উৎসব-আনন্দ-মহামারী কিছুই নেই আমাদের !
সত্যই কি কিছু নেই তাদের? করোনাকালীন এই বৈশ্বিক মহা দূর্যোগে এমনই একজন শিক্ষকের সাথে কথা হলো আমাদের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই শিক্ষক আমাদের যেটি জানান তা শুনে আমরা রীতিমতো স্তম্ভিত হয়ে পড়ি! ১/২/৫ বৎসর নয়, স্বাধীনতার ৪৮ বৎসরোত্তর আমাদের এই প্রিয় মাতৃভূমিতে ২৮-২৯ বৎসর যাবত এক শ্রেণির শিক্ষক যারা ২-৫ হাজার অথবা প্রতিষ্ঠান ভেদে সম্পূর্ণ বিনা বেতনে শিক্ষকতা করছেন।অতি সম্প্রতি নন এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকবৃন্দের আর্থিক অসচ্ছলতার বিষয়টি যথেষ্ট আলোচিত এবং বর্তমানে সরকারও এ বিষয়ে যথেষ্ট আন্তরিকতার পরিচয় দিয়ে ইতিমধ্যে প্রায় ২৮০০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিও ভুক্ত করেছেন। কিন্তু এই শ্রেণির শিক্ষকদের বিষয়টি আরো ভয়াবহ রকমের অমানবিক।
এ শিক্ষকবৃন্দের আর্থিক অসচ্ছলতার সাথে আরো ভয়ানকভাবে যুক্ত আছে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক অসম্মানের দিকটি।কেননা একই এমপিও ভুক্ত প্রতিষ্ঠানে-একই বিধিতে নিয়োগ প্রাপ্ত হয়েও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের অবিবেচনা প্রসূত খামখেয়ালী নীতিহীন অমানবিক নীতিমালার কারনে তারা দীর্ঘ এই সময় চরম সামাজিক এক নিগৃহীহকে সাথে নিয়ে চলতে বাধ্য হচ্ছেন। ১৯৯২ সালের এক বিশেষ অধ্যাদেশ বলে ১৯৯৩ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধীনস্থ বিভিন্ন এমপিও ভুক্ত কলেজে সময়ের প্রয়োজনে অনার্স-মাস্টার্স কোর্স চালুর অনুমোদন দেয়া শুরু হয়। সেই থেকে আজ পর্যন্ত প্রায় ৫০০ বেসরকারি কলেজে এ কোর্স চালু করা হয়েছে।
তন্মধ্যে প্রায় ২০০ অনার্স কলেজ নতুন করে জাতীয় করণ করায় সংখ্যাটি কমে প্রায় ৩০০ তে নেমে এসেছে। প্রায় এ ৩০০ কলেজে বর্তমানে ৪ সহশ্রাধিক শিক্ষক কর্মরত আছে।এখানে উল্লেখ্য যে,নতুন করে জাতীয়করণকৃত কলেজের অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষকরাও আত্তীকরণের আওতাভুক্ত হয়ে থাকেন।এ বিষয়ে অন্য একজন শিক্ষক নেতা ‘নীল নয়ন দাস’ যিনি দীঘদিন এ স্তরের জনবল ও এমপিওর দাবিতে ‘বাংলাদেশে নিগৃহীত অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষক পরিষদ’ নামের একটি শিক্ষক সংগঠনের হয়ে কাজ করছেন তিনি জানান,একই পদ্ধতিতে নিয়োগ প্রাপ্ত হয়ে একই প্রতিষ্ঠানের এইচ এস সি ও ডিগ্রি শিক্ষকবৃন্দ যদি এমপিও ভুক্ত হতে পারে এবং নতুন সরকারি কলেজে নিয়োগ প্রাপ্ত শিক্ষকরা যদি আত্তিকৃত হতে পারে তবে আমরা কেন এমপিও পাবনা? তিনি অত্যন্ত আক্ষেপের সুরে আরো বলেন, একটি দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় এতো বৈষম্য কিভাবে মেনে নেয়া সম্ভব! কেন, আমাদের ছাত্ররা কি ভালো ফলাফল করছে না,আমরা কি উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত নয়?
তিনি আরো জানান, এই করোনাকালীন মহা সংকটে শিক্ষার্থী বেতন নির্ভর একটি উচ্চ শিক্ষাস্তর এভাবে চলতে পারে না। শিক্ষার্থীরাও এখন কিভাবে হাজার/হাজার টাকা বকেয়া পরিশোধ করবে-কিভাবে সেটি সম্ভব! আর আমাদের কি সত্যই কিছুই নেই-পরিবার-পরিজন,উৎসব-আনন্দ,মহামারী-কিচ্ছু নেই!
“হ্যাঁ, তবু তারা আজও তারা সপ্ন দেখছে একটি বিশ্বস্ত হাতে -সেই হাত যে হাতে একবারে ২৬হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়তাকরণ সম্ভব হয়েছে,সম্ভব হয়েছে বিশ্বকে অবাক করা পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ,সম্ভব হয়েছে ৪৬ বৎসরের কলঙ্ক মোচনের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার-সেই হাতেই এখন তাদের সপ্ন বাস্তবায়নের শেষ আশ্রয় স্থল। তাদের এ বিশ্বাস যেন সত্যি হয় এমপিও নয় বাকি সকল অনার্স কলেজ জাতীয়করণ।