রাজধানীতে গণপরিবহন সংকট, ভোগান্তিতে যাত্রীরা

আপডেট: November 1, 2023 |

রাজধানীসহ সারাদেশে পালিত হচ্ছে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ সমমনা দলগুলোর তিন দিনের ডাকা সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচি। এ অবরোধ কর্মসূচির আজ দ্বিতীয় দিন। এদিন সকাল থেকে রাজধানীর রাস্তাগুলোতে গণপরিবহনের সংকট দেখা যায়।

এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে অফিসগামীদের কর্মস্থলে পৌঁছাতে বেশ ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। গণপরিবহনের জন্য মানুষকে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, আজ (বুধবার ১ নভেম্বর) সকাল থেকে রাজধানীর সড়ক-মহাসড়কে গণপরিবহন নেই বললেই চলে।

এরমধ্যে নর্দা কালা চাঁদপুর, কোকাকোলা, নতুন বাজার, বাঁশতলা ও বাড্ডা এলাকায় খুব একটা চোখে পড়েনি গণপরিবহন। অনেকটা ফাঁকা দেখা গেছে সড়কগুলো। দীর্ঘক্ষণ পর পর একটি করে বাস আসছে।

যা রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ-জনের জন্য পর্যাপ্ত নয়। তবে সকাল থেকে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া খুব একটা রাস্তায় বের হতে দেখা যায়নি সাধারণ মানুষকে। দূরপাল্লার বাসগুলোকে দেখা গেছে বাসস্ট্যান্ডে অবস্থান করতে।

এর আগে প্রথম দিনের অবরোধের শুরুতে কিছুটা চলাচল করলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সীমিত হতে থাকে যান চলাচল। ফলে ফাঁকা দেখে গেছে রাজধানী।

দেশের অন্য জেলায়ও ছিল একই চিত্র। দূরপাল্লার বাস কম ছেড়েছে। ট্রেন চলেছে, তবে যাত্রী কম ছিল। লঞ্চ ছেড়েছে। তাতেও যাত্রী কম ছিল।

অবরোধের প্রথম দিন গতকাল মঙ্গলবার ৯টি জায়গায় সংঘর্ষে অন্তত তিনজন নিহত ও ১২৫ জন আহত হয়েছেন।

প্রথম দিনে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে সংঘর্ষের খবর আসতে শুরু করে।

অবরোধ কর্মসূচি পালনের জন্য বিএনপির নেতাকর্মীরা রাস্তায় নামলে নারায়ণগঞ্জ, বগুড়া, কিশোরগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও মানিকগঞ্জসহ অন্তত ৯টি জায়গায় সংঘর্ষ হয়।

এর মধ্যে পাঁচ জায়গায় সংঘর্ষ হয়েছে বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের। তিন জায়গায় পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে বিএনপির এবং এক জায়গায় বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে।

ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে একটি, নারায়ণগঞ্জে দুটি ও কেরানীগঞ্জে একটি বাস পোড়ানো হয়েছে।

বগুড়ায় কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠানের একটি কাভার্ড ভ্যানে পেট্রোল বোমা ছুড়ে আগুন দেয়া হয়েছে এবং ভাঙচুর করা হয়েছে বাসসহ ৮ থেকে ১০টি যানবাহন।

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ৮টি ও ঢাকার সাভারে ২টি বাস ভাঙচুর করা হয়েছে। সিলেটে যাত্রীবাহী বাসে ভাঙচুর করে আগুন দেয়ার চেষ্টা হয়েছে।

পাবনার ঈশ্বরদীতে ৫টি অটোরিকশাসহ ১৫টি যানবাহন ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। সিলেটে খড় জমা করে রেললাইনে আগুন ধরানো হয়েছিল।

রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় বিএনপির নেতাকর্মীরা অবরোধের সমর্থনে ঝটিকা মিছিল করেন। দুপুরে চানখাঁরপুল এলাকায় বিএনপির মিছিল থেকে হামলায় তিন পুলিশ সদস্য আহত হন।

এর আগে গত রোববার (২৯ অক্টোবর) সন্ধ্যায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আন্দোলন কর্মসূচি প্রণয়ন ও পরবর্তী করণীয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

বিএনপির নীতি-নির্ধারণী ফোরামের এক নেতা জানিয়েছেন, পিছু হটার কোনো সুযোগ নেই। দাবির পক্ষে জনগণের সমর্থন রয়েছে।

২৮ অক্টোবর শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশে মানুষের ঢল দেখে পূর্বপরিকল্পিতভাবে পুলিশ দিয়ে হামলা চালিয়ে পণ্ড করেছে। ২৯ অক্টোবর হরতাল কর্মসূচি সারাদেশের মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে পালন করেছে।

অন্যদিকে গতকাল মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) থেকে শুরু হওয়া ৭২ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচিও কঠোরভাবে পালন করা হবে বলে জানিয়েছে দলটি। এজন্য দলের নেতাকর্মীদের নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে।

তিনি জানান, মহাসমাবেশের পরদিনই সকাল-সন্ধ্যা হরতাল কর্মসূচির কারণে সারাদেশ থেকে আসা নেতাকর্মীরা ঢাকায় আটকা পড়েছিল। একদিন বিরতি দেয়ায় জেলার নেতাকর্মীরা এলাকায় ফিরে গেছেন।

তাই ঢাকার পাশাপাশি জেলায় জেলায় অবরোধ কর্মসূচি পালন হবে। সারাদেশে সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচি বাস্তবায়নে বিএনপি ও অঙ্গ-সংগঠনের সব পর্যায়ের নেতাদের মাঠে থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

অবরোধ কর্মসূচি সফল হলে আগামী সপ্তাহ থেকে ফের কর্মসূচি দেয়া হতে পারে।

বিএনপির ওই নেতা আরও জানান, নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার দিন থেকে আরও কঠোর কর্মসূচি দেয়া হতে পারে। সরকার পতন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

এদিকে মহাসমাবেশে সংঘর্ষের পর বিএনপির সিনিয়র নেতাদের গ্রেপ্তার ও বাসায় বাসায় অভিযান চালায় পুলিশ। গতকালও ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হকের বাসায় অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। তবে দলটির নেতারা গ্রেপ্তার এড়াতে সতর্ক হয়ে চলছেন।

সোমবার এক ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী জানিয়েছেন, সংবাদপত্রের গাড়ি, অ্যাম্বুলেন্স, অক্সিজেন সিলিন্ডার গাড়ি ও জরুরি ওষুধ পরিবহন অবরোধের আওতামুক্ত থাকবে।

বিএনপি ও জামায়াতের ডাকা টানা তিন দিনের অবরোধে সারাদেশে পণ্যবাহী গাড়ি ও বাস চালানোর ঘোষণা দিয়ে নিরাপত্তা চেয়েছে পরিবহন মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি।

একই সঙ্গে যেসব গাড়ি ভাঙচুর ও পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে, সেগুলোর জন্য ক্ষতিপূরণের দাবিও জানানো হয়েছে।

সোমবার সমিতির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মালিক-শ্রমিকদের যৌথসভায় এই সিদ্ধান্ত হয় বলে সংগঠনের মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর