বিনা মূল্যে করোনাভাইরাসের টিকা পাবে বাংলাদেশের গরিব মানুষেরা

আপডেট: October 8, 2020 |

বাংলাদেশ সরকার করোনাভাইরাসের টিকা কিনে দেশের গরিব মানুষের জন্য বিনা মূল্যে দেওয়ার চিন্তা করছে। এ ছাড়া বিশ্বের নানা দেশ ও নানা কম্পানি করোনাভাইরাস বা কভিড-১৯-এর টিকা তৈরি করলেও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডাব্লিউএইচও) স্বীকৃতিবিহীন কোনো টিকা না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ।

গতকাল বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর এই সিদ্ধান্তের কথা জানান মন্ত্রিপরিষদসচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।

ভার্চুয়াল মন্ত্রিসভা বৈঠকে গণভবন প্রান্ত থেকে প্রধানমন্ত্রী ও সচিবালয় থেকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীরা এই বৈঠকে যোগ দেন।

বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদসচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের বৈঠকের সিদ্ধান্তগুলো জানান। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, টিকার দামটা এখনো নির্ধারিত হয়নি। টিকা পেতেও আগামী বছরের মার্চ-এপ্রিল মাস লেগে যেতে পারে। তবে গরিবদের বিনা মূল্যে দেওয়ার প্রাথমিক পরিকল্পনা রয়েছে। সব কিছু নির্ভর করবে পরিস্থিতির ওপর।

মন্ত্রিপরিষদসচিব জানান, বাংলাদেশ টিকা সংগ্রহের জন্য সব প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। টিকা পাওয়ার জন্য এবারের বাজেটেই ৬০০ কোটি টাকা রাখা হয়েছে।

বিশ্বে গত ১০০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় মহামারি ডেকে এনেছে নতুন করোনাভাইরাস। বাংলাদেশে এই ভাইরাসজনিত রোগে মৃত্যুর সংখ্যা পাঁচ হাজার ছাড়িয়েছে। ১০ লাখের বেশি মানুষ করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে বিশ্বব্যাপী।

গতকালের মন্ত্রিসভা বৈঠকে কভিড-১৯-এর টিকা সংগ্রহের বিষয়ে সর্বশেষ পরিস্থিতি স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ অবহিত করে। তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হয়েছে ৪৬টি টিকার, আর প্রি-ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চলছে ৯১টির।

স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের পদক্ষেপের বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদসচিব বলেন, গত ৪ জুন যুক্তরাজ্যের উদ্যোগে লন্ডনে ‘গ্লোবাল ভ্যাকসিন সামিট-২০২০’ অনুষ্ঠিত হয়। এই সামিটে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ভিডিও বার্তা প্রেরণ করেন। বিশেষ করে গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিন অ্যান্ড ইমুনাইজেশন (গ্যাভি) পক্ষ থেকে টিকা পাওয়ার যোগ্য দেশ হিসেবে ঘোষণার যে আবেদন জানানো হয়, তা গ্রহণ করা হয়েছে। চীনের বেসরকারি কম্পানি সিনোভ্যাকের টিকার বিষয়ে তিনি বলেন, সরকারের কাছে আইসিডিডিআরবি আবেদন জানানোর পর তা অনুমোদন করা হয়েছে। এখানে সিনোভ্যাকের টিকার একটা ট্রায়ালের ব্যবস্থা করার চেষ্টা চলছে। বাংলাদেশে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ হলে টিকা কম দামে পাওয়ার সুযোগ তৈরি হবে। সেই সঙ্গে কয়েকটি ফার্মাসিউটিক্যালস কম্পানিও উৎপাদনে অংশ নেবে।

রাশিয়ার টিকার বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদসচিব বলেন, “রাশিয়ার ক্যামেলিয়া ন্যাশনাল রিসার্চ সেন্টারের এপিডেমিওলজি এবং মাইক্রোবায়োলজি ‘স্পুটনিক’ ভ্যাকসিন প্রযুক্তি বাংলাদেশে হস্তান্তরের জন্য অফার দিয়েছে। এটাও বিবেচনা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে রাশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ আছে। কিন্তু আমরা শর্ত দিয়েছি, এটার জন্য ডাব্লিউএইচওর অনুমোদন লাগবে।”

ভারতের টিকার বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদসচিব বলেন, ভারতের বায়োটেকের টিকার পরীক্ষা বাংলাদেশে করার আগ্রহ দেখিয়েছে। ৩৬ জনের প্রশিক্ষণের প্রস্তাব করেছে। অনলাইনে ওরিয়েন্টেশন এরই মধ্যে শুরু হয়েছে। ফ্রান্স ও বেলজিয়ামভিত্তিক সানোফি অ্যান্ড জিএসকে উদ্ভাবিত টিকা উৎপাদনের জন্য বাংলাদেশের দুটি ওষুধ কম্পানি আগ্রহ দেখিয়েছে বলেও জানান খন্দকার আনোয়ারুল।

৭ই মার্চ ঐতিহাসিক দিবস : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ দেওয়া ভাষণের দিনটিকে ঐতিহাসিক দিবস হিসেবে ঘোষণার প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। একই সঙ্গে দিবসটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবস উদ্যাপনসংক্রান্ত মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের জারীকৃত পরিপত্রের ‘ক’ ক্রমিকে অন্তর্ভুক্তকরণের প্রস্তাবও অনুমোদন পেয়েছে। এর আগে ২৫ ফেব্রুয়ারি ঐতিহাসিক ৭ই মার্চকে জাতীয় দিবস ঘোষণা করে গেজেট জারির নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।

লবণ আইনের খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন : ‘আয়োডিনযুক্ত লবণ আইন-২০২০’-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। সরকারের নির্ধারিত প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন ছাড়া কেউ লবণ আমদানি, গুদামজাত, ভোক্তা পর্যায়ে পাইকারি সরবরাহ, প্রক্রিয়াকরণ, পরিশোধন বা আয়োডিনযুক্ত কারখানা পরিচালনা করে অথবা এর গুণগত মান নিশ্চিত না হলে তাকে এক থেকে তিন বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার থেকে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড দেওয়া যাবে। আইনটি ভ্রাম্যমাণ আদালত আইনেও অন্তর্ভুক্ত থাকছে।

জাতীয় মান মাত্রা নির্ধারিত না হওয়া পর্যন্ত আয়োডিনযুক্ত লবণ উৎপাদনের পর্যায়ে সর্বোচ্চ ৩০ থেকে ৫০ পিপিএম এবং খুচরা পর্যায়ে ২০ থেকে ৫০ পিপিএম আয়োডিন থাকতে হবে। সরকার জাতীয় লবণ কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী লবণ পরিশোধনাগার আয়োডিনযুক্তকারী কারখানার জন্য আয়োডিনের সরবরাহ নিশ্চিত করবে। এ ছাড়া আইনে লবণ গবেষণা ইনস্টিটিউট ও লবণ প্রক্রিয়াকরণে শিল্পাঞ্চল প্রতিষ্ঠার সুযোগ রাখা হয়েছে।

 

বৈশাখী নিউজ/ফারজানা

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর