মামুনুল হকসহ হেফাজতের উগ্রপন্থিরা যে কোনো সময় গ্রেপ্তার

সময়: 5:04 pm - April 7, 2021 | | পঠিত হয়েছে: 1 বার

যে কোনো সময় গ্রেপ্তার হতে পারেন হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকসহ সংগঠনটির উগ্রপন্থি নেতাকর্মীরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্বশীল সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

সূত্র জানায়, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বায়তুল মোকাররমে তাণ্ডবের ঘটনায় হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সংগঠনটির নেতা-কর্মীদের সে দিনের অবস্থান, বর্তমান অবস্থান, ঘটনার সঙ্গে তারা কতটুকু জড়িত, কার কী ভূমিকা এসব বিষয়ে পর্যালোচনা করে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। শুধু মামুনুল হক নন, তদন্তে যার সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যাবে তাকেই আইনের আওতায় আনা হবে।

এদিকে বায়তুল মোকাররমে তাণ্ডবের নির্দেশদাতা ছিলেন হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক- এমন অভিযোগে মামলা হয়েছে। মামুনুল হককে এক নম্বর ও হুকুমের আসামি করে তাকেসহ সংগঠনটির ১৭ নেতার নামে পল্টন থানায় গত সোমবার রাতে মামলা করেন যুবলীগ নেতা খন্দকার আরিফ-উজ-জামান।

মঙ্গলবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মতিঝিল জোনের উপকমিশনার সৈয়দ নূরুল ইসলাম মামলাটির তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছেন। ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষেত্রে অপরাধীদের কোনো রাজনৈতিক পরিচয়কে আমলে নেয়া হবে না বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।

সৈয়দ নূরুল ইসলাম বলেন, সবকিছু পর্যালোচনা করে যাদের বিরুদ্ধে বেআইনি কার্যকলাপের প্রমাণ মিলবে, তাদেরকেই গ্রেপ্তারসহ প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। মামলার এজাহারে যেসব আসামির নাম উল্লেখ করা হয়েছে তাদের মধ্যে কয়েকজন হেফাজতে ইসলামের নেতা। আমরা দেখব কারা ম্যাসাকার করেছে, কারা সাংঘর্ষিক অবস্থার নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাদেরকে আমরা খুঁজে বের করব। তাদের কোনো রাজনৈতিক পদ আমরা বিবেচনায় নেব না। আমরা শুধু তার অপরাধের ধরন ও মাত্রা দেখবো।

ডিসি বলেন, ‘মামলায় পেনাল কোড ও বিস্ফোরক আইনের কয়েকটি ধারায় ১৭ জন আসামি আছে, আমরা এখন তদন্ত করে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হবে তাদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসব।’

মামলার বাদী আরিফ-উজ-জামান বলেন, হেফাজতের নাশকতার বিরুদ্ধে সাধারণ মুসল্লিদের পক্ষে আমি এই মামলা করেছি।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ২৬ মার্চ বায়তুল মোকাররমে মামুনুল হকের নির্দেশে ১৭ হেফাজত নেতার নেতৃত্বে দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্রসহ দা, ছোরা, কুড়াল, কিরিচ, হাতুড়ি, তলোয়ার, লাঠিসোটাসহ অতর্কিত হামলা চালানো হয়। এ হামলায় আরিফ-উজ-জামান গুরুতর আহত হন।

এই ঘটনার পেছনে হেফাজতের সঙ্গে ‘জামায়াত-শিবির-বিএনপি জঙ্গি’ কর্মীদের জড়িত থাকার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এজাহারে হেফাজত ছাড়া অন্য কোনো দলের কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি।

মামলার অপর আসামিরা হলেন- হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা লোকমান হাবিব, যুগ্ম মহাসচিব নাসির উদ্দিন মনির, নায়েবে আমির মাওলানা বাহাউদ্দিন জাকারিয়া, মাওলানা নুরুল ইসলাম জেহাদী, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নায়েবে আমির মাজেদুর রহমান, মাওলানা হাবিবুর রহমান, মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ আইয়্যুবী, সহকারী মহাসচিব মাওলানা জসিম উদ্দিন, টঙ্গীর সহ-সাংগঠনিক মাওলানা মাসুদুল করিম, অর্থ সম্পাদক মুফতি মনির হোসাইন কাশেমী, প্রচার সম্পাদক মাওলানা যাকারিয়া নোমান ফয়েজী, মাওলানা ফয়সাল আহমেদ, সহকারী দাওয়া সম্পাদক মাওলানা মুশতাকুন্নবী, ছাত্র ও যুব সম্পাদক মাওলানা হাফেজ মো. জোবায়ের ও দপ্তর সম্পাদক মাওলানা হাফেজ মো. তৈয়ব।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরকে কেন্দ্র করে গত ৬ মার্চ বায়তুল মোকাররমে বিক্ষোভ করে হেফাজতে ইসলাম। সেদিন জুমার নামাজের পর মসজিদ থেকে বেরিয়ে আসা একদল লোক ভারত ও মোদীবিরোধী নানা স্লোগান দিতে শুরু করলে স্থানীয় ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ কর্মীদের সঙ্গে তাদের মারামারি বেধে যায়।

সংঘর্ষ থামাতে পুলিশ টিয়ার শেল, রাবার বুলেট ও জল কামান ব্যবহার করে। এ সময় মসজিদের উত্তর গেইটের সামনে রাস্তার পাশে দুটি মোটর সাইকেলে আগুন দেয় মোদীবিরোধীরা। পুলিশের দিকে বৃষ্টির মত ঢিল ছোড়ে তারা। সংঘর্ষের মধ্যে সাংবাদিক, পুলিশ, সাধারণ নাগরিকসহ অন্তত ৬০ জন আহত হন বলে পুলিশের ভাষ্য। ওই ঘটনায় ৫০০ থেকে ৬০০ জন ‘অজ্ঞাতপরিচয়’ আসামির বিরুদ্ধে পুলিশও একটি মামলা করে সেদিন রাতে।

বায়তুল মোকাররমের ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে সেদিন চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানাসহ সরকারি বেশকিছু প্রতিষ্ঠানে হামলা চালায় হেফাজতের নেতা-কর্মীরা। সেখানে পুলিশের গুলিতে মারা যায় চারজন। একই দিনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তাণ্ডব চালায় হেফাজতের নেতাকর্মীরা। সেখানে রেল স্টেশন, পানি উন্নয়ন বোর্ড, ডাক বাংলোয় আগুন ধরিয়ে দেয়। সেদিন একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়।

সংঘর্ষ হয় পরের দিনও। ২৮ মার্চ হরতাল দেয় হেফাজতে ইসলাম। সেদিন আবারো নেতাকর্মীরা ঢাকা, চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ কয়েকটি জেলায় সংঘর্ষ হয়। তিন দিনের সংঘর্ষে ১৬ জন মারা যায়। তাণ্ডবের ঘটনায় কয়েকটি মামলা হলেও সেখানে হেফাজতে ইসলামের কারো নাম উল্লেখ করা হয়নি।

বৈশাখী নিউজজেপা

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর