ঈদের নামাজ যেভাবে পড়বেন

সময়: 10:19 pm - April 21, 2023 | | পঠিত হয়েছে: 4 বার

ঈদের নামাজ দুই রাকাত। বিধানগত দিক থেকে ওয়াজিব। ঈদের নামাজের পদ্ধতি প্রতিদিনের নামাজ থেকে একটু ব্যতিক্রম। এই নামাজে আজান ইকামত নেই। রয়েছে অতিরিক্ত ছয়টি তাকবির। এই তাকবিরগুলো আদায়ের জন্য রয়েছে নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম। যেহেতু বছরে দুইবার ঈদের নামাজ পড়া হয়, তাই অনেকেই নিয়মগুলো ভুলে যান।

প্রথমত কথা হলো ঈদের নামাজের নিয়ত নিয়ে। অনেকের ধারণা, নিয়ত আরবিতে করা জরুরি। এমনটি ঠিক নয়। যে কোনো ভাষাতেই নিয়ত করা যায়। নিয়ত মনে মনে করাই যথেষ্ট। তবে কারো যদি এমন হয়, নিয়ত মুখে উচ্চারণ ছাড়া মনে স্থির হয় না, তাহলে নিয়তের শব্দগুলো মুখেও উচ্চারণ করতে পারবে। (ফাতহুল কাদির ১/২৬৬)

নিয়তের জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, ঈদের দিন ইমামের পেছনে কেবলামুখী দাঁড়িয়ে মনে মনে এই নিয়ত করে নেয়া, আমি অতিরিক্ত ছয় তাকবিরসহ এই ইমামের পেছনে ঈদুল ফিতরের দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ আদায় করছি।

এরপর ইমাম সাহেবের তাকবির বলার সঙ্গে সঙ্গে উভয় হাত কান বরাবর উঠিয়ে ‘আল্লাহু আকবার’ বলে হাত বেঁধে নেয়া। হাত বাঁধার পর ছানা অর্থাৎ ‘সুবহানাকা আল্লাহুম্মা’ শেষ পর্যন্ত পড়া। এরপর আল্লাহু আকবার বলে হাত কান পর্যন্ত উঠিয়ে ছেড়ে দেয়া। দ্বিতীয়বারও একই নিয়মে তাকবির বলে হাত ছেড়ে দেয়া। ইমাম সাহেব তৃতীয়বার তাকবির বলে হাত বেঁধে আউজুবিল্লাহ ও বিসমিল্লাহ পড়ে সুরা ফাতিহার সঙ্গে অন্য যে কোনো সুরা তিলাওয়াত করবেন। এ সময় মুক্তাদিরা নীরবে দাঁড়িয়ে তিলাওয়াত শুনবেন। এরপর ইমাম সাহেব নিয়মমতো রুকু-সিজদা করে দ্বিতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়াবেন। মুক্তাদিরা ইমাম সাহেবের অনুসরণ করবেন।

দ্বিতীয় রাকাতে ইমাম সাহেব প্রথমে সুরা ফাতিহার সঙ্গে অন্য সুরা পড়বেন। এরপর আগের মতো তিন তাকবির বলতে হবে। প্রতি তাকবিরের সময়ই উভয় হাত কান পর্যন্ত উঠিয়ে ছেড়ে দিতে হবে। চতুর্থ তাকবির বলে হাত না উঠিয়েই রুকুতে চলে যেতে হবে। এরপর অন্যান্য নামাজের নিয়মেই নামাজ শেষ করে সালাম ফেরাতে হবে।

কেউ যদি ঈদের নামাজে প্রথম রাকাতের কেরাত অবস্থায় শরিক হয় তাহলে তাকবিরে তাহরিমার পর নিজে নিজে হাত তুলে অতিরিক্ত তিন তাকবির বলবে। অতঃপর বাকি নামাজ যথানিয়মে ইমামের সঙ্গে আদায় করবে। (তাতারখানিয়া ২/৬১৯)

আর যদি কেউ প্রথম রাকাতে রুকুর পূর্বে জামাতে শরিক হয় এবং তাকবিরে তাহরিমার পর দাঁড়ানো অবস্থায় হাত তুলে অতিরিক্ত তিন তাকবির বলার সুযোগ না পায় তাহলে রুকুতে গিয় অতিরিক্ত তিন তাকবির বলবে। তবে সেক্ষেত্রে কান পর্যন্ত হাত উঠাবে না। (দুররুল মুখতার ১/২৭৪)

কারো যদি প্রথম রাকাত ছুটে যায় তাহলে ইমামের সালাম ফিরানোর পর দাঁড়িয়ে প্রথমে সুরা-কেরাত পড়বে। অতঃপর রুকুর পূর্বে তিন বার হাত তুলে তিন তাকবির দেবে। তারপর রুকুর তাকবির বলে রুকু সিজদা করে যথানিয়মে নামাজ শেষ করবে। (রদ্দুল মুহতার: ২/১৭৪)

কেউ যদি তাশাহহুদ (বৈঠক) অবস্থায় জামাতে শরিক হয় তাহলে তার নামাজও সহিহ হবে। এক্ষেত্রে ইমামের সালামের পর দাঁড়িয়ে স্বাভাবিক নিয়মেই দুই রাকাত নামাজ পড়বে। অর্থাৎ প্রথম রাকাতের শুরুতেই অতিরিক্ত তাকবিরগুলো বলে নিবে। অতঃপর সুরা-কেরাত পড়বে। আর দ্বিতীয় রাকাতে কেরাতের পর রুকুর আগে অতিরিক্ত তাকবিরগুলো বলবে। (খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২১৫)

ঈদের নামাজ শেষে ইমাম সাহেব খুতবা পাঠ করবেন। ইমাম সাহেবের জন্য এটা সুন্নত। জুমার খুতবার মতো এই খুতবা শোনা মুসল্লিদের জন্য ওয়াজিব। খুতবার সময় কথাবার্তা বলা, চলাফেলা করা, নামাজ পড়া সম্পূর্ণরূপে হারাম। (রদ্দুল মুহতার ১/৫৫৯)

কারও ঈদের নামাজ ছুটে গেলে কিংবা যে কোনো কারণে নামাজ নষ্ট হয়ে গেলে পুনরায় একাকী তা আদায় বা কাজা করার সুযোগ নেই। বরঞ্চ এমন লোক বাড়ি গিয়ে দুই চার রাকাত নফল নামাজ পড়ে নিবে। তবে একাধিক লোকের ঈদের নামাজ ছুটে গেলে তারা আলাদা জামাত করতে পারবে।

নামাজ আদায় করতে হয় গভীর একাগ্রতায়। কিন্তু ঈদের নামাজে অনেক মানুষের একাগ্রতায় কমতি হয়ে যায়। এর বিশেষ কারণ হলো, ঈদের নামাজের অতিরিক্ত ছয় তাকবিরের সময় মানুষ দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে যায় এই ভেবে, প্রতিবার তাকবির বলার পর হাত বেঁধে ফেলবে নাকি ছেড়ে দিবে? এজন্য মানুষ খেয়াল করে তার পাশের নামাজি কী করছে? হাত বেঁধে ফেলছে নাকি ছেড়ে দিচ্ছে? যদি অতিরিক্ত ছয় তাকবির আদায়ের নিয়ম জানা থাকে তাহলে ওই সময়টুকুতে আশপাশের নামাজিদের প্রতি মনোযোগ দিতে হবে না। বরং মহান আল্লাহর প্রতি খেয়াল রেখে গভীর একাগ্রতায় নামাজ আদায় করা যাবে। তাই অতিরিক্ত ছয় তাকবির আদায়ের নিয়ম সকলের জেনে রাখা কাম্য।

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর