আগামী জুলাই মাসে ‘জুলাই সনদ’ ঘোষিত হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। শুক্রবার (৬ জুন) সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আগামী জুলাই মাসেই সকল রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি ‘জুলাই সনদ’ প্রস্তুত করে আমরা জাতির সামনে উপস্থাপন করতে পারবো বলে আশা করছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব ও অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা একটি ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ দেওয়ার কথা জানিয়েছিল। তারা আমাকেও সেখানে আমন্ত্রণ জানায়।

আমি বলেছিলাম, দেশের সকল রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিসহ অন্যদের সঙ্গে নিয়ে সকলে মিলে এ ঘোষণাপত্র দেওয়া ভালো হবে। সেই প্রেক্ষিতেই আমরা ‘জুলাই সনদ’-এর প্রস্তুতি নিচ্ছি।’

তাঁর ভাষ্যমতে, এই ‘জুলাই সনদ’ একটি প্রতিশ্রুতি, যেখানে জনকল্যাণমুখী রাষ্ট্র নির্মাণের লক্ষ্যে সংস্কার কমিশনের দেওয়া প্রস্তাবগুলোর মধ্য থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যেসব বিষয়ে ঐক্যমত্য হয়েছে, তার তালিকা থাকবে। এই সনদে স্বাক্ষর করে রাজনৈতিক দলগুলো জাতির কাছে সেসব বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করবে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘জুলাই সনদ অনুযায়ী আশু করণীয় সংস্কার কাজগুলো আমরা বাস্তবায়নে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। বাকি অংশের অনেক কাজও আমরা শুরু করে যেতে চাই। আশা করি, নির্বাচনের পর নতুন সরকার বাকি কাজগুলো বাস্তবায়ন অব্যাহত রাখবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের এই দৃঢ় প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে যেতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। এই বাস্তবায়নের মাধ্যমেই বিশ্ববাসীর কাছে দেশের একটি নতুন, ঐক্যবদ্ধ ভাবমূর্তি তুলে ধরা যাবে।’

প্রধান উপদেষ্টা জানান, রাজনৈতিক ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার জন্য গঠিত ‘ঐকমত্য কমিশন’ ছিল একটি দুঃসাহসিক পদক্ষেপ। তিনি বলেন, ‘অন্য কোনো দেশে এমন উদ্যোগের নজির নেই।

এর মাধ্যমে আমরা জাতি হিসেবে রাজনৈতিক গভীরতার সন্ধান পেয়েছি। সকল দলের দলগত প্রস্তুতি, দীর্ঘ সময় ধরে আলোচনা এবং টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারিত ঐক্যমত্যের প্রয়াস—সবই আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।’

কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে ড. ইউনূস সব রাজনৈতিক দলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘তাদের সীমাহীন ধৈর্য, সহযোগিতা ও সৌজন্যের জন্য আমি জাতির পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাই। আশা করি, অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করে শিগগিরই পূর্ণাঙ্গ ‘জুলাই সনদ’ তৈরি করে জাতির জন্য একটি নতুন পথনির্দেশনা রেখে যেতে পারব।’

ভবিষ্যতের কথা উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এই কমিশনের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে দেশে নতুন একটি রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে ওঠার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। যদি আমরা এই সংস্কৃতিকে আগামী নির্বাচনের মাধ্যমে স্থায়ী রূপ দিতে পারি, তাহলে ভবিষ্যতে যেকোনো রাজনৈতিক সংকট সফলভাবে মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করে দেশের সকল মানুষের—কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণী, ছাত্র-ছাত্রী, কৃষক-জেলে, গৃহিনী, দিনমজুর, শ্রমিক, ব্যবসায়ী, পেশাজীবী, শিল্পী—সবাইকে নিয়ে একটি সুন্দর, নিখুঁত নির্বাচন আয়োজন করে আমরা নতুন বাংলাদেশের দৃঢ় ভিত্তি রচনা করব।’