খোকসায় চোর সন্দেহে একজনকে ২০ আঙ্গুল ভেঙ্গে দিলো গ্রামবাসী

আপডেট: February 20, 2024 |

আসাদুর রহমান, খোকসা কুষ্টিয়া প্রতিনিধি: চোর সন্দেহে আটক যুবককে রক্তাক্ত আহত অবস্থায় একটি মন্দিরের সামনে ফেলে গেলো দুই দল গ্রামবাসী।

হাতুর ও লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে তার হাত-পায়ের ২০টি আঙ্গুল ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে। সাত ঘন্টা পর আহত ওই যুবককে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

চোর সন্দেহে আটকের পর নির্যাতনের শিকার যুবকের নাম সুমন (৩০)। সে পাবনা জেলার বেড়া থানার সিংহাসন গ্রামের রেজাউল প্রামানিকের ছেলে।

মঙ্গলবার সকালে তাকে কুষ্টিয়া জেলার খোকসা উপজেলার শিমুলিয়া ইউনিয়নের ২ নন্বর ওয়ার্ডের জেলেপাড়া কালীবাড়ির মাঠ থেকে উদ্ধার করা হয়।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গ্রামবাসী সূত্রে জানা গেছে, সোমবার দিনগত গভীর রাতে রাজবাড়ী জেলার পাংশার মাছপাড়া ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ফরিদ মন্ডলের মুদি ও রাসায়নিক সারের দোকানে চুরি করার চেষ্টা কালে গ্রামবাসীরা চোরদের ধাওয়া করে।

এক পর্যায়ে খোকসা ও পাংশার সীমান্তবর্তী এলাকায় চোর চক্রের সদস্য সুমনকে গ্রামবাসী আটক করে। আটক সুমনের কাছ থেকে স্বীকার উক্তি আদায়ের জন্য গ্রামবাসী তার উপর শারীরিক নির্যাতন চালায়।

গভীর রাতে খোকসার শিমুলিয়া গ্রামের লোকেরা চোরকে নিয়ন্ত্রনে নেয়। তারাও গরু চুরির স্বীকার উক্তি আদায়ের চেষ্টা করে।

এক পর্যায়ে রাত ৩টার দিকে আটক যুবক জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। ভোরের আলো ফোটার আগেই চোর সন্দেহে আটক সুমনকে শিমুলিয়া কালীবাড়ির সামনে ফেলে রেখে গ্রামবাসীরা চলে যায়।

মঙ্গলবার সকাল ১০ টার দিকে একজন গ্রাম পুলিশ রক্তাক্ত আহত যুবককে উদ্ধার করে খোকসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।

বিকালে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত আহত যুবক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি ছিল।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগে চিকিৎসাধীন আহত সুমন দাবি করেন, সে পাংশা উপজেলার কালীতলা গ্রামে বেড়াতে আসেছিল।

বিকালে ঘুড়তে বেড়িয়ে গ্রামারে পথ হারিয়ে ফেলে। রাতে পথ চেনানোর জন্য ওই দোকারনীর ঘরের কড়া নাড়লে তাকে চোর সন্দেহে তাড়া করে গ্রামবাসী।

আটকের পর লোহার রড় ও হাতুর দিয়ে পিটিয়ে তার হাত পায়ের ২০টি আঙ্গুল ভেঙ্গে ও ফাটিয়ে দিয়েছে। সারা রাত তার উপর নির্যাতন চালানো হয়।

হামলাকারীদের কাছে সে অনেক বার বাঁচার আকুতি করেছে কিন্তু কেউ তাকে রক্ষায় এগিয়ে আসেনি। সোমবার রাত ৩টা থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত তাকে রক্তাক্ত আহত অবস্থায় খোলা আকাশের নিচে একটি মাঠে ফেলে রাখা হয়।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগে কর্তব্যরত মেডিকেল অফিসার ইফাত জাহান তনুজা জানান, আহত রোগীর হাত-পায়ের অধিকাংশ আঙ্গুল ফাটা। রক্ত ঝড়ছিল। এক্স করতে বলা হয়েছে। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ভর্তি রাখা হয়েছে।

মুদি দোকানি ফরিদ মন্ডলের সাথে কথা বলার জন্য পাংশার গাঁড়াল গ্রামে তার বাড়িতে যাওয়া হয়। তিনি বাড়ি ছিলেন না।

তবে তার মা আম্বিয়া বলেন, তার ছেলে চোরদের দেখে চিৎকার দিলে গ্রামবাসী এগিয়ে এসে এক চোরকে আটক করে। আর একজন স্যান্ডেল ফেলে পালিয়ে যায়। পরে গ্রামবাসী চোরকে মেরে ছেড়ে দিয়েছে।

পাংশার মাছপাড়া ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বর নিজাম আলী মন্ডল জানান, রাতে গ্রামের লোক চোর ধরে ছিল শুনেছেন। এর বেশী আর কিছু জানেন না।

খোকসার শিমুলিয়া ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বর সিরাজ জানান, রাত ৩ টার দিকে মোবাইল ফোনে চোর ধরার ও মারার খবর পান। চোরকে প্রথমে রাজবাড়ি পাংশার লোকজন ধরে।

পরে শিমুলিয়া গ্রামের লোকেরা গরু চুরির সন্দেহে তাকে কজ্বায় নেন। দুই পক্ষের নির্যাতনে চোর জ্ঞান হারিয়ে ফেললে দুই দল গ্রামবাসী তাকে একটি মাঠের পাশে ফেলে চলে যায়।

তিনি আর ভয়ে সেখানে যাননি। সকালে থানা পুলিশের নির্দেশে স্থানীয় গ্রাম পুলিশ ওই চোরকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেছে। তিনি এর বেশী খোজ করেন নি।

শিমুলিয়া ইউনিয়নের গ্রাম পুলিশ শ্যামল কুমার দাস জানান, চোর সন্দেহে যুবকে আটক করে পাংশার লোক। রাতে তাদের কাছ থেকে খোকসার লোকেরা নিয়ে নেয়।

তারাই তাকে মারপিট করে কালীবাড়ি মাঠে ফেলে যায়। তিনি এই খবর শুনে থানা পুলিশের একজন দারোগার সাথে যোগাযোগ করেন। তার নির্দেশে আহত ব্যক্তিকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন।

শিমুলিয়া ইউনিয়ন বিট পুলিশের দায়িত্বে থানা পুলিশের এস আই মশিউর রহমানের সাথে কথা বলা হলে তিনি জানান, গ্রাম পুলিশ একজনকে উদ্ধার করেছে তিনি শুনেছেন।

এ ব্যাপারে থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সাথে কথা বলার জন্য বলেন।

থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আননুর জায়েদ বলেন, কেউতো দায় স্বীকার করতে চায় না। বিষয়টি দেখা হচ্ছে বলেও জানান।

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর