পল্লীকবি জসীম উদ্দীনের ৪৮তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত

আপডেট: March 14, 2024 |

তারেকুজ্জামান, ফরিদপুর প্রতিনিধি: নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে ফরিদপুরে পল্লীকবি জসীম উদ্দীনের ৪৮তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) দিবসটি উপলক্ষে ফরিদপুর জেলা প্রশাসন ও জসীম ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়।

এদিন সকাল সাড়ে ৯টায় ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক ও জসীম ফাউন্ডেশনের সভাপতি কামরুল আহসান তালুকদারের নেতৃত্বে কবির ৪৮ তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে শহরের গোবিন্দপুরে কবির সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পন করে পরে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক ) ইয়াসিন কবিবের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার।

ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সালাউদ্দিন , বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রফেসর আব্দুস সামাদ, অধ্যাপক মোহাম্মদ শাহজাহান সহ ফরিদপুর জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা বৃন্দ ‌, পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তাবৃন্দ সহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক বলেন, পল্লী কবি জসীম উদ্দীন বাংলার অপরূপ সৌন্দর্য তার সাহিত্য ও কবিতার মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী তুলে ধরেছেন।

গ্রাম-বাংলার সেই রূপ সৌন্দর্য অনুধাবন করতে হলে জানতে হবে পল্লী কবি জসীম উদ্দীনকে, পড়তে হবে তার কবিতা ও গ্রন্থাবলী। যিনি গাছের পাশে, নদীর পাড়ে মাটিতে বসে মাটির সঙ্গে মিশে গিয়ে কবিতা, গল্প লিখতেন।

তিনি বলেন, রুপসী গ্রাম বাংলাকে তার মতো ভালোবেসে অন্য কেউ সাহিত্য রচনা করেননি। জসীম উদ্দীন পল্লীর মানুষকে নায়ক-নায়িকায় পরিণত করেছেন।

আসমানী, গুনাই বিবি, রুপাই, সাজু প্রভৃতি তার সৃজিত শ্রেষ্ঠ চরিত্র। তিনি একজন বিখ্যাত বাঙালি কবি। তিনি বাংলাদেশে ‘পল্লীকবি’ হিসেবে পরিচিত। তার লেখা কবর কবিতাটি বাংলা সাহিত্যে এক অবিস্মরণীয় অবদান।

আজ ডিজিটাল যুগে গ্রাম বাংলার সেই রুপ সৌন্দর্য প্রায় হারিয়েই গেছে। গ্রাম বাংলার সেই রুপ সৌন্দর্য অনুধাবন করতে হলে জানতে হবে পল্লীকবি জসীমউদ্দীনকে, পড়তে হবে তার কবিতা-গ্রন্থাবলী।

পল্লীকবিকে স্মরণ রাখতে কবিকে নিয়ে সারা বছর বিভিন্ন অনুষ্ঠান করতে আহ্বান জানান তিনি। জেলা প্রশাসক এ সময় বলেন, আমরা প্রতি বছর জসীম পল্লী মেলা আয়োজন করি।

মেলাটি যেন পল্লীকবি জসীম উদ্দীনকে স্মরণ করিয়ে দেয় সে জন্য মেলা চলাকালীন নিয়মিত কবির জীবনী নিয়ে আলোচনা, কবির রচিত বিভিন্ন গান, কবিতা, গল্প ইত্যাদি উপস্থাপনের ব্যবস্থা থাকে।

এছাড়া এই জনপদে আরও যে সব কবি, লেখক বা সাহিত্যিক রয়েছে তাদের নিয়েও বিভিন্ন অনুষ্ঠানের চিন্তা রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

১৯০৩ সালের ১ জানুয়ারি ফরিদপুর শহরতলীর কৈজুরী ইউনিয়নের তাম্বুলখানা গ্রামে নানা বাড়িতে জন্ম নেন পল্লীকবি জসীম উদ্দীন।

কবির পিতার নাম আনছারউদ্দীন, মাতার নাম আমেনা খাতুন। তিনি ১৯৭৬ সালের ১৪ মার্চ মৃত্যুবরণ করেন। কবির শিক্ষাজীবন শুরু হয় ফরিদপুর শহরের হিতৈষী স্কুলে।

সেখানে প্রাথমিক শেষ করে তিনি ফরিদপুর জেলা স্কুল থেকে ১৯২১ সালে এসএসসি, ১৯২৪ সালে ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজ থেকে এইচএসসি এবং একই কলেজ থেকে বিএ পাস করেন।

তিনি ১৯৩১ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ পাস করেন। পরবর্তীতে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। ১৯৬১ সালে চাকরি থেকে অবসর নেন তিনি। তিন বাল্য বয়স থেকেই কাব্য চর্চা করতেন।

তিনি ১৯৭৬ সালে ইউনেস্কো পুরস্কার, ১৯৬৮ সালে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিলিট উপাধি, ১৯৭৬ সালে ২১শে পদকে ভূষিত হন।

জসীম উদদীন একজন বাঙালি কবি, গীতিকার, ঔপন্যাসিক ও লেখক। ‘পল্লীকবি’ উপাধিতে ভূষিত, জসীম উদ্‌দীন আবহমান বাংলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে লালিত প্রথম পূর্ণাঙ্গ আধুনিক কবি।

ঐতিহ্যবাহী বাংলা কবিতার মূল ধারাটিকে নগরসভায় নিয়ে আসার কৃতিত্ব জসীম উদ্‌দীনের। তার নকশী কাঁথার মাঠ ও সোজন বাদিয়ার ঘাট বাংলা ভাষার গীতিময় কবিতার উৎকৃষ্টতম নিদর্শনগুলোর অন্যতম।

জসীম উদ্দীনের “নকশী কাঁথার মাঠ” কাব্যটি “দি ফিল্ড অব এমব্রয়ডার্ড কুইল্ট” এবং বাঙালির হাসির গল্প গ্রন্থটি ইংরেজিতে অনূদিত হয়েছে।

এছাড়াও তার ‘সোজন বাদিয়ার ঘাট’ কাব্যগ্রন্থটি ইংরেজিতে “জিপ্সি ওয়ার্ফ” শিরোনামসহ বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে।

তার রচিত কাব্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে- রাখালী (১৯২৭), নকশী কাঁথার মাঠ (১৯২৯), বালুচর (১৯৩০), ধানক্ষেত (১৯৩৩), সোজন বাদিয়ার ঘাট (১৯৩৪), হাসু (১৯৩৮), রুপবতি (১৯৪৬), মাটির কান্না (১৯৫১), এক পয়সার বাঁশী (১৯৫৬), সখিনা (১৯৫৯), সুচয়নী (১৯৬১), ভয়াবহ সেই দিনগুলিতে (১৯৬২), মা যে জননী কান্দে (১৯৬৩), হলুদ বরণী (১৯৬৬), জলে লেখন (১৯৬৯), পদ্মা নদীর দেশে (১৯৬৯), কাফনের মিছিল (১৯৭৮), মহরম, দুমুখো চাঁদ পাহাড়ি (১৯৮৭) ইত্যাদি।

তার রচিত নাটকের মধ্যে রয়েছে- পদ্মাপার (১৯৫০), বেদের মেয়ে (১৯৫১), মধুমালা (১৯৫১), পল্লীবধূ (১৯৫৬), গ্রামের মেয়ে (১৯৫৯) ইত্যাদি।

ভ্রমণকাহিনীর মধ্যে রয়েছে- চলে মুসাফির (১৯৫২), হলদে পরীর দেশে (১৯৬৭), যে দেশে মানুষ বড় (১৯৬৮), জার্মানির শহরে বন্দরে (১৯৭৫) ইত্যাদি।

আত্মকথা হিসেবে- যাদের দেখেছি (১৯৫১), ঠাকুর বাড়ির আঙিনায় (১৯৬১), জীবন কথা ( ১৯৬৪), স্মৃতিপট (১৯৬৪)।

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর