করে দিয়েছি। আর্থিক সচ্ছলতা এনে দিয়েছি।
আওয়ামী লীগ সরকার প্রথম নির্বাচন কমিশন করার জন্য আইন করে দিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেই আইনের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচন কমিশন সবসময় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের সঙ্গে ছিল, আওয়ামী লীগই প্রথম নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন করে দিয়েছে।
তিনি বলেন, কমিশনকে অবাধভাবে গড়ে তোলা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে তাদের নির্ভরশীলতা সরানো হয়েছে।
‘নির্বাচন কমিশনকে পূর্ণাঙ্গভাবে স্বাধীন করে দিয়েছি। তাদের পুরোপুরি আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করেছি।’
ইভিএম নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ইভিএম নিয়ে ওদের আপত্তি, তাই বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের ওপর ছেড়ে দিয়েছি। ওরা যতটুকু ভালো বুঝে তাই করবে। কারণ, কমিশনকে অবাধভাবে গড়ে তুলেছি। জনগণকে ভোটের অধিকার দিয়েছি, তারা যাকে খুশি ভোট দেবে।’
‘একটানা ২০০৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে সরকার পরিচালনা করছি। দেশে স্থিতিশীলতা রাখতে পেরেছি। এর মধ্যেও কিছু অগ্নিসন্ত্রাসের ঘটনা ঘটেছে। যেহেতু এত দীর্ঘ সময় ছিলাম, বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে পেরেছি।’
এখন আমাদের এগিয়ে যাওয়ার পালা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন আমাদের এগিয়ে যাওয়ার পালা। এর মধ্যে অনেক ঘটনা ঘটেছে। এখনো ঘটছে, এসবের জন্য সাময়িক সমস্যা হতে পারে। তবুও আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের সাময়িক কোন সমস্যা হলে জনগণ তা মোকাবেলা করবে। ১৯৭৫ এর পর এখন দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা অনেক ভালো।
তিনি আরও বলেন, এখন ভোট চুরির সুযোগ নেই। ছবিসহ ভোটার তালিকা করেছি। সিল মেরে ব্যালট ভরার সুযোগও নেই।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যুদ্ধের পর একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ার কাজে হাত দিয়েছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রমহান।
মাত্র তিন বছর ৭ মাসে স্বল্পোন্নত দেশে গড়ে যান। এরপর অন্ধকার নেমে আসে। আমরা ২০০৮ নির্বাচনে যে রুপকল্প ঘোষণা দিয়েছিলাম, সেটি করতে সক্ষম হয়েছি। জাতিসংঘ এলডিসি সম্মেলনে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে এটাই বাংলাদেশের শেষ অংশগ্রহণ। কারণ, ২০২৬ সালে আমরা এলডিসি থেকে বেরিয়ে যাব।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরে ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে জাতিসংঘের সদস্য দেশের স্বীকৃতি পায়। তার দেখানো পথ অনুসরণ করেই আমাদের সরকার জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে ২০২১ সালের মধ্যে আমাদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী একটি মধ্যম আয়ের উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে উত্তরণের সকল মাপকাঠি পূরণ করতে সক্ষম হয়।
নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষে প্রধানমন্ত্রী বরাবর ৪০ বিশ্বনেতার খোলাচিঠি ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকায় ছাপানোর বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘যিনি এতো নামিদামি তার জন্য ৪০ জনের নাম খয়রাত করে এনে অ্যাড দিতে হবে কেন। এটি আমার প্রশ্ন’।
সম্প্রতি শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি বাংলাদেশ সরকারের আচরণের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে একটি খোলাচিঠি দিয়েছেন ৪০ বিশ্বনেতা।
গত মঙ্গলবার রাজনীতি, কূটনীতি, ব্যবসা, শিল্পকলা ও শিক্ষাক্ষেত্রের ৪০ বিশ্বনেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে এই খোলাচিঠি দেয়। চিঠিটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকায় পূর্ণ পাতাজুড়ে বিজ্ঞাপন হিসেবেও প্রকাশিত হয়েছে।
৪০ বিশ্বনেতার মধ্যে রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন, দেশটির সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট আল গোর, জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন, আয়ারল্যান্ডের সাবেক প্রেসিডেন্ট মেরি রবিনসন, প্রয়াত মার্কিন সিনেটর এডওয়ার্ড এম কেনেডির ছেলে টেড কেনেডি জুনিয়রের মতো আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব।
কাতার সফর নিয়ে আয়োজিত প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে ইউনুস প্রসঙ্গটি উঠে আসে। সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, 'এইটা ঠিক বিবৃতি না। এটা একটি অ্যাডভারটাইজমেন্ট। যে ৪০ জনের নাম ব্যবহার করেছে আমাদের বিশেষ একজন ব্যক্তির পক্ষে। এর উত্তর কী দেব জানিনা৷ আমার একটা প্রশ্ন আছে।
আমার প্রশ্নটা হলো যিনি এত নামিদামি নোবেল প্রাইজপ্রাপ্ত তার জন্য এই ৪০ জনের নাম খয়রাত করে এনে এডভারটাইজমেন্ট দিতে হবে কেন? তাও আবার বিদেশি পত্রিকায়। এটাই আমার প্রশ্ন আর কিছু না। অ্যাড দিতে হলো কেন? প্রজ্ঞাপন কেন দিতে হলো?
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, প্রতিনিয়ত সমালোচনা শুনেই যাচ্ছি। আমরাই সুযোগ করে দিয়েছি। এর আগে তো এতো টেলিভিশন ছিল না, এতো রেডিও ছিল না। আমরাই সব উন্মুক্ত করে দিয়েছি। কথা বলার সুযোগ করে দিয়েছি। ডিজিটাল বাংলাদেশ। দেশ বিদেশ থেকে বসে বসেও আমাদের সমালোচনা করে। আমাদের করে দেওয়া জিনিস দিয়ে আমাদের সমালোচনা করে। আবার শুনতে হয়- কিছুই করি নাই।
এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে যেটাই বলুক, আমাদের আত্মবিশ্বাস আছে কিনা, দেশের মানুষের প্রতি আমাদের দায়িত্ববোধ কর্তব্যবোধ আছে কিনা এটা দেখতে হবে। পরিকল্পিত উন্নয়ন করতে পেরেছি কিনা সেটা আমাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তবে আমি এইটুকু দাবি করতে পারি, সেটা আমরা করতে পেরেছি।
সোমবার গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কাতারে পাঁচ দিনের রাষ্ট্রীয় সফর নিয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ বিন খলিফা আল থানি এবং জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের আমন্ত্রণে গত ৪ থেকে ৮ মার্চ এই সফর করেন তিনি।
সম্পাদকীয় : নাহার ম্যানশন (৩য় তলা), ১৫০ মতিঝিল ঢাকা।
নিউজ ও কমার্শিয়াল : মুন কমপ্লেক্স (৩য় তলা) ৫৯/১, পাটুয়াটুলি, ঢাকা।
ই-মেইল: boishakhinews24.net@gmail.com
হট লাইন: ০১৬৮৮৫০৫৩৫৬
https://www.boishakhinews24.net/