বাংলাদেশের প্রথম তৃতীয় লিঙ্গের জনপ্রতিনিধি পিংকি

আপডেট: January 24, 2023 |

টিপু সুলতান ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার অসহায় মানুষের পাশে যে মানুষটি সর্বক্ষণ নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন তিনি হচ্ছেন উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান তৃতীয় লিঙ্গের পিংকি খাতুন।

তিনি এ পর্যন্ত পরিষদ থেকে সন্মানী ভাতা বাবদ যত টাকা পেয়েছেন তা খরচ করেছেন অসহায় মানুষের পিছনে। তিনি ২০১৯ সালের ১৪ অক্টোবর উপজেলা নির্বাচনে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হন।

পিংকি খাতুনই বাংলাদেশের সর্ব প্রথম তৃতীয় লিঙ্গের জনপ্রতিনিধি। দেশের অবহেলিত একটি গোষ্ঠী থেকে উঠে আসা পিংকি খাতুন এখন এলাকায় মানবতার ফেরিওয়ালা হিসেবে পরিচিত।

জনপ্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে এলাকার দুস্থ অসহায় মানুষের পাশে আছেন সর্বক্ষণ। তাছাড়াও কোটচাঁদপুর যুব মহিলা লীগের উপজেলা সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।

এ মানুষটিকে নিয়ে খোঁজ খবর নেওয়া হয়। এ সময় উপজেলার বলুহর ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর গ্রামের নুরুল ইসলাম বলেন- উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পিংকি খাতুনের অসহায় মানুষের জন্য কতটা দরদ তা বলে শেষ করা যাবে না।

তিনি অসুস্থ অসহায় মানুষের জন্য প্রতিদিনই প্রায় হাজার হাজার টাকা খরচ করে থাকেন। দোড়া ইউনিয়নের রুদ্রপুর গ্রামের জামে মসজিদের সভাপতি রায়হান উদ্দিন বলেন- পিংকি খাতুনের মতো এমন জনপ্রতিনিধি সব জায়গাতে থাকলে দেশটা আরো সুন্দর হতো।

তিনি বলেন – পিংকি খাতুন শুধু অসহায় মানুষের সাহায্য করেন এমন নয়, এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্টান এতিমখানা মসজিদ মন্দিরেও নিজ অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করে থাকেন। তিনি বলেন- আমাদের এই মসজিদের ছাঁদ ঢালায়ের জন্য নিজ অর্থে ৫৪ বস্তা সিমেন্ট দিয়েছেন।

সাবদারপুর ইউনিয়নের মহিলা মেম্বার ফিরোজা খাতুন জানান- পিংকি খাতুন তার পরিষদের সন্মানী ভাতা’র টাকা নিজের জন্য খরচ করেন না। ওই অর্থ ব্যয় করে থাকেন অসহায় মানুষের জন্য। এছাড়াও উপজেলার শিশু ও উঠতি বয়সি যুবকদের মাঝে খেলার সামগ্রী বিতরণ এবং তাদের খেলার মাঠ পরিচর্যার জন্য নিজ অর্থ ব্যায় করে থাকেন।

ষেন উঠতি বয়সি যুবকেরা বিপথে না যায়। কোটচাঁদপুর উপজেলার বলুহর ইউনিয়নের পোড়ামারী মহা শ্মশানে সভাপতি শিক্ষক ও সিনিয়র সাংবাদিক বিমল ভৌমিক বলেন- পিংকী খাতুন পোড়ামারী মহা শ্মশানের উন্নয়নের কাজের জন্য প্রায় ১গাড়ী ইটের টাকা দিয়ে দিয়েছেন।

তিনি বলেন- আমাদের এখনকার মন্দিরসহ উপজেলার প্রতিটি মন্দিরে পূজা উপলক্ষে নিজ অর্থ থেকে অনুদান দেন উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পিংকী খাতুন।

এ বিষয়ে পিংকি খাতুন বলেন- আমার মা-বাবা নেই। তারা মারা গেছেন। এলাকার সাধারণ মানুষই আমার মা-বাবা, আমার সবকিছু। সে কারণে তাদের পাশে থাকতে পারলে আমার ভালো লাগে। আর তাই উপজেলা পরিষদ থেকে আমার প্রাপ্য সন্মানী ভাতা বাবদ যে টাকাগুলি পাই সমস্ত টাকা আমি তাদেরই পিছনে খরচ করি। একটি টাকাও আমি নিজ প্রয়োজনে খরচ করি না।

কারণ এ সকল অসহায় মানুষের বিপদ দেখলে আমি স্থির থাকতে পারি না। উপজেলার এ সকল মানুষের ভালবাসায় আজ আমি উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান। পিংকি খাতুন বলেন- আমি নিজেই একজন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ।

আমি বুঝি তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের মনে যে কি কষ্ট। তাই তারা যাতে সমাজে মাথা উচুঁ করে বাঁচতে পারে সে বিষয় নিয়েও কাজ করে যাচ্ছি।

তিনি আরো বলেন- এছাড়াও তিনজন প্রতিবন্ধী, একটি মা হারা দুগ্ধজাত শিশু’র সম্পূর্ণ দায়িত্ব আমি নিয়েছি। এদের খরচ আমি আমার সম্পদ থেকে পাওয়া অর্থ থেকে করে থাকি। এ সকল অসহায় মানুষের জন্য আমি আরো কিছু করতে চাই। কিন্তু আমার সাধ আছে সাধ্যে নাই।

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর