রক্ত ঝরছেই মিয়ানমারের রাজপথে

আপডেট: March 14, 2021 |

মিয়ানমারে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে আরো তিন বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছে। তিনজনই দেশটির বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গুনের বাসিন্দা। গত শুক্রবার রাতে মৃত্যু হয় তাদের। জান্তা সরকারবিরোধী বিক্ষোভে দেশটিতে এ নিয়ে অন্তত ৭০ জনের প্রাণ গেল। গ্রেপ্তারের সংখ্যা দুই হাজারের বেশি।

অং সান সু চিসহ গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তি ও গণতন্ত্রের দাবিতে এক মাসের বেশি সময় ধরে বিক্ষোভ চলছে মিয়ানমারের বিভিন্ন শহরে। বিক্ষোভের রাশ টানতে বল প্রয়োগের মাত্রা ক্রমেই বাড়াচ্ছে জান্তা সরকার। সেখানে দিনের বেলায় বিক্ষোভকারীদের ওপর চড়াও হয় পুলিশ ও সেনা সদস্যরা। আর রাতে চলে ধরপাকড়। তবে সর্বশেষ নিহত তিনজনই গুলিবিদ্ধ হয়েছে রাতে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট হওয়া এক ফুটেজে দেখা যায়, ইয়াঙ্গুনের থাকেতা শহরের তিন কিশোরকে সড়কের ওপর ফেলে পুলিশের লোকজন ব্যাপক মারধর করছে। এরপর টেনেহিঁচড়ে গাড়িতে তুলে তাদের থানার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এই দৃশ্য ক্যামেরায় ধারণ করা এক ব্যক্তি বলেন, ‘কোনো কারণ ছাড়াই পুলিশ তিনজনকে ধরে নিয়ে গেছে।’

এ ঘটনার পর স্থানীয় বাসিন্দারা পুলিশ স্টেশনের সামনে গিয়ে বিক্ষোভ করে। বিক্ষোভের এক পর্যায়ে গুলি চালায় পুলিশ। এতে ঘটনাস্থলেই দুই বিক্ষোভকারীর মৃত্যু হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘একজনের মৃত্যু হয়েছে মাথায় গুলি লেগে। আরেকজনের গাল দিয়ে ঢুকে ঘাড় দিয়ে গুলি বের হয়ে গেছে।’

স্থানীয় লোকজন জানায়, গুলিবিদ্ধ দুজনের লাশ দীর্ঘ সময় সড়কে পড়ে ছিল। পুলিশ গুলি থামানোর পর বিক্ষোভকারীরা দুজনের লাশ নিয়ে যায়। দুজনই সু চির নেতৃত্বাধীন দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) সমর্থক ছিল। তাদের একজনের নাম সি তু (৩৭)। তাঁর স্ত্রী বলেন, ‘সবাই তাঁকে ঘরের বাইরে যেতে নিষেধ করেছিল। কিন্তু তিন কিশোরকে ধরে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি তিনি মেনে নিতে পারছিলেন না।’

গত শুক্রবার রাতে আরেক বিক্ষোভকারীর মৃত্যু হয় লেইং শহরে। সেখানে রাতে টহলে যায় পুলিশ ও সেনা সদস্যরা। কিন্তু স্থানীয় লোকজন তাদের বাধা দেয়। তখন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা গুলি চালালে এক বিক্ষোভকারী নিহত হয়। নিহত ব্যক্তির নাম অং পেইং উ (১৮)। গুলিবিদ্ধ হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর মৃত্যু হয় পেইংয়ের। তাঁর ভাই ওয়াই লিন কিয়া বলেন, ‘চিকিৎসকদের খুব বেশি কিছু করার ছিল না। কারণ পেইংয়ের মাথার খুলি ফেটে গিয়েছিল।’

গত নভেম্বরের নির্বাচন নিয়ে অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন সরকারের সঙ্গে সেনাবাহিনীর টানাপড়েন চলছিল। এর মধ্যে ১ ফেব্রুয়ারি দেশটিতে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটে। গ্রেপ্তার করা হয় স্টেট কাউন্সেলর সু চি ও প্রেসিডেন্ট উইন মিন্টসহ এনএলডির শীর্ষস্থানীয় নেতাদের। জারি করা হয় এক বছরের জরুরি অবস্থা। সেনাবাহিনী প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, এক বছর পর নতুন নির্বাচন দেওয়া হবে। তবে সাধারণ মানুষ এই প্রতিশ্রুতি বিশ্বাস করছে না। সূত্র : এএফপি।

বৈশাখী নিউজজেপা

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর