অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রত্যাহারের দাবি জানাল অ্যামনেস্টি

আপডেট: December 14, 2021 |

এই সপ্তাহে অনুষ্ঠিত গণতন্ত্র সম্মেলনের শুরুতে জো বাইডেন তাঁর অতিথিদের ‘ঐক্যবদ্ধ মূল্যবোধের পক্ষে দাঁড়ানোর’ আহ্বান জানিয়েছেন, যে মূল্যবোধের মধ্যে মুক্ত গণমাধ্যমও রয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট তাঁর গণতান্ত্রিক সংস্কারের নতুন উদ্যোগ নিয়ে গর্ববোধ করেছেন। এই উদ্যোগের মধ্যে অবাধ ও মুক্ত গণমাধ্যমকে সমর্থন দেওয়ার ব্যবস্থার কথাও উল্লেখ রয়েছে। তিনি সম্মেলনে উদ্বোধনী অধিবেশনে মুক্ত গণমাধ্যম প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘এটি গণতন্ত্রের ভিত্তি। জনগণ কিভাবে অবহিত হবে এবং সরকারগুলোকে কিভাবে জবাবদিহির মধ্যে রাখতে হবে সে কাজটি গণমাধ্যম করে। আর বিশ্বজুড়েই গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হুমকির মুখে রয়েছে।’

বাস্তবতা হলো, অস্বস্তিকর সত্যকে সামনে আনার এবং লুকিয়ে রাখা সরকারি অপরাধ প্রকাশ করায় গণমাধ্যমের ক্ষমতাকে মার্কিন সরকার নিজেই বিপন্ন করছে। গত শুক্রবার ব্রিটিশ হাইকোর্ট রায় দিয়েছেন যে জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণ করা যেতে পারে, যেখানে তাঁকে ১৭৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এই রায় তাঁর পরিবার ও বন্ধুদের জন্য শুধু বড় একটি ধাক্কাই নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রের কারাগারে তিনি না-ও বেঁচে থাকতে পারেন এই আশঙ্কাও তাদের পেয়ে বসেছে। আর যাঁরা সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষা করতে চান, এই রায় তাঁদের জন্যও একটি আঘাত।

এই রায় গত জানুয়ারিতে ব্রিটেনের একটি জেলা আদালতের রায়কে উল্টে দিয়েছে। ওই রায়ে বলা হয়েছিল, উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতাকে প্রত্যর্পণ করা যাবে না। কারণ তিনি যে মানসিক স্বাস্থ্য ও পরিস্থিতি মোকাবেলা করছেন, তাতে তিনি আত্মহত্যা করতে পারেন। পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সেই রায়টি পাল্টানোর চেষ্টায় অ্যাসাঞ্জের মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে আশ্বাস দিয়ে একটি প্যাকেজ পেশ করে, যা ব্রিটিশ উচ্চ আদালতের বিচারকরা গ্রহণ করেন। অথচ সত্যটা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র তাঁকে ‘সর্বোচ্চ নিরাপত্তা কেন্দ্রে’ কিংবা বিশেষ প্রশাসনিক ব্যবস্থার অধীনে রাখার অধিকার সংরক্ষণ করে, যার মধ্যে দীর্ঘ সময় ধরে নির্জন কারাবাসের বিষয়টিও রয়েছে। আর এটা করা হবে তাঁর আচরণের ওপর ভিত্তি করে। এরপর তাঁর পক্ষে আপিল করা হবে এবং বছরের পর বছর ধরে আইনি প্রক্রিয়া চলতে পারে।

ঘটনার মূল কেন্দ্রে নজর পড়েছে। অ্যাসাঞ্জের সুস্থতা সত্ত্বেও তাঁর প্রত্যর্পণ যুক্তরাষ্ট্রের দাবি করা উচিত নয় এবং যুক্তরাজ্যেরও এটি মঞ্জুর করা উচিত নয়। তাঁর বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তি আইনের অধীনে অভিযোগ আনা হয়েছে, যার মধ্যে সংবেদনশীল নথি (ক্লাসিফাই ম্যাটেরিয়াল) প্রকাশের বিষয় রয়েছে। ৪৯ বছর বয়সী এই ব্যক্তির বিরুদ্ধে এই মামলা আফগানিস্তান ও ইরাক যুদ্ধ সম্পর্কে কয়েক হাজার নথি এবং কূটনৈতিক তারবার্তা ফাঁস হওয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত, যা উইকিলিকসের মাধ্যমে দ্য গার্ডিয়ান ও অন্যান্য গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান জনসমক্ষে প্রকাশ করেছে। তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য সরকারের চালানো ভয়াবহ নির্যাতনের তথ্য প্রকাশ করেছে, যা অন্য কোনোভাবে প্রকাশ্যে আসত না।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাগনেস ক্যালামারড যেমন বলেছেন, ‘আফগানিস্তান ও ইরাক যুদ্ধের সময় সংঘটিত মার্কিন যুদ্ধাপরাধের অভিযোগের জন্য বলতে গেলে কাউকেই দায়ী করা হয়নি। মামলার সম্ভাবনা ক্ষীণ, তবু এমন একজন প্রকাশককে সম্ভবত জীবনভর কারাভোগ করতে হবে, যিনি এ ধরনের অপরাধগুলো প্রকাশ্যে এনেছেন।’

গুপ্তচরবৃত্তি আইনে জনস্বার্থ সুরক্ষার সুযোগ নেই। যুক্তরাষ্ট্রের অধিকার কর্মীরা সতর্ক করেছেন যে এই অবস্থান দেশটির প্রথম সংশোধনীর ওপর সরাসরি আঘাত। আর অ্যাসাঞ্জকে যদি প্রত্যর্পণ করা হয়, তাহলে অন্য প্রকাশকরাও একই ধরনের ঝুঁকির মধ্যে পড়বেন। অথচ যেসব অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে আনা হয়েছে, তা সংঘটনের সময় তিনি যুক্তরাষ্ট্রেই অবস্থান করেননি।

এই সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র ক্রমবর্ধমান কর্তৃত্ববাদী বিশ্বে নিজেকে গণতন্ত্রের আলোকবর্তিকা হিসেবে ঘোষণা করেছে। এখন বাইডেন যদি সরকারগুলোকে জবাবদিহি করার জন্য গণমাধ্যমের ক্ষমতা রক্ষার ব্যাপারে আন্তরিক হন, তাহলে তাঁর উচিত অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রত্যাহারের মধ্য দিয়ে সেই কাজটি শুরু করা।

সূত্র : সম্পাদকীয়, দ্য গার্ডিয়ান (যুক্তরাজ্য)

বৈশাখী নিউজ/ ইডি

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর