‘স্বামীর’ দেয়া আগুনে দগ্ধ জান্নাতির মৃত্যু, গ্রেফতার হয়নি হত্যাকারীরা

আপডেট: June 11, 2019 |

 

নরসিংদীর হাজিপুরে দশম শ্রেণির ছাত্রী ও গৃহবধূ জান্নাতি আক্তারকে (১৬) কেরোসিন ঢেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনার পৌনে দুই মাস পার হলেও থানায় মামলা হয়নি। পরে আদালতে মামলা করলেও তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়নি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। থানায় মামলা না হওয়ায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে স্কুলছাত্রীর হত্যাকারীরা। সেই সঙ্গে খুনিদের অব্যাহত হুমকির মুখে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন নিহত স্কুলছাত্রীর পরিবারের সদস্যরা। আর খুনিরা প্রভাবশালী হওয়ায় এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে।

পুলিশ ও নিহতের পরিবার সূত্রে জানা যায়, প্রায় এক বছর আগে নরসিংদী সদর উপজেলার হাজিপুর গ্রামের শরীফুল ইসলাম খানের মেয়ে জান্নাতি আক্তারের সঙ্গে খাচেরচর গ্রামের হুমায়ুন মিয়ার ছেলে শিপলু মিয়ার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। কিছুদিন পর পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়ে পালিয়ে বিয়ে করেন তারা। বিয়ের কিছুদিন যেতে না যেতেই স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির লোকের আসল রূপ সামনে চলে আসে। তারা জান্নাতিকে মাদক ব্যবসায় সম্পৃক্ত করতে চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। কিন্তু এতে জান্নাতি রাজি না হওয়ায় তার ওপর নেমে আসে অমানুষিক নির্যাতন। এরই মধ্যে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের পক্ষ থেকে পাঁচ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করা হয়। জান্নাতির দারিদ্র্য বাবা যৌতুকের দাবি পূরণ করতে পারেনি। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে তারা জান্নাতির ওপর নির্যাতন বাড়িয়ে দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় যৌতুকের টাকা না দেয়া ও মাদক ব্যবসায় জড়িত না হওয়ায় ২১ এপ্রিল রাতে স্বামী শিপলু, শাশুড়ি শান্তি বেগম ও তার মেয়ে ফাল্গুনী বেগম ঘুমন্ত অবস্থায় জান্নাতির শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেন। দগ্ধ হয়ে ছটফট করলেও তাকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেনি। পরে এলাকাবাসীর চাপে জান্নাতিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। দীর্ঘ ৪০ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে ৩০ মে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জান্নাতির মৃত্যু হয়।

নিহত জান্নাতির বাবা শরীফুল ইসলাম খান বলেন, মেয়ের শরীরে আগুন দেয়ার পরপরই থানায় মামলা করতে যাই। কিন্তু পুলিশ মামলা নেয়নি। পরে আদালতে মামলা করি। আদালত থেকে পিবিআইকে মামলাটি তদন্তের নির্দেশ দিলেও তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেনি।
এ অবস্থায় খুনিরা আমাদের পরিবারকে ভয়ভীতি ও হুমকি দিচ্ছে অভিযোগ করে শরীফুল ইসলাম আরও বলেন, মামলা করলে আমার ছোট মেয়েকে তুলে নিয়ে যাবে। একই সঙ্গে আমাদের সবাইকে মেরে ফেলা হবে বলে হুমকি দেয় তারা।

ঢাকায় ফেরি করে চা বিক্রি করেন নিহত জান্নাতির বাবা শরীফুল ইসলাম খান। দুই ছেলে ও দুই মেয়ে নিয়ে হাজিপুর গ্রামের একটি কুটিরে বসবাস করছেন। মুক্তিযোদ্ধা পিতার ভাতা ও চা বিক্রির টাকায় চলে তাদের সংসার।

নিহত জান্নাতির মা হাজেরা বেগম বলেন, মেয়েটাকে ফুসলিয়ে নিয়ে যায় তারা। যখন ভুল বুঝতে পেরেছে তখন মেয়ে আমাদের বাড়ি চলে আসে। কিন্তু শ্বশুরবাড়ির লোকজন জোর করে তাকে নিয়ে যায়। আমরা গরিব, তাই বাধা দিয়ে রাখতে পারিনি। জান্নাতির শ্বশুরবাড়ির লোকজন চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। তারা পুলিশ ও আইনকে তোয়াক্কা করে না। তাদের বিরুদ্ধে ১০-১২টি মামলা আছে। পুলিশের সঙ্গে সখ্য আছে তাদের। তাই আমাদের মামলা নেয়নি পুলিশ।

অবশ্য মৃত্যুর আগে আগুন দিয়ে পোড়ানোর ঘটনার বর্ণনা দিয়ে গেছেন জান্নাতি। তার বর্ণনায় কেঁপে উঠেছিল সবার বুক। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন পাশের বেডে থাকা এক রোগী জান্নাতির ভয়ঙ্কর বর্ণনার ভিডিও ধারণ করেছেন। ভিডিওতে দেখা যায়, মৃত্যুর যন্ত্রণায় ছটফট করছেন জান্নাতি। তীব্র ব্যথা সইতে না পেরে বাবার কাছে ব্যথানাশক একটি ইনজেকশন দেয়ার দাবি করেন। জান্নাতি বলেছিল, তোমার কাছে জীবনে আর কিছুই চাইব না বাবা। একটা ব্যথানাশক ইনজেকশন দাও। কিন্তু দরিদ্র বাবা ওই ইনজেকশন কিনে দিতে পারেননি। ভুল বুঝতে পেরে নিজের কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চেয়ে গেছেন জান্নাতি।

জান্নাতির বাবা শরীফুল ইসলাম খান বলেন, মৃত্যুর আগে মেয়ে যে ইনজেকশন চেয়েছিল তার দাম সাত হাজার টাকা। আরেকটির দাম ৩ হাজার ৮০০ টাকা। আমি গরিব মানুষ, চা বিক্রেতা। এত টাকা কোথায় পাব। তাই মেয়ের শেষ ইচ্ছা পূরণ করতে পারিনি। ধারদেনা ও ঋণ নিয়ে যতদিন ওষুধ দিতে পেরেছি ততদিন বেঁচে ছিল জান্নাতি। এরপর আর মেয়েকে বাঁচাতে পারিনি। এখন শুধু একটাই দাবি, মেয়ের হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই।

নিহত জান্নতির দাদা বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম খান বলেন, জীবন দিয়ে মাদককে না করে গেছেন দগ্ধ জান্নাতি। প্রেমের টানে ঘর ছাড়লেও যৌতুক ও মাদক ব্যবসার কাছে নতি স্বীকার করেননি। শ্বশুর বাড়ির কঠোর নির্যাতন সইতে সইতে ভুলের মাসুল দিয়ে চলে গেলেন না ফেরার দেশে। মাদক ব্যবসায়ী স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির লোকজনের কঠোর বিচার চাই। জান্নাতির মতো করুন পরিণতি যেন কারো না হয়।

বাদীপক্ষের আইনজীবী ফয়সাল সরকার বলেন, ফেনীর নুসরাত হত্যাকাণ্ডের মতো নরসিংদীতে জান্নাতি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। অথচ চাঞ্চল্যকর জান্নাতি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মামলা নেয়নি পুলিশ। বাধ্য হয়ে আদালতে যাই। আদালত ৭ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বললেও পিবিআই ও পুলিশ তা দেয়নি। তাই মামলার কার্যক্রমে বিলম্ব হচ্ছে। আসামিদের গ্রেফতার করেনি পুলিশ।

নরসিংদীর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পুলিশ সুপার এআরএম আলিব বলেন, সিআর মামলা তদন্ত করতে একটু সময় লাগে। তার ওপর এটি হত্যা মামলা। ঘটনাটি অনেক বড়। তাই স্বচ্ছ ও ঘটনার সঠিক চিত্র তুলে আনতে সময় লাগছে। ইতোমধ্যে প্রাথমিক তদন্তে জান্নাতির গায়ে আগুন দেয়া ও পরে হত্যার ঘটনার সত্যতা পেয়েছি আমরা। আরও কিছু বিষয় আছে, সেগুলো শেষ হলে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে।

আসামিদের গ্রেফতারের বিষয়ে পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার এআরএম আলিব বলেন, সিআর মামলায় পিবিআইয়ের হাতে আসামি গ্রেফতারের বিধান নেই। তবে আদালত ওয়ারেন্ট জারি করলে আসামিকে গ্রেফতার করতে পারি আমরাবাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ম্যাচ পরিত্যক্ত
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচটির জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় ছিলেন বাংলাদেশের ক্রিকেট সমর্থকরা। সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান কিংবা র‌্যাংকিং সব জায়গাতেই বাংলাদেশ এগিয়ে, তাই পূর্ণ ২ পয়েন্ট পাওয়ার আশা ছিল।

বৃষ্টি সে আশা পূরণ হতে দিল না। ব্রিস্টলে ম্যাচের আগে থেকেই বৃষ্টি ছিল, সেটা থামেনি। গুঁড়ি গুঁড়ি পড়ছেই। আম্পায়াররা দুই দফা মাঠ পরিদর্শন করেও ইতিবাচক সিদ্ধান্ত জানাতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত ঘোষণা এলো- ম্যাচ পরিত্যক্ত।

জিতলে ২ পয়েন্ট। এই ম্যাচটি পরিত্যক্ত হওয়ায় পয়েন্ট ভাগাভাগি করতে হলো দুই দলকে। অর্থাৎ বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা দুই দলই পেয়েছে ১ পয়েন্ট করে।

আদতে এই জায়গায় লঙ্কানদের চেয়ে বাংলাদেশই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলা যায়। খেলা হলে টাইগাররা জিততই, এমনটা হয়তো নিশ্চিত ছিল না। কিন্তু ম্যাচটা পরিত্যক্ত হওয়ায় সেমিফাইনালে যাওয়ার পথটা অনেকটাই সংকীর্ণ হয়ে গেল।

কেননা এই ম্যাচে পূর্ণ ২ পয়েন্ট ধরেই শক্তিমত্তায় এগিয়ে থাকা দলগুলোর বিপক্ষে দু-একটি জয়ের হিসাব কষছিল বাংলাদেশ দল। সেখানে একটি পয়েন্ট হারিয়ে এখন কিছুটা বিপদে পড়ে গেল মাশরাফি বাহিনী।

৪ ম্যাচে ১ জয়, ২ হার আর একটি পরিত্যক্ত ম্যাচের পয়েন্ট নিয়ে বাংলাদেশের সংগ্রহ এখন ৩ পয়েন্ট। দশ দলের মধ্যে তাদের অবস্থান সাত নাম্বারে।

বাংলাদেশের ম্যাচ বাকি ওয়েস্ট ইন্ডিজ, অস্ট্রেলিয়া, আফগানিস্তান, ভারত আর পাকিস্তানের বিপক্ষে। সেমিফাইনালের দৌড়ে থাকতে হলে এই পাঁচ দলের বিপক্ষে কমপক্ষে চারটি জয় পেতে হবে। হিসাবটা বেশ কঠিনই হয়ে গেল!

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর