মুকিত পরিবারের জামায়াত সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ তদন্তে আ.লীগের কমিটি গঠন

গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের নতুন সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান মুকিতের পরিবারের বিরুদ্ধে ‘জামায়াতে ইসলামী সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে কেন্দ্রের নির্দেশে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের অনুমোদনে গত ১৩ মার্চ পলাশবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের পাঁচ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়।

ওই কমিটিতে সভাপতি পদে শামিকুল ইসলাম লিপন, সহ সভাপতি সাইফুল্লাহ রহমান চৌধুরী তোতা, সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম মণ্ডল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম বাবু, সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান মুকিতের নাম ঘোষণা করা হয়।

কমিটি ঘোষণার পর পলাশবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংস্কৃতিক সম্পাদক মো. আমিনুল ইসলাম কেন্দ্রে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেন।

তাতে বলা হয়, “মুকিত এর আগে পলাশবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের কোনো কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। এমনকি তার বাবা জামায়াতে ইসলামীর গাইবান্ধা জেলা শাখার ভারপ্রাপ্ত আমির এবং পলাশবাড়ী উপজেলা শাখার সভাপতি ছিলেন। মুকিতের মা পলাশবাড়ী সরকারি কলেজের ১৯৯২-১৯৯৩ সালে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে প্রকাশ্যে ছাত্র শিবিরে ভোট প্রার্থনা করেছিলেন।”

পাশাপাশি নতুন কমিটির সহ সভাপতি সাইফুল্লাহ রহমান চৌধুরী তোতাসহ বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতার মুকিতকে সাংগঠনিক সম্পাদক করায় প্রতিবাদ করেন।

এ পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রের নির্দেশে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি করেছে গাইবান্ধা জেলা আওয়ামী লীগ।

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সৈয়দ সামস-উল আলম হীরু ও সাধারণ সম্পাদক আবু বকর সিদ্দিক স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ তদ্ন্ত কমিটি করা হয়।

চিটিতে বলা হয়, পলাশবাড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান মুকিতের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার সম্পর্কে কিছু আপত্তিকর বক্তব্য ও পরিবারের পিতা মাতা জামায়াত ইসলামের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত মর্কে প্রকাশিত হয়েছে। বিষয়টি নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে সত্যাসত্য নিরুপণের জন্য কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নির্দেশে ৫(পাঁচ) সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হইল।

তদন্ত কমিটিতে আহ্বায়ক হিসেবে আছেন, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সুলতান আলী মন্ডল, সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব আলম কোর্ট, সাংগঠনিক সম্পাদক পিয়ারুল ইসলাম, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক জরিদুল হক, দপ্তর সম্পাদক সাইফুল আলম সাকা।

আগামী ৩০ এপ্রিলের মধ্যে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি/ সম্পাদকের বরাবরে দাখিলের জন্য অনুরোধ করা হয় ওই চিঠিতে।

তদন্ত কমিটিতে আহ্বায়ক জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সুলতান আলী মন্ডল বলেন, “জেলা আওয়ামী লীগ পলাশবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের নতুন সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান মুকিতের বিরুদ্ধে ‘জামায়াতে ইসলামী সংশ্লিষ্টতার অভিযোগের তদন্তের জন্য আমাকে প্রধান করে একটি কমিটি করেছে। আমরা ইতো মধ্যে সবাই বসেছি। আগামি কাল পলাশবাড়ি এলাকায় যাবো, পুরানো আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে কথা বলবো, আশা করি তদন্ত রিপোর্টে প্রকৃত ঘটনা আমরা তুলে ধরতে পারবো।

“যদিও ঈদের কারণে আমরা একটু বেশি সময়ের জন্য আবেদন করবো। এই সমস্ত ঘটনা উদঘাটন করা আসলেই জরুরি।

কেন্দ্রে অভিযোগ দেয়ায় হুমকী: থানায় ডায়েরি

পলাশবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের নতুন সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান মুকিতের বিরুদ্ধে ‘জামায়াতে ইসলামী সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ কেন্দ্রে জমা দেওয়ার পর থেকে নানা ভাবে হত্যার হুমকী পলাশবাড়ি থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংস্কৃতিক সম্পাদক মো. আমিনুল ইসলাম।

তিনি বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের অভিভাবক, আমি উনার কাছে এবং আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে অভিযোগ দিয়েছি। অভিযোগ দেয়ার পর থেকে আমাকে নানাভাবে হুমকী দেয়া হচ্ছে। তার বন্ধুবান্ধব, আশপাশের লোকজন দিয়ে সরাসরি রাস্তাঘাট, বাজার, দোকানপাটে বিভিন্ন ভাবে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। তার অনুসারি কিছু লোক সরাসরি আমাকে প্রাণনাশের হুমকীও দিয়েছে। এই মর্মে আমি পলাশবাড়ি থানায় জিডি করেছি।”

সাধারণ ডায়েরির বিষয়ে পলাশবাড়ি থানার ওসি মাসুদ রানা বলেন, “একটি সাধারণ জায়েরি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংস্কৃতিক সম্পাদক মো. আমিনুল ইসলাম করেছেন। তবে সেখানে সরাসরি কে বা কারা হুমকী দিচ্ছে সেটা উল্লেখ্য করেনি। জিডিতে বলেছে পলাশবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের নতুন সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান মুকিতের আশপাশের লোকজন হুমকী দিচ্ছে।”