পপসম্রাট আজম খানের ৭২তম জন্মবার্ষিকী আজ

আপডেট: February 28, 2022 |

অসংখ্য গানের স্রষ্টা আজম খানের আজ ৭২তম জন্মবার্ষিকী। তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা, এটা গর্ব করেই বলতেন।

১৯৫০ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকার আজিমপুরে তার জন্ম। পপসম্রাট দীর্ঘদিন মরণব্যাধি ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করে ২০১১ সালের ৫ জুন ঢাকাস্থ সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। ‘একাত্তরের দিনগুলি’ গ্রন্থে শহীদ জননী জাহানারা ইমাম লিখেছেন, ‘২০শে আগস্ট, ১৯৭১ একটা তাবুতে আলো জ্বলছে, আর সেখান থেকে ভেসে আসছে গানের সুর: হিমালয় থেকে সুন্দরবন হঠাৎ বাংলাদেশ- বুঝলাম আজম খান গাইছে। আজম খানের সুন্দর গলা। আবার অন্যদিকে ভীষণ সাহসী গেরিলা, দুর্ধর্ষ যোদ্ধা।’ এই কটি লাইনই বলে দেয় মুক্তিযুদ্ধে আজম খানের সম্পৃক্ততার কথা।

মুক্তিযুদ্ধে রয়েছে আজম খানের গৌরবময় ইতিহাস। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানকালে আজম খান পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। তখন তিনি ক্রান্তি শিল্পী গোষ্ঠীর সক্রিয় সদস্য ছিলেন এবং পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর শোষণের বিরুদ্ধে গণসংগীত প্রচার করেন। ১৯৭১ সালে আজম খানের বাবা আফতাব উদ্দিন খান সচিবালয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে ছিলেন। বাবার অনুপ্রেরণায় যুদ্ধে যাবার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন তিনি। যুদ্ধ শুরু হলে, তিনি পায়ে হেঁটে আগরতলা চলে যান। আজম খান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন ২১ বছর বয়সে। কুমিল্লার সালদায় প্রথম সরাসরি যুদ্ধ করেন।

তার পড়ালেখা শুরু ১৯৫৫ সালে আজিমপুরের ঢাকেশ্বরী স্কুলে। ১৯৫৬ সালে তার বাবা কমলাপুরে বাড়ি বানান। এরপর থেকে সেখানে বসতি তাদের। এসে ভর্তি হন কমলাপুরের প্রভেনশিয়াল স্কুলে প্রাইমারিতে। ১৯৬৫ সালে সিদ্ধেশ্বরী হাইস্কুলে। এই স্কুল থেকে এসএসসি পাসের পর ১৯৭০ সালে টি অ্যান্ড টি কলেজ থেকে এইচএসসি সম্পন্ন করেন। মুক্তিযুদ্ধের আবহে পড়ালেখা ওই পর্যন্তই থেমে যায় তার। আর অগ্রসর হতে পারেননি।

স্বাধীনতার পর সংগীতে পপশিল্পী হিসেবে তিনি হঠাৎ করেই যেন ঝড়ের মতো আবির্ভূত হন। ১৯৭১ সালের পর তার ব্যান্ড ‘উচ্চারণ’ এবং আখন্দ (লাকী আখন্দ ও হ্যাপী আখন্দ) ভাতৃদ্বয় দেশব্যাপী সংগীতের জগতে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। ১৯৭২ সালে বিটিভিতে ‘এতো সুন্দর দুনিয়ায় কিছুই রবে না রে’ ও ‘চার কালেমা সাক্ষী দেবে’ গান দু’টির প্রচার তাকে তুমুল জনপ্রিয়তা এনে দেয়। এরপর ‘রেললাইনের ওই বস্তিতে’ গানটি গেয়ে রীতিমতো হইচই ফেলে দেন। ‘ওরে সালেকা ওরে মালেকা’, ‘আসি আসি বলে তুমি আর এলে না’, ‘আলাল ও দুলাল’, ‘হারিয়ে গেছে খুঁজে পাব না’ এমন অনেক গানে গানে তিনি শ্রোতাদের মাতিয়ে তোলেন। যা তখন মানুষের মুখে মুখে ফিরতো।

সৌখিনতার শেষ ছিল না আজম খানের। ১৯৯১-২০০০ সালে তিনি গোপীবাগ ফ্রেন্ডস ক্লাবের পক্ষ হয়ে প্রথম বিভাগে ক্রিকেট খেলতেন। তিনি ‘গডফাদার’ নামে একটি বাংলা সিনেমায় ভিলেনের ভূমিকায় অভিনয় করেন। তিনি বেশ কিছু বিজ্ঞাপনচিত্রে মডেল হিসেবে কাজ করেন।

বৈশাখী নিউজ/ এপি

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর