বাংলা ও বাঙ্গলাী জাতিসত্তার ইতিহাসে বিজয় মানেই ৭১। লক্ষ মানুষ তাজা রক্তের ত্যাগের বিনিময়ে একটি মানচিত্র একটি পতাকা।
তবে স্বাধীনতার ৫০ বছরের বেশি সময় অতিক্রম করলেও দেশে সুশাসন, গনতন্ত্র, বিচারহীনতা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সুশিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ আরো বিভিন্ন প্রশ্নের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে।
সর্বশেষ ২৪ এর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে শুরু হয়েছে নতুন করে দেশ সংস্কারের কাজ৷ ১৯৭১ সাল থেকে ২০২৪ অবধি দেশের উন্নয়ন, সফলতা, ব্যর্থতাসহ নানা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ছাত্র নেতাসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ক্লাবের প্রতিনিধিরা।
তাদের সেই মতামত তুলে ধরেছেন এশিয়ান টেলিভিশনের ডিআইইউ প্রতিবেদক কালাম মুহাম্মদ।
২৪ এর গণবিপ্লব বাংলাদেশের জন্য একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করেছে।
বাংলাদেশের বিজয় ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত হয়। ৯ মাসব্যাপী রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১৬ই ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ করে এবং আমরা একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বের মানচিত্রে স্থান পাই তবে মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী সময় বড় ধাক্কা পায় বাংলাদেশ বুদ্ধিজীবী হত্যায়।
এই হত্যাযজ্ঞ আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক এবং মানসিক সম্পদের উপর এটি বিরাট ক্ষতির কারন হয়েছিল, যা জাতির জন্য দীর্ঘকাল ধরে বিরূপ প্রভাব ফেলেছিল।
স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের পাথচলা ছিল নানা চ্যালেঞ্জে পরিপূর্ণ, যেমন রাজনৈতিক অস্থিরতা, অর্থনৈতিক সংকট এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ।অর্থনৈতিক উন্নতির পাশাপাশি নানা চ্যালেঞ্জ, যেমন দুর্নীতি, পরিবেশগত সমস্যা এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা, এখনও বাংলাদেশের সামনে রয়েছে।
বিভিন্ন সময় বাংলাদেশ ফ্যাসিবাদী এবং অযোগ্যদের দ্বারা পরিচালিত হওয়ায় বাংলাদেশ অর্থনীতিতে সমৃদ্ধি লাভ করতে পারিনি তবে, সময়ের সঙ্গে দেশের অর্থনীতি, শিক্ষা, এবং স্বাস্থ্য খাতে উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়।
তথাপি, সারা বিশ্বে বাংলাদেশের পরিচিতি কেবল একে স্বাধীনতা সংগ্রামের দেশ হিসেবে নয়, বরং সাংস্কৃতিক ও প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে নিত্য নতুন সাফল্যের দেশ হিসেবেও কি পরিচিত।
বিজয়ের ৫৩ বছর পর, ২৪ এর গণবিপ্লব বাংলাদেশের জন্য একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করেছে যেখানে ফ্যাসিবাদী হাসিনার পতনের মাধ্যমে দীর্ঘ ষোলো বছরের একনায়কতন্ত্রকে ধ্বংস করে গণতন্ত্রের পুনর্জন্ম হয়েছে।
এই ২৪ এর চেতনাকে ধারণ করে বাংলাদেশ তার স্বাধীনতার অঙ্গীকারকে বাস্তবায়িত করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
শাকিল আহমেদ
সভাপতি, 'ল' ক্লাব
ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।
দেশে গণতন্ত্র ও বহুদলীয় রাজনীতির শাসন প্রতিষ্ঠিত করতে হবে:
৭১ এর পর থেকে বাংলাদেশের রাজনীতি ও অর্থনৈতিক ক্ষতির মূল কারন হচ্ছে দেশে সুস্ঠু ও স্বাভাবিক রাজনীতি চালু না থাকা।
যুদ্ধ পরবর্তী মুজিব সরকারের সীমাহীন লুটপাট ও দূর্বিত্তায়নের ফলে বাংলাদেশে ১৯৭৪ এ মারাত্মক দূর্ভিক্ষের সম্মুখীন হয়। ঠিক তেমনি বাংলাদেশের রাজনীতিতেও সংকট ঘনীভূত হয়ে তা একদলীয় শাষন তথা বাকশালে রূপ নেয়।
কিন্তু এর পরবর্তী সময়ে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাসনামলে বাংলাদেশে যেমন বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয় ঠিক তেমনি বাংলাদেশের অর্থনীতিও ঘুরে দাঁড়ায়।
আর বর্তমান সময়েও আমরা দেখেছি খুনি হাসিনার বিগত দেড় দশকের একদলীয় শাসনামলে বাংলাদেশের রাজনীতি যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ঠিক তেমনি বাংলাদেশের অর্থনীতি মারাত্মকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়।
কিন্তু হাসিনা পলায়ন পরবর্তী সময়ে বর্তমানে আমরা দেখছি বাংলাদেশের অর্থনীতির সকল সেক্টরেই উন্নতির সুবাতাস বইছে। দেশের রপ্তানি ও রেমিট্যান্স প্রবাহ যেমন বেড়েছে ঠিক তেমনি বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও বেড়েছে।
আর এর মূল কারন হচ্ছে বর্তমানে দেশে সুস্ঠু রাজনীতিতে গতি সঞ্চারিত হয়েছে। দেশের মানুষ বাধাহীনভাবে কথা বলতে পারছে এবং জবাবদিহিতাও অনেকাংশ নিশ্চিত হয়েছে।
তাই দেশে গণতন্ত্র ও বহুদলীয় রাজনীতির শাসন প্রতিষ্ঠিত হলেই দেশের রাজনীতি এবং অর্থনীতি সমৃদ্ধ হবে।
রাকিবুল হাসান চাঁদ
আহ্বায়ক,
ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ছাত্রদল।
জুলাইও বিজয়ের মাস হয়ে এসেছে :
৫৩ বছর বয়সী বাংলাদেশকে আগলে রেখেছে এদেশের মুক্তিকামী জনগণ। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে দীর্ঘদিন লড়াই করে স্বাধীনতা পেয়ে জন্ম হয়েছে বাংলাদেশের। তবে ৭১ পরবর্তী সময়ে দেশকে স্থিতিশীল করতে বেগ পেতে হয়েছে আপামর জনসাধারণকে।
শেখ মুজিবর রহমানের বাকশাল থেকে শুরু করে দুর্ভিক্ষ, সেনাশাসন, এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হতে সময় নিয়েছে প্রায় ১৯ বছর।
১৯৯০ সালে স্বৈরাচার এরশাদের পতনের পর গণতন্ত্রের দিকে সম্পূর্ণ রূপে ধাবিত হয় বাংলাদেশ। দেশে বহুদলীয় গঠনতন্ত্র পুনরায় প্রতিষ্ঠিত হয়। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বিস্তার লাভ করতে থাকে।
পাশাপাশি কৃষি, পোশাক শিল্প, বৈদেশিক রেমিট্যান্স ও নানা খাতে অগ্রগতি হতে থাকে। বাংলাদেশের মানুষ বিজয়ের স্বাদ গ্রহণ করে ও সামনে এগিয়ে যেতে নিজেদের প্রস্তুত করতে থাকে।
২০০১ সালের পর দেশে জঙ্গি সংগঠনের উত্থান ঘটে, দেশের আবার পিছনের রাস্তায় হাঁটতে শুরু করে। ২০০৯ সালে বিডিআর হত্যা কান্ডের মাধ্যমে বিজয়ের পথের ওপর দাগ কাটে। দেশকে প্রায় ১০০ বছর পিছিয়ে দেওয়া হয়।
আজও বাংলাদেশ সেই ৭৪ জন সেনা কর্মকর্তার শূন্যতা পূরণ করতে পারেনি।
২০০৮ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে এবং দেশকে অন্যের হাতে তুলে দেওয়ার এক মিশন শুরু হয় ২০০৯ সালে বিডিআর হত্যা কান্ডের মাধ্যমে বিজয়ের পথের ওপর দাগ কাটে।
দেশকে প্রায় ১০০ বছর পিছিয়ে দেওয়া হয়। আজও বাংলাদেশ সেই ৭৪ জন সেনা কর্মকর্তার শূন্যতা পূরণ করতে পারেনি।
২০০৯ সালে বিডিআর হত্যাকাণ্ডের পর থেকে দেশ বিরোধী ষড়যন্ত্রকারীদের মদদে, সেনা হত্যা, গুম, খুন, অর্থপাচার, লুটপাট, বাকস্বাধীনতা হরণ, পুলিশি রাষ্ট্র কায়েম, বিরোধী নিধন, ইসলামিস্টদের আক্রমণ, বিচার বিভাগ দখল, চাঁদাবাজি, তথ্যপাচার, এবং সর্বশেষ ২০২৪ সালে জুলাইয়ে গণহত্যায় প্রায় ২০০০ জন ছাত্র ও জনতাকে হত্যা করা হয়েছে। দেশকে পরাধীনতার দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।
তবে বাংলাদেশের মানুষকে দীর্ঘ সময় দমন করা যায়নি। দেশের মানুষ অত্যাচারী আওয়ামী লীগ সরকারকে তাড়িয়ে দিয়ে আবার স্বাধীনতা ফিরিয়েছে।
বর্তমানে স্বাধীন বাংলাদেশে মানুষ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। বাংলাদেশের মানুষ যেমন ১৯৭১ সালের বিজয়ের মাস ডিসেম্বর নিয়ে এসেছিল, তেমনই ২০২৪ সালের জুলাইও বিজয়ের মাস হয়ে এসেছে।
যখনই বাংলাদেশের মানুষ নিজেদের পরাধীন মনে করবে, তখনই বিজয়ের নতুন মাসের আগমন ঘটবে। এটি বাংলাদেশের মানুষের অটুট চরিত্র।
সাদিক মাহমুদ
সাধারন সম্পাদক,
ডিআইইউ সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ক্লাব
ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।
আমাদের প্রয়োজন একটি ন্যায়সঙ্গত সমাজ গড়া:
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা যে স্বাধীনতা অর্জন করেছি, তারপর থেকেই বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে আসছে বাংলাদেশ।
আমাদের প্রয়োজন একটি ন্যায়সঙ্গত সমাজ গড়া, যেখানে সবার অধিকার সমানভাবে রক্ষিত হবে। কিন্তু বিগত বিভিন্ন রেজিমে ক্ষমতাসীনরা ব্যক্তিগত ও দলীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়ে স্বৈরশাসন চালিয়েছে।
তবে, সম্প্রতি ছাত্র-জনতার হাত ধরে আসা নব্য স্বাধীনতা আশার সঞ্চার করেছে। তারা জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখছে। যদিও কিছু ব্যক্তি এখনো স্বার্থান্বেষী কাজ করে যাচ্ছে, তবে তরুণ প্রজন্ম তাদেরকে প্রতিরোধ করতে ঢৃড় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আমরা আশাবাদী যে, '৭১ ও '২৪ মিউচুয়াল চেতনা ধারণ করে একটি নতুন, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়া সম্ভব।
মুহতাসিম ফুয়াদ
সমন্বয়ক, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন
ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।
সম্পাদকীয় : নাহার ম্যানশন (৩য় তলা), ১৫০ মতিঝিল ঢাকা।
নিউজ ও কমার্শিয়াল : মুন কমপ্লেক্স (৩য় তলা) ৫৯/১, পাটুয়াটুলি, ঢাকা।
ই-মেইল: boishakhinews24.net@gmail.com
হট লাইন: ০১৬৮৮৫০৫৩৫৬
https://www.boishakhinews24.net/