ফিটনেস ট্রেনিংয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা

আপডেট: April 20, 2024 |

 

দিনের আলো তখনও ফোটেনি। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের এক নম্বর ভিআইপি গেটে সারি সারি গাড়ির লাইন। বাংলাদেশ জাতীয় দলের পুলভুক্ত ক্রিকেটাররা একে একে হাজির ঐতিহাসিক স্টেডিয়ামে। ক্রিকেট বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম থেকে সরে যাওয়ার পর ২০১১ এবং ২০১৬ সালে দুটি বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হয়েছিল এই মাঠে।

এর বাইরে সিসিডিএমের অফিস যখন ছিল তখনই কেবল ক্রিকেটাররা দলবদল করতে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের দুয়ারে আসতেন। এর বাইরে ২০০৪ সালের পর ক্রিকেটারদের তেমন ঢুঁ মারতে দেখা যায়নি। তবে শনিবারের সকালে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে এসে তারা অন্যরকম এক দৃশ্যই দেখলেন, ‘মানুষ এখানে কিভাবে ঘুমায়?’

রাজধানীর গুলিস্তানে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম ও মাওলানা ভাসানী হকি স্টেডিয়াম। স্টেডিয়ামের দোকানের সামনে রাত বাড়লেই বাড়ে ঠিকানাহীন মানুষের আনাগোনা। কেউ মাদুর চাপিয়ে, নয়তো কেউ ফুটপাতের ওপরেই খুঁজে নেন ঘুমানের জায়গা। কারো মাথার ওপর মশারি থাকে, কারো থাকে না। কারো বালিশ থাকে তো কারো থাকে না। রাতে বিনামূল্যে মাথা গোঁজার ঠাঁই পাওয়াতেই তাদের তৃপ্তি। ভোর হতেই তারা চলে যেতে থাকেন যার যার কর্মস্থলে। শান্ত, মিরাজ, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহরা আজ ভোরে স্টেডিয়ামে পা রেখে এমন হৃদয়বিদারক দৃশ্যের মুখোমুখি হন।

বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে তাদের আজ হাজির হওয়ার পেছনের কারণ ফিটনেস ট্রেনিং। নতুন বসানো অ্যাথলেটিক্স টার্ফে ক্রিকেটাররা দিয়েছেন ৪০ মিটার এবং ১৬০০ মিটার দৌড়। চাইলে এই পরীক্ষা করানো যেত নিজেদের মিরপুর স্টেডিয়ামেই। কিন্তু অ্যাথলেটিক্স টার্ফের পরীক্ষা হয় নিখুঁত। দৌড়াতেও সুবিধা। সেজন্য বিসিবির নতুন ট্রেনার ন্যাথান কিলির চাওয়াতেই অ্যাথলেটিক্স টার্ফে চলে এই ট্রেনিং।

শুরুতে হালকা জগিং ও ব্যায়ামে শরীরের জড়তা কাটানোর পর ন্যাথান কিলি ৩৫ ক্রিকেটারদের করণীয় বুঝিয়ে দেন। সংখ্যাটা আরো বাড়ত। তাইজুল ইসলাম, তাসকিন আহমেদ ও সৌম্য সরকার এই ট্রেনিংয়ে যোগ দিতে পারেননি। সৌম্য এখনও পুরোপুরি সুস্থ নন। তাইজুল ও তাসকিনের রয়েছে হালকা নিগল। তবে তারাও পার পাবেন না। পুরোপুরি ফিট হলে তাদেরকেও এই ট্রেনিং দিতে হবে।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড তাদের ক্রিকেটারদের নিয়ে গেছে আর্মি ক্যাম্পে। সেখানে চলে তাদের তিনদিনের কঠোর ট্রেনিং। বিসিবির কাজকের পরিকল্পনা অনেকটাই সেরকম। তবে এদিন শুধু ট্রেনিং নন, তাদের ফিটনেস যাচাইও হয়েছে। যেখানে সবার পারফরম্যান্স এভারেজ।

বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে জড়িয়ে আছে ক্রিকেটের শুরুর ইতিহাস। ছোট্ট একটি ঘরে শুরু হয়েছিল ক্রিকেটের স্বপ্নের যাত্রা। সে স্বপ্নের আশেপাশে ছিল না আলোর ঝলকানি। ছিল না বিদ্যুৎ সংযোগ। রাতের সব কাজ চলতো মোমবাতি জ্বালিয়ে। স্বাধীনতার আগে-পরে ঐতিহাসিক সব ম্যাচের আয়োজন করে ক্রিকেটের এই স্টেডিয়াম জায়গা করে নেয় মানুষের অন্তরে। মর্যাদা ও গৌরবের টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়েছিল এই স্টেডিয়ামের ২২ গজে। ২০০৪ সালের পর এখানে আর হয়নি ক্রিকেটের কোনো কাযর্ক্রম। ক্রিকেট বোর্ডের অফিসও চলে যায় গুলশানের নাভানা টাওয়ারে।

লম্বা সময় পর ক্রিকেটারদের পদচারণায় মুখর হয়ে গেল এই স্টেডিয়াম। বর্তমান ক্রিকেটারদের ভেতরে এই মাঠে কেবল খেলার সুযোগ হয়েছে মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের। এছাড়া ম্যানেজার নাফিস ইকবাল এবং ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের সহকারী ম্যানেজার শাহরিয়ার নাফিসের খেলার সুযোগ হয়েছে এই মাঠে। নাফিসের ক্যারিয়ারের একমাত্র সেঞ্চুরিটি এসেছিল এই মাঠে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। পরের ম্যাচে তার ব্যাটের লড়াইয়ে বাংলাদেশ জিতেছিল প্রথম টেস্ট।

সকাল ৬টার কিছু সময়ের পর শুরু হয় ক্রিকেটারদের ট্রেনিং। থামে আটটার কিছু সময়ের আগে। এর আগে পরে অ্যাথলেটিক্স ট্র্যাকে চলে তাদের ছোটাছুটি, দাপাদাপি। শুরুতে ওজন মেপে তাদের গায়ের জড়ানো হয় ভেষ্ট। যাতে ছিল জিপিএস। তাতে ক্রিকেটারদের প্রতিটি মুহূর্ত নিখুঁতভাবে ট্র্যাক করতে পারেন ট্রেনাররা।

বিন্দু বিন্দু ঘাম ঝরানো এই ফিটনেস ট্রেনিংয়ের উপকারিতার গভীরতা বোঝা যাবে লং রানে। সামনে কয়েক মাস ব্যস্ত সূচি। কোন ক্রিকেটারকে কিভাবে পরিচালিত করতে হবে, কিভাবে যত্ন নিতে হবে সেই দিক নির্দেশনা পেয়ে যাবেন সংশ্লিষ্টরা। ম্যাচ ফিটনেস এবং শারীরিক ফিটনেস আলাদা বিষয়। ম্যাচ ফিটনেস একেক খেলোয়াড় একেকভাবে পেয়ে থাকেন। কেউ অল্পতেই। কারো লাগে বেশি সময়। তবে এই ফিটনেস ট্রেনিং ক্রিকেটারদের শারীরিক গঠন পাল্টে দিতে বড় ভূমিকা রাখবে।

৩৮ পেরোনো মাহমুদউল্লাহ ও ৩৬ পেরোনো মুশফিকুর রহিম এই ফিটনেস ট্রেনিংয়ে নজর কেড়েছেন বেশ। ১৬০০ মিটার রানিংয়ে মাহমুদউল্লাহ সবার পরে আসলেও উনিশ-কুড়ির তানজিদ-সাকিব ও ২৫-২৮ বয়সী মিরাজ-শান্তদের সঙ্গে যেভাবে অ্যাফোর্ট দিয়েছেন তাতে তালি পেয়েছেন। এছাড়া যারা ছিলেন প্রত্যেকেই নিজেদের নিবেদন দেখিয়েছেন। প্রথমবার অ্যাথলেটিক্স টার্ফে দৌড়ানোর উচ্ছ্বাস, রোমাঞ্চ টের পাওয়া গেছে ভালোমতোই। সঙ্গে ক্রিকেটের পুরোনো ঠিকানায় রোমাঞ্চে ডুবে গেছেন তারাও। স্মৃতি রোমন্থনে ক্রিকেটারদের নানা গল্প শুননিয়েছেন নাফিসরা। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম যেখানে মিলেমিশে হয়েছে একাকার।

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর