গাজাবাসীর মৃত্যুর কারনে ইসরায়েলি হামলার বিরুদ্ধে বিশ্ব জনমত চলে যাচ্ছে: এহুদ বারাক

আপডেট: November 7, 2023 |
boishakhinews 35
print news

 

ইসরায়েলি সাবেক প্রধানমন্ত্রী এহুদ বারাক বলেছেন, ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করতে ইসরায়েলের হাতে আর মাত্র কয়েক সপ্তাহ বাকি আছে। কারণ ফিলিস্তিনিদের ক্রমবর্ধমান মৃত্যুর সংখ্যার কারণে গাজায় ইসরায়েলি হামলার বিরুদ্ধে বিশ্ব জনমত, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণভাবে যুক্তরাষ্ট্রে দ্রুত পরিণত হচ্ছে। পলিটিকো মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।

সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী একসময় ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।

তিনি বলেছেন, ‘সাম্প্রতিক দিনগুলোতে মার্কিন কর্মকর্তাদের বক্তৃতা যুদ্ধে মানবিক বিরতির আহ্বানের ক্রমবর্ধমান সমস্বরের সঙ্গে পরিবর্তিত হয়েছে।’ হামাসের ৭ অক্টোবরের ভয়াবহ হামলার প্রেক্ষাপটে ইসরায়েলের প্রতি ‘সহানুভূতি’ এখন ‘হ্রাস’ পাচ্ছে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
গাজা উপত্যকায় হামাসকে লক্ষ্য করে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর শুরু করা সাম্প্রতিক স্থল আক্রমণের কথা উল্লেখ করে বারাক বলেন, ‘আপনি দেখতে পাচ্ছেন সুযোগ শেষ হয়ে যাচ্ছে। এটা স্পষ্ট যে আমরা আক্রমণ সম্পর্কে আমেরিকানদের সঙ্গে বিরোধের দিকে যাচ্ছি।

যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে নির্দেশ দিতে পারে না কী করা উচিত। কিন্তু আমরা তাদের উপেক্ষাও করতে পারি না।’
বারাক আরো বলেছেন, ‘আমাদের আগামী দুই বা তিন সপ্তাহের মধ্যে আমেরিকানদের দাবি মেনে নিতে হবে, সম্ভবত আরো কম সময়ে।’

এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সোমবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে ফোনে ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা ও সামরিক অভিযানের সময় বেসামরিক ক্ষতি হ্রাস করার জন্য অপরিহার্য গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছেন।

দুই নেতা চলমান যুদ্ধের এলাকাগুলো থেকে বেসামরিকদের নিরাপদে সরে যাওয়ার সুযোগ দিতে কৌশলগত বিরতির সম্ভাবনা নিয়েও আলোচনা করেছেন, যাতে প্রয়োজনে সহায়তা বেসামরিকদের কাছে পৌঁছনো যায় এবং জিম্মিদের সম্ভাব্য মুক্তি হয়।
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সম্পৃক্ত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, ফিলিস্তিনিদের মৃতের সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে, যার মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ নারী, শিশু ও বয়স্ক। এমন প্রেক্ষাপটে এই আহ্বান এলো।

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস সোমবার একটি অবিলম্বে মানবিক যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন এবং গাজায় চলমান সংঘাতকে ‘মানবতার সংকট’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

গুতেরেস বলেছেন, ‘ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর স্থল অভিযান ও অব্যাহত বোমাবর্ষণ বেসামরিক নাগরিক, হাসপাতাল, শরণার্থীশিবির, মসজিদ, গির্জা এবং জাতিসংঘের সুযোগ-সুবিধাপ্রাপ্ত আশ্রয়কেন্দ্রে আঘাত করছে।

কেউ নিরাপদ না। একই সময়ে, হামাস ও অন্য যোদ্ধারা বেসামরিক মানুষকে মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে এবং ইসরায়েলের দিকে নির্বিচারে রকেট ছুড়ছে।’
জাতিসংঘের প্রধান বলেছেন, ‘বিপর্যয় প্রতি ঘণ্টায় মানবিক যুদ্ধবিরতির প্রয়োজনীয়তাকে আরো জরুরি করে তুলেছে। সংঘাতের পক্ষগুলো এবং প্রকৃতপক্ষে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় একটি অবিলম্বে ও মৌলিক দায়িত্বের মুখোমুখি, যেটা হলো অমানবিক যৌথ দুর্ভোগ বন্ধ করা এবং নাটকীয়ভাবে গাজায় মানবিক সহায়তা প্রসারিত করা।’

এহুদ বারাক পলিটিকোকে বলেছেন, হামাসকে নির্মূল করতে কয়েক মাস বা এক বছর সময় লাগবে, যা নেতানিয়াহুর যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার প্রধান ঘোষিত লক্ষ্য। কিন্তু গাজায় বেসামরিক মৃত্যুর সংখ্যা এবং ইসরায়েলের অভিযান এই অঞ্চলে আরো বিস্তৃত ও বিপর্যয়মূলক যুদ্ধের জন্ম দেওয়ার আশঙ্কার কারণে পশ্চিমা সমর্থন দুর্বল হচ্ছে।

হামাসের হাতে জিম্মিদের মধ্যে থাকা নাগরিকদের বিষয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর উদ্বেগের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘মানুষের আবেগ দেখুন। দরজার পেছনে এটি একটু বেশি স্পষ্ট। আমরা ইউরোপে জনমত হারাচ্ছি এবং এক বা দুই সপ্তাহের মধ্যে আমরা ইউরোপে সরকারের সমর্থনও হারাতে শুরু করব। আরো এক সপ্তাহ পরে আমেরিকানদের সঙ্গে বিরোধ আবির্ভূত হবে।’

এ ছাড়া মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন মধ্যপ্রাচ্য সফরের সমাপ্তি ঘটিয়েছেন। সফরে ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ নিয়ে আঞ্চলিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে ঝড় ওঠে। তিনি সোমবার বলেছিলেন, ‘গাজার ফিলিস্তিনিদের নিহতের পরিসংখ্যান এখানে গভীর উদ্বেগের বিষয়। আমরা তা জানি। আমরা প্রতিটি দিন এ বিষয়ে কাজ করছি। আমরা বেসামরিক হতাহতের সংখ্যা কমানোর জন্য আমরা ইসরায়েলিদের বিভিন্ন পদক্ষেপে যুক্ত করছি।’

বারাক বলেছেন, তিনি মনে করেন না যে ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা ‘বাইডেন প্রশাসন এবং ইউরোপীয়দের দীর্ঘ সময়ের জন্য প্রতিরোধ করতে’ সক্ষম হবে।

একটি বহুজাতিক আরব বাহিনীকে সামরিক অভিযানের পর গাজার নিয়ন্ত্রণ নিতে হতে পারে বলেও মত দিয়েছেন বারাক। বিশেষ করে হামাসের কাছ থেকে ক্ষমতা মাহমুদ আব্বাসের ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য সাহায্য করতে। তিনি বলেছেন, ‘এটা অকল্পনীয় যে আরব লীগ ও জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সমর্থনে, একটি বহুজাতিক আরব বাহিনীকে একত্র করা যেতে পারে, অআরব দেশগুলোর কিছু প্রতীকী ইউনিট অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে সঠিকভাবে দখলে নিতে সাহায্য করার জন্য তারা তিন থেকে ছয় মাস সেখানে থাকতে পারে।’

সূত্র : আল অ্যারাবিয়া

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর