নিজের অর্জন মানবসেবায় উজাড় করার আহ্বান আইজিইউ চ্যান্সেলরের

একজন ব্যক্তি অনেক জ্ঞান আহরণ করেছে। কিন্তু সে মানুষের জন্য কিছুই করেনি। তারপর সে মারা গেল। তার এই জ্ঞান সমাজের কোন কাজে আসলো না। তাই নিজের সকল অর্জন মানব সেবায় উজাড় করে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ইনোভেটিভ গ্লোবাল ইউনিভার্সিটির চ্যান্সেলর ইঞ্জিনিয়ার আবুবকর হানিপ।

বুধবার (১৫ ডিসেম্বর) রাজধানীর ধানমণ্ডির একটি রেস্টুরেন্টে এক অনুষ্ঠানে তিনি উপস্থিত অতিথিদের উদ্দেশে এ পরামর্শ দেন।

এ সময় তিনি বলেন, মানবতার জন্য কাজ করতে হবে। নিজের জ্ঞান অন্যদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে। যাতে করে অন্যরা নিয়ে মানবতার সেবায় কাজ করতে পারে।

তেমনি পিপলএনটেক তৈরি হয়েছিল বাংলাদেশের জন্য কিছু করার প্রচেষ্টায়। এই প্রতিষ্ঠানের জন্য এ পর্যন্ত প্রায় ৭ হাজার বাংলাদেশি উপকৃত হয়েছে আমেরিকাতে এসে। তাদের আজ অড জব করতে হচ্ছে না। অনেকে বাংলাদেশে বসেই কাজ করছে। যারা কিনা ১০-১৫ হাজার টাকায় বেতন পেত না। তারাই আজ লক্ষ লক্ষ টাকা বেতনে কাজ করছে। এমনকি তারা এখন আমাদের অন্য শিক্ষার্থীদেরও হায়ার করছে কাজের জন্য। এটাই আমাদের সব থেকে বড় পাওয়া। আমি বেঁচে থাকার কারণে কত গুলো মানুষ উপকৃত হচ্ছে। সেটি আমাদের মিশন ও ভিশন। আমরা কাজ করবো, অর্থ আয় করবো, আর সেই কাজ যদি সমাজের সমস্যা গুলো সমাধান করে তাহলেই আমি সফল।

নিজের অর্জন মানবসেবায় উজাড় করার আহ্বান আইজিইউ চ্যান্সেলরের

আবুবকর হানিপ এ সময় স্কিল ডেভালপমেন্টে গুরুত্বারোপ করে বলেন, আমেরিকাতে যখন কেউ ব্যাচেলর করে তখন এন্টি লেভেলের জব খোঁজে। যেখানে তাদের প্রত্যাশা থাকে ৪০-৫০ হাজার ডলার বেতনের। কিন্তু যখন তারা এর চেয়ে দিগুন বেতনে চাকরি পায়। তখন এর পিছনে যে ভূমিকা থাকে সেটাই স্কিল ডেভালপমেন্ট। পিপলএনটেক একটি স্কিল ডেভালপমেন্ট সেন্টার। প্রতিষ্ঠানটি মানুষকে উপকার করে।

তিনি বলেন, আমি এ পর্যন্ত প্রায় ৭ হাজার শিক্ষার্থীকে মেইন স্টিম চাকরি দিয়েছি। এর মধ্যে অনেকেই ছিল ব্যাচেলর ডিগ্রি করা অনেক নামি দামি ইউনিভার্সিটি থেকে পাশ করা। কিন্তু দেখেছি স্কিল ডেভালপ করতে এসে আমাদের প্রশিক্ষণের ফি দেওয়ার ক্ষমতা নেই। তখন আমরা তাদের ব্যাপক স্কলারশিপ দেই। ৪/৫ মাস কোর্স করার পরে তারা যখন ১ লক্ষ ডলারের চাকরি পায়। তখন তাদের যেই আনন্দ। সেই আনন্দ আমাকে আজ এই জায়গায় নিয়ে এসেছে।

বাইরে থেকে প্রতি বছর প্রায় ৮৫ হাজার স্কিলড পিপলকে নিয়ে যাওয়া হয় আমেরিকাতে। অথচ আমেরিকার সিটিজেন এবং গ্রিনকার্ড হোল্ডার ব্যাচেলর/ মাস্টার্স করা তারাও এন্টি লেভেলের জব খোঁজে। তার মানে এখানেও প্রকাশ পাচ্ছে স্কিল গ্যাপের বিষয়টি।

তাই আমার পিপলএনটেকের যে ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা আছে। সেটা যদি আইজিইউ’র শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে কাজে লাগাই তাহলে ব্যাচেলর করার পরে তাদের আর স্কিল এর গ্যাপটা থাকছে না।

আইগ্লোবাল ইউনিভার্সিটির নিয়ম হল ফ্যাকাল্টিকে স্কলার হতে হবে। ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কে তার কমপক্ষে ৪ অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। তা না হলে প্রফেসর হতে পারবে না। আমাদের এখানে ৪-৩০ বছরের অভিজ্ঞ শিক্ষক রয়েছে। আই গ্লোবাল ইউনিভার্সিটি প্রথম যারা শিক্ষার্থীদের ১০০ ভাগ চাকরির নিশ্চয়তা দিচ্ছে। এমবিএ ইন প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্টে পুরো আমেরিকার মধ্যে প্রথম হয়েছে আইজিইউ। কারণ আমরা এখানে রিয়েল লাইফ শিখিয়েছি। আমি বলব ব্যাচেলর মাস্টার্স শেষে আমরা ৬ মাস থেকে ১ বছর ট্রেনিং না নিয়ে আগেই এডুকেশনের সাথে মার্জ করে ফেলি।

এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য প্রফেসর ডঃ সাজ্জাদ হোসেন বলেন, আমি নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে করছি। কেননা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন জাতীর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের হাতে গড়া। পৃথিবীতে এমন কোন নেতা নেই যিনি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সমান তালে এগিয়ে যেতে পারে।

তিনি আরও বলেন, পিপলএনটেক যে মানব সম্পদ তৈরি করেছে। আমরা বলছি বিলিয়ন ডলার আমেরিকাতে পাঠাচ্ছি। আমরা শিক্ষা দিচ্ছি মানবিকতার। আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মত একজন নেতৃত্ব পেয়ে সত্যি ভাগ্যবান। তিনি ১০ লক্ষ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছেন। পৃথিবীর মহাদুর্যোগে এই ঘনবসতিপূর্ণ দেশের জনগন আমেরিকার মত বিচলিত হয়নি। আমাদের দেশের তারুণ্যেকে বলবো নিজেকে তৈরি কর। এক সময় আমেরিকানরা এসে বাংলাদেশে পরে থাকবে। আমাদের কেউ দাবিয়ে রাখতে পারবে না। বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকীতে সেই প্রতিজ্ঞাই আমরা করব।

অনুষ্ঠানে আহসানিয়া মিশনের উপদেষ্টা আনিসুর কবির জাসির সকলকে বিজয়ের ৫০ বছর পূর্তির শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, পিপলএনটেকের হাত ধরেই আমেরিকাতে এখন অনেক আইটি ট্রেনিং সেন্টার তৈরি হয়েছে। কিন্তু পিপলএনটেকের লেভেলে এখন পর্যন্ত কেউ উঠতে পারেনি। আমি আশা করবো আগামী বিজয়ের ১০০ বছর পূর্তিতে দেশ এবং বিশ্বে পিপলএনটেক এক উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসেবে জ্বলজ্বল করবে।

সিটিও ফোরামের সভাপতি তপন কান্তি সরকার বলেন, আমাদের সিটিও ফোরাম অনেক আইটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করেছে। কিন্তু পিপলএনটেকের মত দক্ষতা এখনও দেখিনি। প্রায় সাড়ে ৭ হাজার বাংলাদেশিকে আমেরিকায় চাকরি দিয়ে পিপলএনটেক একটি ছোট বাংলাদেশ সেখানে তৈরি করেছে। সেটা দেখে আমি নিজেই খুব গর্বিত।

অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন, পিপলএনটেকের উপদেষ্টা আবুল হাসান মিয়াজী ও পিপলএন টেকের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাসরুল খানসহ প্রমুখ।