ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের ইচ্ছাকৃতভাবে অনাহারে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করেছে : জাতিসংঘ

আপডেট: February 28, 2024 |

 

ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের ইচ্ছাকৃতভাবে অনাহারে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করেছে বলে অভিযোগ তুলেছেন জাতিসংঘের বিশেষ র‍্যাপোর্টিয়ার মাইকেল ফাখরি। তিনি বলেন, এই ইচ্ছাকৃত অপরাধের জন্য ইসরায়েলকে যুদ্ধাপরাধ ও গণহত্যার দায়ে জবাবদিহির আওতায় আনা উচিত। গতকাল মঙ্গলবার ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানকে একথা বলেছেন তিনি।

ফাখরি বলেন, ইসরায়েল ইচ্ছাকৃতভাবে গাজাবাসীদের খাবার সরবরাহ নষ্ট করছে এবং অবরুদ্ধ অঞ্চলটিতে খাদ্য সহায়তা প্রবেশে বাধা দিচ্ছে। দেশটি গত বছরের অক্টোবরে শুরু হওয়া সংঘাতের একদম শুরু থেকেই এমনটা করছে। তাদের এই ইচ্ছাকৃতভাবে বেসামরিক নাগরিককে খাদ্য থেকে বঞ্চিত করা যুদ্ধাপরাধ।

তিনি বলেন, মূলত আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গঠনের লক্ষ্যে স্বাক্ষরিত রোম চুক্তি অনুসারে এই বাধা দেয়া যুদ্ধাপরাধ। ওই চুক্তিতে বলা হয়েছে, ‘ইচ্ছাকৃতভাবে ত্রাণ সরবরাহে বাধা প্রদানসহ তা বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য রসদ থেকে মানুষকে বঞ্চিত করা’ যুদ্ধাপরাধের শামিল। সুতরাং ইসরায়েল যা করছে তা স্পষ্টতই যুদ্ধাপরাধ।

বিশ্বের একাধিক মানবাধিকার সংগঠন অভিযোগ করেছে, ইসরায়েল গাজায় যুদ্ধ পরিচালনার সময় ইচ্ছাকৃতভাবে গাজাবাসীকে ক্ষুধার্ত রাখার কৌশল নিয়েছে। দেশটি এই বিষয়টিকে একটি অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদও ২০১৮ সালে এ ধরনের কর্মকাণ্ডকে যুদ্ধাপরাধ বলে ঘোষণা করেছে।

জাতিসংঘের এই কর্মকর্তা বলেছেন, গাজায় ত্রাণ প্রবেশে বাঁধা, গাজাবাসীর মাছ ধরার ছোট নৌকা আটক, তাদের বাগানগুলোকে ধ্বংস করার ঘটনা স্থানীয়দের খাবার থেকে বঞ্চিত করার উদ্দেশ্যে ছাড়া আর কিছুই নয়। তার কথায়, ‘ইসরায়েল ফিলিস্তিনি জনগণকে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে কেবল ফিলিস্তিনি হওয়ার জন্য ধ্বংস করার অভিপ্রায় ঘোষণা করেছে।’

মাইকেল ফাখরি বলেন, গাজার বর্তমান পরিস্থিতি স্পষ্টত ‘গণহত্যা’ এবং কেবল কোনো ব্যক্তি বা সরকার নয়, সমগ্র ইসরায়েল এ জন্য ‘অপরাধী’ এবং তাদের জবাবদিহির আওতায় আনা উচিত। তিনি বলেন, ‘ইসরায়েল শুধু বেসামরিক মানুষকেই টার্গেট করছে না, তারা তাদের সন্তানদের ক্ষতি করে ফিলিস্তিনি জনগণের ভবিষ্যৎ নষ্ট করার চেষ্টা করছে।’

জাতিসংঘের এই কর্মকর্তা সেসব দেশেরও তীব্র সমালোচনা করেছেন, যারা ফিলিস্তিনিদের জন্য জাতিসংঘের ত্রাণ ও কর্মসংস্থান সংস্থায় (ইউএনআরডব্লিউএ) তহবিল কমিয়ে দিয়েছে।

গতবছরের ৭ অক্টোবরে হামাসের হামলার সঙ্গে ইউএনআরডব্লিউএ’র ১২ জন কর্মী জড়িত থাকার ইসরায়েলি দাবির পর সংস্থাটিতে তহবিল দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, ইতালি, কানাডাসহ বেশ কয়েকটি দেশ। ইউএনআরডব্লিউএ অধিকৃত ফিলিস্তিনি অঞ্চল ও মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে প্রায় ৬০ লাখ ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তুদের খাবার, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও অন্যান্য মৌলিক পরিষেবা সরবরাহ করে থাকে।

মাইকেল ফাখরি বলেন, ‘কিছু সংখ্যক কর্মীর বিরুদ্ধে অপ্রমাণিত দাবির ভিত্তিতে তাৎক্ষণিভাবে একযোগে একাধিক দেশের ইউএনআরডব্লিউএ’র জন্য তাহবিল বন্ধ করার পদক্ষেপ নেওয়ার পেছনে ফিলিস্তিনিদের সম্মিলিতভাবে শাস্তি ছাড়া অন্য কোনো উদ্দেশ্য নেই। যেসব দেশ এই লাইফলাইন প্রত্যাহার করেছে তারা নিঃসন্দেহে ফিলিস্তিনিদের অনাহারে থাকার ঘটনায় জড়িত।’

জাতিসংঘের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘ইসরায়েল দাবি করবে যুদ্ধাপরাধের ব্যতিক্রম আছে। কিন্তু গণহত্যার কোনো ব্যতিক্রম নেই এবং কেন ইসরায়েল বেসামরিক অবকাঠামো, খাদ্য ব্যবস্থা, মানবিক কর্মীদের ধ্বংস করছে এবং শিশুদের অপুষ্টি ও দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করছে তা নিয়ে কোনো যুক্তি নেই। গণহত্যার অভিযোগ পুরো রাষ্ট্রকে দায়ী করে।’

এদিকে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাবিষয়ক সংস্থার (ওসিএইচএ) উপপ্রধান রমেশ রাজাসিংঘাম জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে গতকাল বলেছেন, ‘ফেব্রুয়ারির শেষ সময়ে এসে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, গাজার জনসংখ্যার এক চতুর্থাংশ, পাঁচ লাখ ৭৬ হাজার মানুষ দুর্ভিক্ষ থেকে মাত্র এক কদম দূরে।’ একই সঙ্গে তিনি সতর্ক করে বলেছেন, কোনও ধরনের পদক্ষেপ নেয়া না হলে গাজায় দুর্ভিক্ষ ‘অনিবার্য’।

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর