ছেলে হত্যার বিচার দাবীতে সংবাদ সম্মেলন করেছে মা

আপডেট: May 10, 2024 |

আসাদুর রহমান, কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি: ‘আমার একটাই বেটা। তাও চলে গেল। কি নিয়ে বাঁচব সোনা? তোমরাই বলে দাও। হে আল্লাহ তুমিই এর বিচার কইরো।’

শুক্রবার দুপুরে নিজ বাড়িতে সংবাদ সম্মেলনে বিলাপ করতে করতে কথা গুলো বলছিলেন কুমারখালীর বাগুলাট ইউনিয়নের বানিয়াখড়ি গ্রামের বৃদ্ধ নারী রোকেয়া খাতুন।

গত ৪ মে রাতে তাঁর একমাত্র সন্তান রবিউল ইসলামকে সম্পত্তির লোভে ষড়যন্ত্র করে বিষপানে হত্যার অভিযোগ উঠে স্ত্রী, তিন সন্তান ও জামাইয়ের বিরুদ্ধে।

রবিউল বাঁশগ্রাম সাব পোষ্ট অফিসের পোষ্ট মাস্টার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

এঘটনায় রবিউলের মা রোকেয়া খাতুন ৫ মে রবিউলের স্ত্রী মাহফুজা আক্তার রুলি (৪৫), স্ত্রীর বড় বোন বেলী খাতুন ( ৫৫), ছেলে বন্ধন হোসেন (২০), মেয়ে সেতু খাতুন (২৫) ও ঋতু খাতুন (১৫) এবং জামাই মিলন হোসেন (৩৩) এর বিরুদ্ধে কুমারখালী থানায় আত্মহত্যার প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে মামলা করেন।

মামলায় ঘটনার দিন রাতেই পুলিশ স্ত্রী রুলিকে গ্রেফতার করে আদালতে সোর্পদ করলে আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠিয়েছেন।

অন্যান্য আসামিরা পলাতক রয়েছে। তাঁদের গ্রেফতারে অভিযান চলমান রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

সংবাদ সম্মেলনে রোকেয়া খাতুন বলেন, প্রায় ৩০ বছর আগে বানিয়াখড়ি গ্রামের মৃত আদিল উদ্দিন শেখের মেয়ে মাহফুজা আক্তার রুলির সাথে বিয়ে দেন তার একমাত্র সন্তান রবিউল ইসলামকে।

বিয়ের পর থেকেই রুলি তার সন্তানকে শারীরিক ও মানুষিকভাবে নির্যাতন করত। দাম্পত্য জীবনে তিন সন্তান ও এক জামাই ছিল। সম্পত্তির লোভে প্রায়ই স্ত্রী, সন্তান ও জামাই রবিউলকে নির্যাতন করত।

নির্যাতনের ধারাবাহিকতায় গত ৪ মে রাত আটটার দিকে আসামিরা প্রথমে নিজবাড়ির ছাদে রবিউলকে ব্যাপক মারপিট করে। এবং পরে কীটনাশকপান করায়।

বিষপানের পর রবিউলের গোংরানি শুনে তিনি প্রতিবেশীদের সহায়তায় তার ছেলেকে উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল নিয়ে যান এবং ভর্তি করেন।

সেখানে রবিউলের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ৫ মে সকালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে ছেলের মৃত্যু হয়।

তিনি আরো বলেন, সম্পত্তির লোভে ষড়যন্ত্র করে স্ত্রী, সন্তান, জামাইসহ তাদের সহযোগীরা মিলে তার ছেলে রবিউলকে হত্যা করেছে।

মৃত্যুর আগে রবিউল তার ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাসে লিখে গেছে’ আমার মৃত্যুর জন্য দায়ী রুলি, ঋতু, বন্ধন, সেতু, মিলন, বেলি।’ তিনি আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির প্রত্যাশায় থানায় মামলা করেছেন।

জানতে চাইলে রবিউলের চাচাতো বোন ফারজানা আক্তার জানান, রবিউল ও রুলি সম্পর্কে মামাতো – ফুফাতো ভাই – বোন ছিল। তাদের মাঝে প্রেমের সম্পর্ক ছিল।

প্রায় তিন বছর প্রেমের পর ৩০ বছর আগে পারিবারিকভাবে তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই রুলি শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করত।

একপর্যায়ে ২০০১ সালে রুলি আদালতে রবিউলের বিরুদ্ধে যৌতুক ও নির্যাতনের মামলা করেছিল। কিন্তু রবিউল ও স্বজনরা চাকুরি হারানোর ভয়ে তা মিটমাট করে নিয়েছিল। তবুও নির্যাতন থামেনি।

এ ঘটনায় রবিউলের স্ত্রী জেলহাজতে এবং জামাই ও সন্তানেরা পলাতক থাকায় তাদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

এবিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা থানার উপ পরিদর্শক সুব্রত বিশ্বাস ফোনে জানান, আত্মহত্যার প্ররোচনা মামলায় স্ত্রীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

অন্যান্য আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চলমান রয়েছে। তদন্ত শেষে ঘটনার বিস্তারিত বলা যাবে।

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর