সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সাড়ে ২৬ কোটি টাকা বিতরণ
করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সমাজসেবা অধিদপ্তরের আওতায় গত ১১ মে পর্যন্ত এক লাখ ৯৬ হাজার মানুষকে ত্রাণ হিসেবে খাদ্যসহায়তা ও নগদ অর্থ প্রদান করা হয়েছে।
গণমাধ্যমে পাঠানো মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ তথ্য কর্মকর্তা (পিআরও) মো. শাহ আলম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে আরো তিন কোটি টাকা এবং জাতীয় সমাজকল্যাণ পরিষদ থেকে ২৩.৪৭ কোটিসহ মোট ২৬ কোটি ৪৭ লাখ টাকা দেশের সব জেলা ও উপজেলাপর্যায়ে বিতরণ করা হচ্ছে। সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ব্যক্তিগত অনুদান এবং ৫৬ হাজার নিবন্ধিত স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাসমূহের অনুদানেও ত্রাণকার্য পরিচালনা করা হচ্ছে।
কভিড-১৯ মোকাবেলায় সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন সংস্থার আওতায় ৮০ লাখ ৯ হাজার উপকারভোগীর মধ্যে ভাতাদি বিতরণের কাজ চলছে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে বয়স্কভাতা কর্মসূচিতে উপকারভোগী ৪৪ লাখ, বিধবা ও স্বামীনিগৃহীতা নারীভাতা কর্মসূচিতে ১৭ লাখ, অস্বচ্ছল প্রতিবন্ধীভাতা কর্মসূচিতে ১৫ লাখ ৪৫ হাজার, প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপবৃত্তি কর্মসূচিতে এক লাখ, হিজড়া জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন কর্মসূচিতে পাঁচ হাজার ৭৬৭, বেদে জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন কর্মসূচিতে ১০ হাজার, অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন কর্মসূচিতে ৭১ হাজার, চা-শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন কর্মসূচিতে উপকারভোগী ৫০ হাজার, ক্যান্সার, কিডনি লিভার সিরোসিস, জন্মগত হৃদরোগী, প্যারালাইজড, থ্যালাসেমিয়া রোগীদের আর্থিক সহায়তাপ্রদান কর্মসূচিতে ৩০ হাজার এবং বেসরকারি এতিমখানায় ক্যাপিটেশন গ্রান্ট প্রদান ৯৭ হাজার ৫০০ জন।
সকল সামাজিক নিরাপত্তাকার্যক্রমের আওতায় জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত তৃতীয় কিস্তির নিয়মিত ভাতা বিতরণ এবং এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত চতুর্থ কিস্তির অগ্রিম ভাতাও স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিতরণের কাজ চলমান। এ ছাড়া তৃতীয় ও চতুর্থ কিস্তির ভাতা বিতরণ প্রায় ৭৫ শতাংশ সম্পন্ন হলেও ঈদুল ফিতরের আগেই সকল ভাতা বিতরণের কাজ সম্পন্ন হবে। চলতি অর্থবছরে প্রায় ১১ লাখ ভাতাভোগী অনলাইনে G2P Payment এর মাধ্যমে ভাতা পাচ্ছেন এবং আগামী ডিসেম্বরের এর মধ্যে সব ভাতাভোগীকে এ পদ্ধতির আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে। পরিস্থিতির কারণে সুদমুক্ত ঋণগ্রহীতাদের কাছ থেকে ঋণ আদায় স্থগিত রয়েছে।
পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে অর্থ বরাদ্দপ্রাপ্তি সাপেক্ষে অতিরিক্ত ঋণ প্রদানের পরিকল্পনা রয়েছে। এখাতে অতিরিক্ত এক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের জন্য অর্থবিভাগের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। বর্তমানে চলমান সুদমুক্ত ক্ষুদ্রঋণগ্রহীতার সংখ্যা প্রায় ১২ লাখ ৮৩ হাজার জন এবং সুদমুক্ত ক্ষুদ্রঋণ আদায়ের হার গড়ে ৯০ শতাংশ। বর্তমানে সারা দেশে জেলা-উপজেলাপর্যায়ে মোট ৫২৩টি হাসপাতাল সমাজসেবা ইউনিটের মধ্যে ঢাকা মহানগরীসহ জেলাপর্যায়ে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ১০৪টি ও উপজেলাপর্যায়ে ৪১৯টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এই কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
অন্যদিকে, সুবিধাবঞ্চিত শিশুসুরক্ষা কার্যক্রমের অধীনে ৮৫টি সরকারি শিশু পরিবার, এতিম ও প্রতিবন্ধী ছেলেমেয়েদের ছয়টি কারিগরি প্রশিক্ষণকেন্দ্র, নারীদের তিনটি আর্থসামাজিক প্রশিক্ষণকেন্দ্র, ছয়টি ছোটমনি নিবাস, একটি ডে-কেয়ার সেন্টার, ১৩টি শেখ রাসেল শিশুপ্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসনকেন্দ্র এবং তিনটি দুস্থ শিশুপ্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসনকেন্দ্রে মোট উপকারভোগী রয়েছে সরকারি প্রতিষ্ঠানে ১৭ হাজার এবং ৩৯২০টি বেসরকারি ক্যাপিটেশন গ্রান্টপ্রাপ্ত বেসরকারি এতিমখানায় সাড়ে ৯৭ হাজার শিশু।
আইনের সংস্পর্শে বা সংঘর্ষে আসা শিশু ও ব্যক্তির উন্নয়ন ও পুনর্বাসনের আওতায় তিনটি শিশু উন্নয়নকেন্দ্র, ছয়টি নারী ও শিশু-কিশোরী হেফাজতিদের নিরাপদ আবাসনকেন্দ্র, পাঁচটি সরকারি আশ্রয়কেন্দ্র এবং ছয়টি সামাজিক প্রতিবন্ধী নারীদের প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসনকেন্দ্রেও নতুন নিবাসীদের আলাদাভাবে ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে রাখা নিশ্চিত করা হয়েছে।
এ ছাড়া ৭৯টি প্রতিবন্ধীবিষয়ক প্রতিষ্ঠানে প্রায় এক হাজার ৫৮৭ জন নিবাসীর স্কুলবন্ধ থাকায় কোচিং সাইকেলের মাধ্যমে, টিভি ও অনলাইনভিত্তিক পাঠদান নিশ্চিত করা হয়েছে। এরমধ্যে সমন্বিত দৃষ্টি প্রতিবন্ধী প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৬৪টি এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ১৫টি।
বৈশাখী নিউজ/ জেপা