ভারতে ‘কমিউনিটি ট্রান্সমিশন’ পুরোদমে শুরু, বলছেন বিশেষজ্ঞরা

আপডেট: May 31, 2020 |
print news

ভারতে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় নরেন্দ্র মোদি সরকারের নীতির কঠোর সমালোচনা করেছেনদেশটির শীর্ষস্থানীয় স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। এক যৌথ বিবৃতিতে তারা এ সমালোচন করেন।

চিকিৎসা বিশারদদের অন্তত তিনটি পেশাদার সংগঠন তাদের ওই বিবৃতিতে বলেছে ভারতে যে লকডাউন জারি করা হয়েছে তা রীতিমতো ‘ড্রাকোনিয়ান’ এবং যাবতীয় চেষ্টাকে ব্যর্থ করে ভারতে ইতিমধ্যে ‘কমিউনিটি ট্রান্সমিশন’ও শুরু হয়ে গেছে পুরোদমে।

এই বিবৃতি এমন এক সময়ে এল যখন আগেকার সব রেকর্ড ভেঙে ভারতে গত চব্বিশ ঘন্টায় নতুন করে সোয়া আট হাজার করোনা পজিটিভ রোগী শনাক্ত হয়েছেন।

পাশাপাশি চার দফার লকডাউন শেষে আগামিকাল থেকে ভারতে ‘আনলক ১’ পর্ব শুরু হচ্ছে আর সব কর্মকান্ডও ধীরে ধীরে খুলে দেয়া হচ্ছে।

আলোচিত ওই বিবৃতিটি যৌথভাবে জারি করেছে দেশের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের তিনটি পেশাদার সংগঠন, ইন্ডিয়ান পাবলিক হেলথ অ্যাসোসিয়েশন, ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অব প্রিভেন্টিভ অ্যান্ড সোশ্যাল মেডিসিন এবং ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অব এপিডেমিওলজিস্টস।

যারা বিবৃতিতে সই করেছেন তার মধ্যে জনস্বাস্থ্য ও চিকিৎসা বিজ্ঞানের বহু দিকপালই আছেন। যেমন ড: ডিসিএস রেড্ডি, সরকারের শীর্ষ গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইসিএমআর কোভিড-১৯ মোকাবিলায় গত মাসে যে এপিডেমিওলজি গ্রুপ গঠন করেছিল তিনি তার প্রধান।

ওই গ্রুপের আরেক সদস্য ও এইমসের কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের ড. শশী কান্তও বিবৃতিতে অন্যতম স্বাক্ষরকারী এবং তাঁর মতো এরকম আরও অনেকে।

‘সামাজিক সংক্রমণের শিকড় ছড়িয়েছে’

তারা ওই বিবৃতিতে সরাসরি বলেছেন, ভারতে এই পর্যায়ে করোনাভাইরাস মহামারি নির্মূল করা যাবে এটা আশা করাটাই ভুল। কারণ সামাজিক সংক্রমণ বা কমিউনিটি ট্রান্সমিশন এর মধ্যেই ভারতে পাকাপোক্তভাবে জায়গা করে নিয়েছে এবং একটা বিরাট ‘সাব-পপুলেশনে’র মধ্যে ছড়িয়েও পড়েছে।

দ্বিতীয়ত, ভারতের লকডাউন-কে ‘ড্রাকোনিয়ান’ বা ভয়ঙ্কর বলে অভিহিত করে তারা আরও বলেছেন, এই পদক্ষেপ যত প্রাণ বাঁচাবে তার চেয়ে শেষ পর্যন্ত সম্ভবত অনেক বেশি প্রাণহানি ঘটাবে।

কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বলছে, এতে শুধু ভারতের জনসংখ্যার অর্ধেকের রুটিরুজিই বিপন্ন হয়নি দেশের যেটা নিয়মিত স্বাস্থ্য পরিষেবা বা অন্যান্য রোগের যে চিকিৎসা ব্যবস্থা, করোনাভাইরাস ঠেকানোর নামে সেটা প্রায় বন্ধই হয়ে গেছে।’

ভারতে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে এখন যা করা দরকার, এই বিশেষজ্ঞরা তাদের বিবৃতিতে সে বিষয়ে এগারো দফার একটা সুপারিশমালাও পেশ করেছেন।

যার অন্যতম হল কোভিড-১৯র বিরুদ্ধে লড়াইতে আরও স্বচ্ছ্বতা আনা।

112570754 whatsubject

রিপোর্টের অন্যতম লেখক, এইমসের বিশেষজ্ঞ ড. সঞ্জয় কে রাই যেমন বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, ‘সরকারের উচিত কোভিড-১৯ সংক্রান্ত যাবতীয় ডেটা, টেস্ট রেজাল্ট সব প্রকাশ্যে আনা যাতে সেখানে সবার অ্যাকসেস থাকে।’

তারা মনে করছেন, এই তথ্যটা না-পেলে কোনও নিরপেক্ষ গবেষণা কিংবা কোভিড-১৯র বিরুদ্ধে সঠিক স্ট্র্যাটেজি নিরূপণও সম্ভব নয়। তাছাড়া সারা দেশব্যাপী লকডাউন তুলে নিয়ে এখন ক্লাস্টার-ভিত্তিক বিধিনিষেধ চালু করা উচিত বলেও তারা পরামর্শ দিয়েছেন।

এটাও বলেছেন, আমলাদের সঙ্গে কথা বলেই সরকার এখন যাবতীয় সিদ্ধান্ত নিচ্ছে তার বদলে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের বেশি করে যুক্ত করা উচিত।

সোয়া আট হাজার নতুন রোগী

এদিকে ভারতে চতুর্থ দফার লকডাউনও রোববারই শেষ হচ্ছে ওদিকে দৈনিক নতুন রোগীর সংখ্যাতেও প্রায় রোজই আগের রেকর্ড ভাঙছে। গত চব্বিশ ঘন্টায় ভারতে ৮৩৮০ জন নতুন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন যেটা আগের সব রেকর্ড ছাপিয়ে গেছে।

ভারতে এখন মৃত্যুর সংখ্যাও প্রায় সোয়া পাঁচ হাজার যেটা চীনের সরকারিভাবে দেয়া মৃত্যুর সংখ্যার চেয়েও বেশি।

বস্তুত চার দফার লকডাউনের একেবারে শেষে এসে দেখা যাচ্ছে সংক্রমণের হার ক্রমশ বেড়েই চলেছে যে গতি মন্থর হওয়ার এখনও পর্যন্ত কোনও লক্ষণই নেই।

কিন্তু অর্থনীতির স্বার্থে আগামীকাল সোমবার থেকেই ভারতে শুরু করতে হচ্ছে ‘আনলক ১.০’ যেখানে লকডাউন অনেকটাই শিথিল করে কঠোর বিধিনিষেধ বহাল থাকছে শুধু ‘কন্টেইনমেন্ট জোন’গুলোতে।

এই একটা জায়গায় এসে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনেক দেরিতে হলেও সরকার মেনে নিচ্ছে বলে আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে। বিবিসি বাংলা।

বৈশাখী নিউজবিসি

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর