ফরিদপুরে চালককে হত্যা করে ভ্যান ছিনতাই, দুই কিশোরসহ গ্রেপ্তার তিন

আপডেট: April 18, 2024 |

ফরিদপুর প্রতিনিধি: হতদরিদ্র পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ছিলেন হারুন অর রশিদ (৩৫)। ভাড়ায় ব্যাটারিচালিত ভ্যান চালিয়ে চলত তাঁর সংসার। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ছিনতাইকারীদের ফাঁদে পড়ে নির্মম হত্যার শিকার হয়। এ ঘটনায় দুই কিশোরসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানা-পুলিশ।

আজ বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) দুপুরে ফরিদপুর পুলিশ সুপার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন ও গ্রেপ্তারের বিষয়টি জানান পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম।

এর আগে বুধবার দিবাগত রাতে এ ঘটনায় জড়িত তিনজনকে জেলার চরভদ্রাসন উপজেলা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা হলো ওই উপজেলার মিশাই মাতুব্বরের ডাঙ্গী এলাকার লিটন মণ্ডল ওরফে রুবেল (২৩), চরহোসনেপুর গ্রামের আমিন মণ্ডলের পুত্র ও নতুন ডাঙ্গী এলাকার শেখ হালিমের পুত্র।

নিহত হারুন অর রশিদ নগরকান্দা উপজেলার রামনগর ইউনিয়নের দুলারডাঙ্গী গ্রামে একটি আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা ছিলেন। সেখানে স্ত্রী রহিমন বেগম ও আট বছর বয়সী একমাত্র মেয়ে সাদিয়াকে নিয়ে বসবাস করতেন। ভাড়ায় ব্যাটারিচালিত ভ্যান চালিয়ে চলত তাঁর সংসার।

নিহতের পরিবার ও আসামিদের বরাত দিয়ে পুলিশ সুপার জানান, গত ১৬ ফেব্রুয়ারি বিকেলে ভ্যান নিয়ে বাড়ি থেকে বের হন হারুন অর রশিদ। ওই দিন রাত ৮টার সময় কোতোয়ালি থানার গজারিয়া বাজারের স্ট্যান্ড থেকে সাইনবোর্ড নামক এলাকায় যাওয়ার জন্য দেড় শ টাকায় হারুনকে ভাড়া করে রুবেল ও রুমান। এরপর পথিমধ্যে কলাইহাট এলাকা থেকে সাহিদুলকে ভ্যানে তুলে নেয়। যার মূল পরিকল্পনায় ছিলেন রুবেল।
এরপর সাইনবোর্ড এলাকার পদ্মা নদীসংলগ্ন একটি মেহেগুনিবাগানে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় ভ্যানচালক হারুনকে ধারালো চাকু দিয়ে ভয়ভীতি দেখানো শুরু করে আসামিরা। তখন হারুন ভ্যানের জন্য অনুনয়-বিনয় করে। তখন আসামিরা বলে, ‘বেঁচে থাকলে ভ্যান কিনতে পারবেন, এখান থেকে চলে যান।’ আবারও সে ভ্যানের মায়ায় আসামিদের অনুনয়-বিনয় করে। এ সময় আসামি রুবেলের হাতে থাকা চাকু দিয়ে তার মাথায় আঘাত করে এবং মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। এরপর আসামিরা তার মাথায় বারংবার আঘাত করতে থাকে। একপর্যায়ে সে নিস্তেজ হয়ে পড়লে আসামিরা ভ্যান নিয়ে চলে যায়। এরপরের দিন ওই এলাকা থেকে অজ্ঞানামা হিসেবে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে তার স্ত্রী লাশটি শনাক্ত করে।

এ ঘটনার পর ১৮ ফেব্রুয়ারি ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় ছিনতাইসহ হত্যা মামলা দায়ের করে নিহতের স্ত্রী রহিমন বেগম। এ মামলায় তদন্ত কার্যক্রম করেন থানার এসআই মো. মিজানুর রহমান।
দুই মাসের মধ্যে এ মামলার রহস্য উদ্ঘাটন করে আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়। তবে ছিনতাই হওয়া ভ্যানটি এখনো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি বলে জানান পুলিশ সুপার। পুলিশ সুপার বলেন, আসামিদের রিমান্ড চাওয়া হবে এবং ভ্যানটি উদ্ধার অভিযান অব্যাহত থাকবে।

বিচ্ছিন্ন পরিবারে বেড়ে ওঠা রুবেল একজন পেশাদার ছিনতাইকারী ভ্যানচালক হারুন অর রশিদ হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী লিটন মণ্ডল ওরফে রুবেল একজন পেশাদার ছিনতাইকারী। তাঁর এমন অপরাধকর্মের পেছনে রয়েছে বিচ্ছিন্ন পরিবারে বেড়ে ওঠা। এমনই তথ্য জানিয়েছেন পুলিশ। চরভদ্রাসন উপজেলার মিশাই মাতুব্বরের ডাঙ্গী এলাকার বাসিন্দা আনসার মণ্ডলের সঙ্গে তাঁর মা ফরিদা বেগমের প্রথম বিয়ে হয়। এই দম্পত্তির ঘরেই জন্ম তাঁর। এরপর তার মা একই এলাকার মান্নান নামে অপর এক ব্যক্তিকে বিয়ে করে। পরে ওই সৎ পিতার বাড়িতে বড় হতে শুরু করে। এরপর আবারও তার মা একই এলাকার করিম ঢালী নামে আরেক ব্যক্তিকে বিয়ে করে। এভাবেই বিচ্ছিন্ন পরিবারে বেড়ে উঠে। একপর্যায়ে ঢাকায় গিয়ে অপরাধকর্মে জড়িয়ে পড়ে।

পুলিশ সুপার জানান, আসামি রুবেল একজন পেশাদার ছিনতাইকারী। এর আগে সে ঢাকার সাভার এলাকায় একটি ব্যাটারি চালিত রিকশা ছিনতাই করে। এ সময় ওই রিকশা চালককে নির্মমভাবে মারধর করে এবং মৃত্যু নিশ্চিত করে রিকশা নিয়ে চলে যায় কিন্তু ভাগ্যক্রমে ওই রিকশা চালক বেঁচে যান। এ ঘটনায় সাভার থানায় একটি ছিনতাই মামলা হলে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে এবং গত জানুয়ারিতে ওই মামলায় জামিন পেয়ে জেল থেকে বের হয়ে আসে। এরপর আবারও ছিনতাই অপরাধে জড়িয়ে পড়ে এ হত্যাকাণ্ড ঘটায়।

সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইমদাদ হুসাইন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. সালাউদ্দিন, কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. হাসানুজ্জামান হাসান সহ বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন। ফরিদপুরে চালককে হত্যা করে ভ্যান ছিনতাই; দুই কিশোরসহ গ্রেপ্তার তিন

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর