যুক্তরাষ্ট্রের বিমানকর্মীর মৃত্যুতে শোক জানাতে ওয়াশিংটন ডিসিতে মানুষের ভিড়

আপডেট: February 28, 2024 |

 

যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে ইসরায়েলি দূতাবাসের সামনে শত শত মানুষ সমবেত হয়ে বিমানকর্মীর মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন। গাজায় চলমান যুদ্ধের প্রতিবাদে ওয়াশিংটনে অবস্থিত ইসরায়েলি দূতাবাসের বাইরে নিজের গায়ে আগুন দেওয়া মার্কিন বিমানবাহিনীর সেই সদস্য মারা যান ঘটনার রাতেই। অনেকেই আশা করেছিলেন, ২৫ বছর বয়সী অ্যারন বুশনেলের মৃত্যুর পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনর যুদ্ধের প্রতি অটল সমর্থনে পরিবর্তন আসবে। তেমন কিছু্ই হয়নি।

লিয়া নামের একজন ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত আমেরিকান এসেছিলেন শোক জানাতে। তিনি আনাদোলু নিউজ এজেন্সিকে বলেছেন, “যারা ফিলিস্তিনের সঙ্গে তাদের সংহতি ও সমর্থন দেখিয়েছে, যারা প্রতিরোধ জানাতে চরম পদক্ষেপ নিচ্ছেন, তাদের প্রতি সংহতি ও সমর্থন দেখানোর জন্য এখানে উপস্থিত থাকা তাঁর জন্য গুরুত্বপূর্ণ।” বুশনেলের মৃত্যু যুদ্ধের গতিপথ পরিবর্তন করবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন কিনা জানতে চাইলে, তিনি বলেন, ‘এটাই আশা করেছিলাম।’

টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের সান আন্তোনিও শহরের বাসিন্দা অ্যারন বুশনেল (২৫) স্থানীয় সময় রবিবার দুপুর ১টায়, অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় চলমান যুদ্ধ এবং আক্রমণে মার্কিন সমর্থনের প্রতিবাদে ইসরায়েলের দূতাবাসের সামনে নিজের গায়ে আগুন ধরিয়ে দেন।

শহরের ফায়ার ডিপার্টমেন্ট ইসরায়েলি দূতাবাসের বাইরে আগুন লাগার খবর পেয়ে জরুরি কর্মীরা ঘটনাস্থলে ছুটে যান। পরে তাঁকে সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু পরে বিমানবাহিনীর একজন মুখপাত্র স্থানীয় সময় সোমবার সকালে জানান, রবিবার রাতেই তিনি মারা গেছেন।
এএফপি জানিয়েছিল, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করা ফুটেজ অনুসারে, বুশনেল যুদ্ধের পোশাক পরে গায়ে তরল ঢালতে ঢালতে বলেন, তিনি ‘এই গণহত্যায় জড়িত থাকবেন না আর’।

এরপর তিনি নিজের গায়ে আগুনে জ্বালিয়ে ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন’ বলে চিৎকার করেন, যতক্ষণ পর্যন্ত না তিনি মাটিতে পড়ে যান। ভিডিওটি প্রথমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইচে একটি লাইভস্ট্রিমে শেয়ার করা হয়েছিল বলে জানা গেছে। তাঁকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও আহত অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।
মার্কিন সিক্রেট সার্ভিসের একজন অফিসার গুইলবিউ ধারণা করছেন, বুশনেলের মৃত্যুতে শোক জানাতে ৩০০ জনেরও বেশি মানুষ জড় হয়েছিলেন। একজন সাবেক সেনা গোয়েন্দা কর্মকর্তা জোসেফাইন গুইলবেউ আনাদোলুকে জানিয়েছেন, তিনি ওহিও থেকে উড়ে এসেছিলেন, কারণ তিনি বিশ্বাস করেন বুশনেলের মৃত্যু বৃথা যেতে পারে না।

তিনি বলেন, ‘তাঁর বার্তাটি সবার কাছে পৌঁছে দেওয়া উচিত এবং আমাদের এটাও নিশ্চিত করতে হবে যে, আমরা বুশনেলের মতো অন্যদেরও প্রতি সমর্থন জানাচ্ছি। আমাদেরও একই অনুভূতি রয়েছে। আমরা আর কীভাবে গণহত্যার সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারি।”
তিনি আরো বলেন, “আমরা আমাদের জীবনে এর আগে এমন কিছু দেখিনি এবং আমাদের সরকার আশা করে, আমেরিকান জনগণ পাঁচ মাস ধরে এই গণহত্যা দেখতে থাকবে এবং আমাদের কোনো মানসিক সমস্যা হবে না। অবশ্যই পুরো বিশ্বজুড়ে মানসিক সমস্যা দেখা দিচ্ছে। ইন্টারনেটে যাদের অ্যাক্সেস আছে, এমন যে কেউ আধুনিক দিনের গণহত্যা দেখতে পাচ্ছেন।”

ভার্জিনিয়ার আনানডেলের বাসিন্দা ২২ বছর বয়সী জেনি রোজমেরি বলেন, ‘বুশনেলের মারাত্মক প্রতিবাদ জানিয়েছেন। চরম কাজ কিন্তু নৈতিক একটি কাজ করেছেন।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমি মনে করি আমাদের সকলের সেই পরিমান সাহসী হওয়ার উচিত। মার্কিন সরকারের অনেক অজ্ঞতা রয়েছে, তারা মানুষের কষ্ট এবং মৃত্যুর সব ভিডিও এড়িয়ে যেতে পারেন না। কিন্তু আমাদের নিজস্ব একজন ছিলেন, যিনি সামরিক বাহিনীতে ছিলেন এবং আশা করেছিলেন কিছু পরিবর্তন ঘটবে।’

এদিকে হামাস মঙ্গলবার বলেছে, ‘ওয়াশিংটনে ইসরায়েলি দূতাবাসের বাইরে নিজের গায়ে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যা করা মার্কিন বিমানকর্মীর যুদ্ধবিরোধী প্রতিবাদ অমর হয়ে থাকবে।’ আত্মহত্যার ফুটেজ অনলাইনে ব্যাপকভাবে শেয়ার করা হয়েছে এবং হামাস বলেছে, ‘এ ঘটনা গাজায় ইসরাইল-হামাস যুদ্ধের প্রতি আমেরিকান জনগণের ক্রমবর্ধমান ক্ষোভের একটি অভিব্যক্তি।’

হামাস ইংরেজিতে জারি করা এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘ নিহত মার্কিন বিমানকর্মী আমাদের ফিলিস্তিনি জনগণ এবং বিশ্বের মুক্ত মানুষের স্মৃতিতে অমর হয়ে থাকবেন। তিনি বিশ্বব্যাপী মানবিক সংহতির চেতনার প্রতীক।’

সূত্র: আনাদোলু

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর