জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য নিয়োগ: স্থগিতের কারণ অনিয়মে বাধার আশঙ্কা

আপডেট: April 28, 2024 |
inbound3749274019402587657
print news

নিজস্ব প্রতিবেদক: গত ৪ এপ্রিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মিজানুর রহমানকে উপ-উপাচার্য পদে নিয়োগ দেয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।

রাষ্ট্রপতির অনুমোদনক্রমে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এদিন দুপুরেই তাকে নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে। তবে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে আরেকটি প্রজ্ঞাপনে তার নিয়োগের আদেশ স্থগিত করা হয়।

দুপুরে নিয়োগের পর রাতে স্থগিতের ঘটনা নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টদের মধ্যে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।

সবার প্রশ্ন—রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীসহ এতগুলো দফতর ঘুরে যে নিয়োগ চূড়ান্ত হলো, তা কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে স্থগিতের হলো কেন?

শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তার অভিযোগ, বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক মশিউর রহমান তার ‘ক্ষমতা ব্যবহারের মাধ্যমে নানা অপকর্ম করে আসছে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে।

তাছাড়া নিজের অনুগত উপ উপাচার‌্য না হলে অনিয়ম করতে বাধা সৃষ্টি হবে। যার কারণে এজন্য সরকারের উচ্চপর্যায়ে নতুন উপ-উপাচার্য এর বিরুদ্ধে নেতিবাচক বার্তা পাঠিয়েছেন তিনি।

বার্তার বিষয়বস্তু ছিল- তিন বছর আগের যৌন হয়রানির একটি অভিযোগ (নিষ্পত্তি হয়ে গেছে)। ঐ অভিযোগকে কাজে লাগিয়ে অধ্যাপক মিজানুরের নিয়োগ স্থগিত করানো হয়।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সবক্ষেত্রেই রাজনীতি আছে। শিক্ষকদের মধ্যে রাজনীতি একটু বেশি।

তারা একই দলের অনুসারী। তবুও একজন আরেকজনকে দেখতে পারেন না। এখানে তেমনই রাজনীতির বলি হয়েছেন অধ্যাপক মিজানুর রহমান।

অধ্যাপক মিজানুরের যোগ্যতা-দক্ষতা বিবেচনা করেই নিয়োগে ইতিবাচক ছিলেন বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী। পরে প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতিও সম্মতি দেন।

চূড়ান্ত প্রজ্ঞাপনের পরই জল ঘোলা হয়। নির্দেশনা আসে নিয়োগ স্থগিতের।

সরকার নিয়োগ দেওয়ার পরও নতুন উপ-উপাচার্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন এবং খোলামেলা বক্তব্যও দিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক মশিউর রহমান।

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকার উপ-উপাচার্য নিয়োগ দেবে, এটা স্বাভাবিক।

এখানে আমার এখতিয়ার নেই। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে আমার মতামত জানানোর অধিকার রয়েছে। আমি সেটা করেছি।

“অনেকেরই সন্দেহ রয়েছে যে- তিনি (অধ্যাপক মিজানুর) মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শিক্ষক কি না। আবার তার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে অভিযোগও ছিল।

বিষয়গুলো হয়তো আমলে নিয়ে সরকার নিয়োগ স্থগিত করতে পারে। যদিও প্রকৃত কারণ কী তা আমি জানি না। আমার জানার আগ্রহও নেই।”

সরকার নিয়োগ দিতে পারে, আবার স্থগিতও করতে পারে বলে মনে করেন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।

তবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বিভিন্ন মহলে মিথ্যাচার করেছেন এবং গণমাধ্যমে শিষ্টাচারবহির্ভূত বক্তব্য দিয়েছেন বলে দাবি তার।

অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, সরকার আমাকে যোগ্য-দক্ষ মনে করেছিল বলেই হয়তো নিয়োগ দিয়েছিল। পরক্ষণে কেন নিয়োগ স্থগিত হলো তা নিয়ে আমার কোনো প্রশ্ন ছিল না।

গণমাধ্যমের বরাতে জানতে পারলাম উপাচার্য (অধ্যাপক মশিউর রহমান) আমার বিরুদ্ধে সরকারের বিভিন্ন মহলে মিথ্যাচার করেছেন।

তিনি আমার আদর্শ, চিন্তা-চেতনা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। গণমাধ্যমে মিথ্যা-বানোয়াট বক্তব্য দিয়েছেন, আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।

সামাজিকভাবে আমাকে হেয় করে তিনি যে বক্তব্য দিয়েছেন, আমি তার বিচার দাবি করছি।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

২০২১ সালে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড রিসার্চের (নিটার) উপদেষ্টার দায়িত্ব পালনকালে অধ্যাপক মিজানুরের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছিল।

অভিযোগ তদন্তে ৬ সদস্যের কমিটি হয়। তদন্তে অভিযোগকারীসহ ৩৮ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করে তদন্ত কমিটি।

নিটারের ৬২তম সভায় ঐ প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে ‘কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি’ বলে তাকে ওই অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর