স‍্যান্ডউইচের মধ‍্যে অ্যাভোকাডো: অভিনেতা আফজাল হোসেন

আপডেট: August 31, 2025 |
inbound3861068346096020682
print news

মোহাম্মদ রেজাউল করিম, স্টাফ রিপোর্টারঃ আহা! যদি ফলটা আমাদের দেশে পাওয়া যেতো!  একটি বিদেশী ফলের প্রেমে পড়ে অভিনেতা আফজাল হোসেনের লেখা ফেসবুক স্ট্যাটাসটি পড়ে আমি বিমোহিত। তাঁর এই লিখনিতে ফুটে উঠেছে স্বদেশ প্রেমের এক অপরূপ মনছবি। আমাদের পাঠকদের মন ভারতে লেখাটি হুবহু তুলে ধরা হলো।

পান্থ পথে মাদল নামে একটা দোকান আছে। সেখান থেকে আমি মুড়ি কিনি, মোয়া, পাটালি গুড় কিনি। গজা, কদমা, কটকটি, তিলের খাজা এসব ছোটবেলাকার  প্রিয় খাবার হঠাৎ যদি খেতে মন চায়, কিনতে চলে যাই মাদলে।

আর একটা অতি দরকারি পন‍্য- ত্রিফলার গুঁড়ো কিনতেও প্রায়ই যেতে হয় সেখানে। সামান্য ত্রিফলার গুঁড়ো বিক্রি করে কী আর এমন লাভ হয়- তবুও মানুষের উপকার হবে বলে- তা সেখানটায় থাকে। থাকে তাই আমাদের দরকারও মেটে।

পাহাড় থেকে সেখানে মাঝে মাঝে বিভিন্ন প্রকারের ফল, সব্জি ইত‍্যাদিও আসে। একদিন শুনি, মাঝে মাঝে এ‍্যাভোকাডো ফলও পাওয়া যায়। শুনে অবাক হই, খাওয়ার আগ্রহ জাগে- বলে আসি, ফলটা এলে আমাকে যেনো জানানো হয়।

আমি গ্রামের ছেলে। শহরে এসে অনেক অনেক বছর কাটানোর পর পনির নামে একটা খাদ‍্য আছে জানতে পারি। খাওয়ার অভ‍্যাস ছিলো না, এখন প্রিয় হয়ে উঠেছে।

বছর পাঁচেক আগে বিদেশে গিয়ে এক রেস্টুরেন্টে স‍্যান্ডউইচের মধ‍্যে এ‍্যাভোকাডো খেয়ে খুব মজা পেয়েছিলাম। মনে হয়েছিলো, আহা! যদি ফলটা আমাদের দেশে পাওয়া যেতো!

আমরা দেশে ড্রাগনফ্রুট পেতে শুরু করলাম। নতুনের প্রতি মানুষের আকর্ষণ, কিছুই অসম্ভব নয়- এমন বিবেচনা করার মানুষ আছে বলে দেশ অনেককিছু পায়। মানুষের এরকম উদ্যোগ, চেষ্টা খুব উল্লেখযোগ্য বলে আমরা কী বিবেচনা করি?

কিছুদিন আগে একটা মেলায় গিয়ে দেখি, আধুনিক কালের মেয়েরা শাড়ির রূপ বদলে দিয়েছে। দেখেছি, হাতে তৈরি করছে দেশীয় উপকরণ দিয়ে নতুন ভাবনার গহনা, হাতব‍্যাগ, মেয়েদের পোশাক, পান্জাবি ইত্যাদি বহুরকমের আকর্ষণীয় পণ‍্য। অবাক হয়ে দেখেছি- কপালে পরার সামান্য টিপ- তাও কত অসামান‍্য রূপে দেখা যায়, বানানো যায়, তা নিয়েও ভাবে মানুষ। করে দেখাচ্ছেও।

এসব নিশ্চয়ই অসাধারণ চেষ্টা। প্রচলিতের বদলে মানুষকে নতুন কিছু উপহার দিতে চাওয়া- সৃষ্টির নেশায় করা। এসব কাজ বেশ পরিশ্রমের  কিন্তু খুব অর্থকরি নয়।

তবুও জীবন নিয়ে কিছু মানুষের গৌরববোধ আছে, সুন্দর ও সৃষ্টিশীলতার ঝোঁক থাকে- তাই বহু সুন্দরের সাথে মানুষের সাক্ষাৎ ঘটে, জীবন এবং বেঁচে থাকাকে অপরূপ মনে হয়।

মাদল থেকে মেহেদী ফোন করেছিল, এ‍্যাভোকাডো এসেছে। দেরি না করে নিয়ে এসেছি। ফেরার পথে এই ফল যে চাষ করেছে, সেই অচেনা মানুষটার প্রতি মনে মনে সালাম ঠুকি। গৌরববোধ হয়, এরকম অসাধারণ মানুষ এ দেশের আনাচে কানাচে অনেক আছে।

কোন গ্রামের কোন সাধারণ মানুষ এ দেশের নয়, এমন একটা উন্নতমানের ফল দেশের মাটিতে হওয়ানোর জন্য রক্ত ঘাম একাকার করে ফেলছে- এটাই নির্ভেজাল দেশপ্রেম।

যে দেশপ্রেম দেখানোর বিষয় নয়। যে দেশপ্রেমের  প্রমান দিতে মানুষকে খাটো করতে হয় না, হিংসা বিদ্বেষ, নোংরামো বা অসভ‍্যতা ছড়াতে হয় না।

দেশের এমন মানুষেরাই প্রকৃত পূণ‍্যবান কিন্তু তারা মূল‍্যবান হয়ে ওঠে না।  মূল‍্যবান হিসাবে বিবেচনা করি তাদের, যারা স্বপ্নহীন- রোজই অক্লান্তভাবে যারা সুখ শান্তির কবর রচনা করে চলেছে।

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর