পুকুর পাড়ে মিশ্র ফল চাষে বদলে গেছে কবিরের জীবন

আপডেট: January 25, 2023 |

টিপু সুলতান ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: পুকুর পাড়ের পতিত জমিতে মিশ্র ফলের চাষ করে সফল কৃষি উদ্যোক্তা কবির হোসেন। মাছ চাষের পাশাপাশি পুকুর পাড়ে করেছেন চায়না ও দার্জিলিং কমলা, মাল্টা, পেয়ারা, ড্রাগন এবং পেপের চাষ। ফলন ভালো হওয়ায় ঝিনাইদহের পাশাপাশি অন্য জেলাতেও বাজারজাত করা হচ্ছে।

একইসঙ্গে মাছ চাষ ও বিভিন্ন ফলের এসব বাগান দেখতে প্রতিদিন ভিড় করছেন শতশত মানুষ। মহেশপুর উপজেলার করিঞ্চা গ্রামে দেখা যায় সারি সারি গাছের সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে ঝুলছে সবুজ ও হলুদ রঙের কমলা ও মাল্টা।

কাচা অবস্থায় গাঢ় সবুজ ও পেকে ধারণ করেছে গাঢ় হলুদ রঙ। গাছভর্তি এমন ফল বাগানের সৌন্দর্য বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তার স্বপ্ন যেন দোল খাচ্ছে।

পুকুর পাড়ে মিশ্র ফলের আবাদ করে নিজে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি ৩০ থেকে ৩৫ জনের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন। তার এমন ব্যতিক্রমী চাষে আগ্রহী হয়ে অনেকেই ঝুঁকছেন এমন চাষে। জানা যায়, ১০০ বিঘা জমিতে ১৬টি পুকুরে রয়েছে।

যেখানে চাষ করা হচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। এছাড়া পুকুর পাড়ে রয়েছে সাড়ে ৭৫০টি মাল্টা, ২ হাজার ৫০০ ড্রাগন, ৫০০ পেপে, ৩০০ চায়না কমলা ও ১০০টি দার্জিলিং কমলার গাছ। এসব ফল বিক্রি করে প্রতি মাসে তার আয় কয়েক লাখ টাকা।ওই গ্রামের কৃষক আবুল কালাম বিশ্বাস জানান, তিনি প্রতিদিন পুকুর পাড়ে ঘাস কাটতে আসেন।

এর আগে কখনো পুকুর পাড়ে এত ফল দেখেননি। পুকুর পাড়ে একসঙ্গে কমলা, মাল্টা, পেপে, ড্রাগন, পেয়ারা ফলের চাষ দেখে তিনি রীতিমতো অবাক।

পুকুরের পাহারাদার রেজাউল ইসলাম জানান, তিনি দীর্ঘদিন ধরে এই পুকুর এবং বিল পাহারার কাজ করছেন। এর আগেও এখানে অনেকেই মাছ চাষ করতে এসেছেন।

তখন পাড়ে কিছুই হত না বা কেউ এই ধরনের উদ্যোগ গ্রহন করেননি। কিন্তু কবির হোসেন ইজারা নেওয়ার পর থেকেই পুকুর পাড়ে মিশ্র ফলের চাষ করছেন।

এখন পুকুর পাড়গুলো দেখতেও অনেক ভালো লাগে আবার অনেক লোক ঘুরতে আসছেন। আশা করি কবির হোসেন অনেক লাভবান হবেন।পুকুর প্রজেক্টর ম্যানেজার মুক্তার আলী জানান, এর আগে তিনি তিনটি প্রতিষ্টানে কাজ করেছেন।

কিন্তু কোথাও মাছ চাষের পাশাপশি পুকুর পাড়ে এভাবে মাল্টা, চায়না কমলা, ড্রাগনসহ বিভিন্ন ফলের চাষ করতে দেখেননি। এখন এই পুকুর পাড়ে ও বিলে ঘুরতে এবং ফলের বাগান দেখতে প্রতিদিন শতশত মানুষ আসছে বলেও জানান তিনি।

উদ্যোক্তা কবির হোসেন বলেন, কৃষিকে আরও সমৃদ্ধ করতেই এমন উদ্যোগ। আগামীতে কৃষি থেকেই সর্বোচ্চ অর্থ আয় হবে বলে আমার প্রত্যাশা। ৬ বছরের জন্য সরকার থেকে লিজ নিয়ে মাছ চাষ শুরু করি।

প্রথমে অনেকটাই অগোছালো ছিল। তাই চিন্তা করি পাড়ে এত জায়গা পড়ে আছে, এই জায়গায় এমন কিছু করে দেখাব যা দেখে আরও অনেকেই উদ্বুদ্ধ হবে। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে চায়না কমলা, মাল্টা বরি-১, দার্জিলিং কমলার চারা রোপণ করি।

বর্তমানে চায়না কমলার বাম্বার ফলন হয়েছে। এখন অনেকেই দেখতে আসছে। আবার অনেকেই আমার দেখাদেখি এই চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন।

পাশাপাশি অনেক মানুষ আসার কারণে জায়গাটি অনেকটা পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। আমার ইচ্ছা এখানে মাছ, ফলের বাগান এবং পাশের উকড়ির বিল সমন্বয় করে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার।

ঝিনাইদহ কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আজগর আলী বলেন, পতিত জমিতে চাষ করতে উদ্বুদ্ধের পাশাপাশি সকল ধরনের সহযোগিতা করছে কৃষি বিভাগ।

কবির হোসেনের পুকুর পাড়ের মাটি এঁটেল মাটি এবং কমলা চাষের জন্য উপযোগি হওয়ায় তিনি কমলা চাষ করতে পারছেন। কমলার শেকড় অনেক গভীরে যায়। যার কারণে একবার পানি দিলে অনেক দিন পানি না দিলেও কোনো সমস্যা হয় না।

আর এঁটেল মাটিতে সবমসয় সেচ দেওয়া লাগে না। পুকুর পাড়ে কমলা চাষ করায় গাছের শেকড়ে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি থাকে। যে কারণে ভালো মানের ফল উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে।

আর উৎপাদন খরচ বলতে তেমন খরচ নেই। শুধু প্রথমে চারা রোপণ করার জন্য যে টাকা খরচ হয়েছে। জৈব সার ব্যবহার করেই তিনি এই ফলন পাচ্ছেন। এই ধরনের চাষ আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করছি।

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর