‘তোদের নেত্রী পালিয়ে গেছে, তুই সরে যা এখনই’, গত ৫ আগস্ট সোমবার বিকেলে তার মোবাইলে এক বন্ধু এভাবেই সাবধান করে দিয়েছিল বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জের আড়াই হাজার এলাকার বাসিন্দা এক স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতাকে।
তিনি তখন বাড়ি থেকে সামান্য দূরে বাজারে গিয়েছিলেন। তার জানা ছিল না যে তাদের নেত্রী, শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে ভারতে পালিয়ে গেছেন।
নাম প্রকাশ না করতে চাওয়া ওই ছাত্রলীগ নেতার মতো আরও অনেক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীই ভারতে চলে এসেছেন বা আসার চেষ্টা করছেন বলে বিবিসি জানতে পেরেছে।
হামলা হতে পারে তাদের ওপরে, এরকম আশঙ্কা করে যারা ভারতে চলে এসেছেন অথবা আসার চেষ্টা করছেন, তাদের মধ্যে তিনজনের সঙ্গে বিবিসি কথা বলতে পেরেছে অনেক চেষ্টা করে।
নারায়ণগঞ্জের ওই ছাত্রলীগ কর্মী বন্ধুর ফোন পেয়েই বাড়ি থেকে দূরে সরে যান। পরে জানতে পারেন যে সোমবার বিকেল পাঁচটা নাগাদ তাদের বাড়িতে হামলা চালায় সশস্ত্র দুষ্কৃতিরা।
ওই ব্যক্তি বলছিলেন, ‘ভাঙচুর করেছে বাড়ি ঘর, সব লুঠ করে নিয়ে গেছে। আমার বাবা-মাকেও মারধর করেছে। আমি তখন থেকেই ঘর ছাড়া। পরে বাবা-মাকেও সরিয়ে এনেছি। কিন্তু তাদের সঙ্গে এখনও দেখা হয়নি আমার। ওদের এক জায়গায় রেখেছি, আমি অন্য এলাকায় আছি,’
তিনি বলেন, আমার পাসপোর্ট ছিল, সেটাও লুঠ করে নিয়ে গেছে শুনেছি। এখন যে কোনভাবে আমি ভারতে চলে যাওয়ার চেষ্টা করছি। শুনছি সীমান্তে ভীষণ কড়াকড়ি হচ্ছে, তাই দালাল ধরেও যে চলে যেতে পারব, সেই নিশ্চয়তা নেই।
নারায়ণগঞ্জের ওই ছাত্রলীগ নেতা দালালের সাহায্যে সীমান্ত পেরনোর যখন চেষ্টা করছেন, ততক্ষণে দালালের মাধ্যমে ভারতে চলে এসেছেন বাংলাদেশের সাতক্ষীরা জেলার এক স্থানীয় আওয়ামী লীগ কর্মী।
সাতক্ষীরার শ্যামনগরের বাসিন্দা ওই ব্যক্তি ভারতে এসে পৌঁছেছেন বুধবার সকালে। তাদের গ্রামেও সোমবারের পরে হামলা হয়েছে বলে তিনি দাবি করছেন।
‘আমরা আওয়ামী লীগ করতাম, সেজন্যই আমাদের টার্গেট করেছিল ওরা। বাড়িঘর ভেঙে দিয়েছে, গলায় দা ধরে বলছে টাকা দে না হলে কেটে ফেলব। এই অবস্থায় পালিয়ে এসেছি কোনওভাবে। স্ত্রী-পুত্র সব রেখে এসেছি। হয়ত আমাকে না পেলে ওরা আর হামলা করবে না,’ বলছিলেন ওই আওয়ামী লীগ কর্মী।
তিনি বলছিলেন, পাসপোর্ট, ভারতীয় ভিসা সবই ছিল আমার। চেষ্টা করেছিলাম চেকপোস্ট দিয়ে সীমান্ত পেরতে। কিন্তু শুনতে পেলাম সেখানে নাকি আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী সন্দেহ হলেই বাড়তি চেকিং করছে। তাই চুরি করে নদী পেরিয়ে ভারতে এসেছি।
তবে এই দুর্ভোগ পোয়াতে হয়নি দিনাজপুরের বাসিন্দা এক আওয়ামী লীগ কর্মীকে। শেখ হাসিনা দেশ ছেড়েছেন, এই খবর পেয়েই তিনি বৈধ পথেই সীমান্ত পেরিয়ে পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চলীয় একটি শহরে নিজের আত্মীয়র কাছে চলে এসেছেন।
‘আমি মাস কয়েক আগেও ভিসা নিয়ে ভারতে এসেছিলাম। সেই ভিসার বৈধতা এখনও আছে। শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছেন, এই অবস্থায় হামলা হতে পারে, এরকম একটা আশঙ্কা করেই আমি চলে আসি। ভিসা থাকায় আমার এই সুবিধাটা হয়েছে,’ বলছিলেন ওই আওয়ামী লীগ কর্মী।
তবে তার বাড়িতে যে কেউ হামলা করেনি, সেটা নিশ্চিত করেছেন দিনাজপুরের বাসিন্দা ওই ব্যক্তি। পরিবারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগও রাখছেন ওই ব্যক্তি। এটাও জানতে পেরেছেন যে তাদের এলাকায় পরিস্থিতি বেশ স্বাভাবিক হয়েছে এবং স্থানীয়রা আশ্বস্ত করেছেন যে তিনি নিশ্চিন্তে দেশে ফিরতে পারেন। কিন্তু কবে ফিরবেন, সেটা এখনও স্থির করেননি তিনি।
তবে অনেক মানুষ বাংলাদেশ থেকে বৈধভাবে বা অবৈধ পথে ভারতে চলে আসছেন, এরকম তথ্য ঠিক নয় বলে দাবি করেছেন দক্ষিণ বঙ্গ সীমান্ত অঞ্চলের এক সিনিয়র বিএসএফ কর্মকর্তা।
বিএসএফ বলছে বাংলাদেশের পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার পর থেকে গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই অতি সতর্কতা রয়েছে সীমান্তে। এর মধ্যেই বাহিনীর নতুন মহাপরিচালক পশ্চিমবঙ্গে এসেছিলেন। অনেকগুলি সীমান্ত এলাকায় তিনি সফর করেছেন, বাড়তি সতর্কতার কথা বারবার তিনি নিজের বাহিনীকে বলেছেন।
সূত্র: বিবিসি।
সম্পাদকীয় : নাহার ম্যানশন (৩য় তলা), ১৫০ মতিঝিল ঢাকা।
নিউজ ও কমার্শিয়াল : মুন কমপ্লেক্স (৩য় তলা) ৫৯/১, পাটুয়াটুলি, ঢাকা।
ই-মেইল: boishakhinews24.net@gmail.com
হট লাইন: ০১৬৮৮৫০৫৩৫৬
https://www.boishakhinews24.net/