জন্মভূমিতেই থাকতে চায় কামরাঙ্গীরচরবাসী

আপডেট: March 7, 2024 |

শেখ লিমন, নিজস্ব প্রতিবেদক: কামরাঙ্গীরচর প্রায় চার/পাঁচ’শ বছরের পুরোনো এবং ঐতিহ্যবাহী একটি অঞ্চল। অত্র অঞ্চলের স্থানীয়রা কয়েক প্রজন্ম ধরেই বসবাস করে আসছে।

কোনো উন্নয়ন প্রকল্প কিংবা আধুনিকায়ন করতে গিয়ে জন্মভূমি থেকে বিতারিত হতে না হয়, সেজন্য প্রধানমন্ত্রীর নিকট আবেদন জানিয়েছেন কামরাঙ্গীরচরবাসী।

জানা যায়, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন কামরাঙ্গীরচর অঞ্চলে ১০৪ ফিট প্রশস্ত রাস্তা ও কেন্দ্রীয় বাণিজ্যিক অঞ্চল (সিবিডি) গড়ে তোলার পরিকল্পনা থাকায় কামরাঙ্গীরচরের ৩টি ওয়ার্ডে নতুন ভবন নির্মাণে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে।

ঢাকার সার্বিক উপযোগিতা বিশ্লেষণ না করে এমন উদ্যোগের কারণে শঙ্কা প্রকাশ করছেন অনেকেই।

আর যেহেতু নতুন ভবন নির্মাণের অনুমতি দেয়া হচ্ছে না সেক্ষেত্রে অবৈধভাবে ভবন নির্মাণ হতে পারে বলেও মনে করছেন নগরবিদরা।

কামরাঙ্গীরচর থানার ৫৫, ৫৬ ও ৫৭ ওয়ার্ডে প্রায় ২২ হাজার ভবন রয়েছে। এই এলাকায় বসবাস করছে প্রায় ২০ লক্ষাধিক মানুষ। তাছাড়া ব্যাপক জনবহুল এই এলাকায় রয়েছে সহস্রাধিক ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠান।

নিম্নআয়ের মানুষদের কর্মস্থল হিসেবে খ্যাত এই কামরাঙ্গীচরে অধিকাংশই নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষের বসবাস।

জানা যায়, কামরাঙ্গীরচরের তিনটি ওয়ার্ডে জমির পরিমাণ প্রায় ১ হাজার ৫০০ একর। সেখানে কেন্দ্রীয় বাণিজ্যিক অঞ্চল (সিবিডি) গড়ে তোলার সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নগরবিদরা।

ডিএসসিসি ও রাজউক সূত্রে জানা যায়, সেপ্টেম্বরে সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান রাজউক চেয়ারম্যানকে একটি পত্র দেন।

সেখানে জানান, কামরাঙ্গীরচর থানার আওতাধীন সিটি করপোরেশনের ৫৫, ৫৬ ও ৫৭ নম্বর ওয়ার্ডে পরিকল্পিতভাবে কেন্দ্রীয় বাণিজ্যিক অঞ্চল (সিবিডি) তৈরির পরিকল্পনা করছে ডিএসসিসি।

ওই এলাকায় সিবিডি গড়ে তোলার পরিকল্পনা চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত ভবনের নির্মাণ অনুমোদন বন্ধ না রাখলে সিবিডি বাস্তবায়নে নানা ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরও জানা যায়, কামরাঙ্গীরচরের সিংহভাগ জমি ব্যক্তি মালিকানাধীন।

এজন্য ওই এলাকায় ডিএসসিসির সিবিডি বাস্তবায়ন করতে জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। বিষয়টি ওই এলাকার বাসিন্দারা জানতে পারায় তাদের মধ্যে আতঙ্ক ও হতাশা বিরাজ করছে।

তবে সিটি করপোরেশন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সিবিডির উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে ওই এলাকার মানুষও লাভবান হবে। কারও জমি অধিগ্রহণ করা হলে তাদের ন্যায্য পাওনা পরিশোধ করা হবে।

তবে এই বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করে কামরাঙ্গীরচর এলাকাবাসী ‘জীবন দিব কিন্তু তবুও জন্মভূমি দিব না’ এই স্লোগানে ‘জন্মভূমি রক্ষা কমিটি’ গঠন করে একাধিক মানববন্ধনসহ বিভিন্ন আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে।

জন্মভূমি রক্ষা কমিটির পক্ষ থেকে ফারুক হোসেন বলেন, আমরা বহুবছর যাবৎ এখানে বসবাস করে আসছি। কামরাঙ্গীরচরে অনেক উন্নয়ন করেছেন প্রধানমন্ত্রী।

আমরা তার কাছে কৃতজ্ঞ। আমরা এমন কোনো প্রকল্প চাই না, যার মাধ্যমে আমাদের ঘরছাড়া হতে হয়।

স্থানীয় বাসিন্দা গোলাম মাওলা রেজা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়নে কামরাঙ্গীরচরবাসী খুশি। এখানে যে রাস্তাঘাট আছে, তা দিয়ে এলাকাবাসী স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচল করতে পারে।

নতুন করে ১০৪ ফিট রাস্তা বা বাণিজ্যিক অঞ্চল করে এলাকাবাসী ভূমিহীন হউক, এটা এলাকার কেউই চায় না।

কামরাঙ্গীরচরে কেন্দ্রীয় বাণিজ্যিক অঞ্চল (সিবিডি) গড়ে তোলার বিষয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাধারণ সম্পাদক ও নগর পরিকল্পনাবিদ শেখ মুহাম্মদ মেহেদী আহসান বলেন, সেন্ট্রাল বিজনেস ডিস্ট্রিক (সিবিডি) বা কেন্দ্রীয় বাণিজ্যিক অঞ্চল কেন তৈরি হয়? এটা তৈরির পেছনে কিছু কারণ থাকে।

সিবিডি তৈরি হয় যেখানে বিভিন্ন ধরনের অফিস ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান থাকে সেখানে। মতিঝিল, দৈনিক বাংলা, শাপলা চত্বর, সচিবালয় ও আশপাশের এলাকা ঢাকার সিবিডি।

তবে ঢাকায় এখন কয়েকটি সিবিডি গড়ে উঠেছে। তারমধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য; গুলশান, কাওরান বাজার, ধানমন্ডি এলাকা। নতুন করে বাণিজ্যিক অঞ্চল করতে চাইলে তার উদ্দেশ্য পরিষ্কার হতে হবে। কেন করতে চাই, কিভাবে করতে চাই, তা ভালো করে বুঝতে হবে।

তিনি বলেন, ৫০ তলা ভবন, ১৪০ ফুট সড়ক এবং অন্যান্য স্থাপনা নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়ে মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের কাজ শুরু করলে তা সুফল বয়ে আনবে না।

গবেষণা, পরিকল্পনা বা ঢাকার প্রেক্ষাপটে সামগ্রিক বিশ্লেষণের ফলাফলের ভিত্তিতে কি করা হবে তা নির্ধারণ করতে হবে। সেখানে কি করতে চায়, কাদের আনতে চায় তা ঠিক করে কাজ করতে হবে।

তিনি জানান, কামরাঙ্গীরচরে পরিকল্পিত উপায়ে সুন্দর নগরায়ণ হতে পারে। সেখানে কি করলে ভালো হবে, ঢাকার সামগ্রিক প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করে অর্থনৈতিক, পরিবেশ ও ভৌগোলিক বিবেচনায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে।

এসব দিক বিবেচনায় না রেখে হঠাৎ করে নির্মাণ বন্ধ করে দেওয়ার উদ্যোগ অবাস্তব চিন্তা বলে মনে করেন তিনি ।

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর