ফ্রিজ ছাড়াও ঘরোয়া পদ্ধতিতে ইনসুলিন সংরক্ষণ সম্ভব
গেল মে মাসের ২০ তারিখ পশ্চিমবঙ্গে আঘাত হানে সাইক্লোন আম্ফান। ঘূর্ণিঝড়ে বেশ কিছু জায়গায় টানা ৪-৫ দিন বিদ্যুৎ ছিল না। সাধারণ মানুষ ক্ষোভ দেখিয়ে প্রতিবাদও করেছিলেন। প্রশ্নের মুখে পড়েছিল সিইএসসি ও রাজ্য বিদ্যুৎ সংস্থা।
এরই সঙ্গে বিদ্যুৎবিহীন পরিস্থিতির সময় বহু ডায়াবেটিক রোগীর ইনসুলিন না নিতে পারার ঘটনাও সামনে এসেছে। ইনসুলিনের কার্ট্রিজ ফ্রিজে রাখতে না পেরে অনেকেই রোগীর স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। শুধু সাধারণ মানুষই না, ওষুধের দোকানদার এবং ব্যবসায়ীরাও এ নিয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। বিদ্যুৎ না থাকায় ফ্রিজে ইনসুলিনের কার্ট্রিজ রাখা সম্ভব হচ্ছিল না বলে অভিযোগ তুলেছিলেন তারা। এর জেরে ইনসুলিন না নিয়ে অনেক ডায়াবেটিক রোগীর স্বাস্থ্যের অবনতি এমনকী মৃত্যু পর্যন্ত ঘটেছে বলে সামনে এসেছিল।
ইনসুলিনের কার্ট্রিজ যেগুলি ব্যবহার করা হয়নি সেগুলিকে সাধারণত ৪-৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার মধ্যে রাখতে হয়। তবে যে ইনসুলিনের কার্ট্রিজ খোলা হয়ে গিয়েছে এবং ব্যবহার করা হচ্ছে তা আপনি ঘরের তাপমাত্রাতেই রাখতে পারেন। তার জন্য ফ্রিজে না রাখলেও সেই ইনসুলিন ব্যবহারযোগ্য। সরাসরি সূর্যের আলো যাতে না লাগে এমন অবস্থায় ইনসুলিনের কার্ট্রিজ ৪ থেকে ৬ সপ্তাহ পর্যন্ত ঠিক থাকে। তাই বিদ্যুৎ না থাকার ফলে সেগুলি বাইরে থাকলে নষ্ট হয়ে যায় না। এমনটাই জানিয়েছেন প্রফেসর ডক্টর সতীনাথ মুখোপাধ্যায়।
ইনসুলিনের কার্ট্রিজ সংরক্ষণের বিষয়ে নানা ধরনের টিপস দিয়েছেন চিকিৎসক। তিনি বলেছেন, ‘এটা একেবারেই গুজব যে রেফ্রিজেটরে না রাখলে ইনসুলিনের কার্ট্রিজ নষ্ট হয়ে যায়। ঘরোয়া পদ্ধতিতেই সেগুলিকে সুরক্ষিত রাখা যেতে পারে। যেমন ধরুন, একটি বাটিতে পানি ভরে সেখানে রাখুন বা বাড়িতে যদি মাটির কোনো পাত্র থাকে তার মধ্যে নতুন ইনসুলিনের কার্ট্রিজ সংরক্ষণ করতেই পারেন। এতে তার কোনো গুণ নষ্ট হবে না। তবে একেবারে ইনসুলিনের কার্ট্রিজের গলা অবধি পানি দিয়ে রাখবেন না। তাতে কোনো রকম লিকেজ থাকলে পানি যাতে না ঢুকতে পারে।’
ডক্টর সতীনাথ মুখোপাধ্যায়ের মতে, ‘ডিপ ফ্রিজারে কোনো ভাবেই ইনসুলিনের কার্ট্রিজ রাখা যাবে না। কারণ ওটি জমে গেলে গুণ নষ্ট হয়ে যাবে। ৪ ডিগ্রির নীচে এবং ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে রাখা হলে এটি নষ্ট হয়ে যাবে। ভেজা কাপড়ে মুড়িয়ে রাখতে পারেন ইনসুলিনের কার্ট্রিজ। বাজারে গেলে সব কেনার পরে শেষে ইনসুলিনের কার্ট্রিজ কিনবেন এবং বাড়ি ফিরে সবার আগে সেটিয়ে ঠিক ভাবে সংরক্ষণ করবেন। একবার ইনসুলিনের কার্ট্রিজ বা পেন খোলা হয়ে গেলে সেটিকে ঘরের তাপমাত্রাতেই রাখার অভ্যেস করুন। সমান্তরাল ভাবে সেটিকে রাখুন। খুব গরম কিছু বা খুব ঠান্ডার কিছুর সামনে সেটিকে রাখবেন না। বিমানে যাতায়াতের সময়ও সেটিকে নিজের হাতের ব্যাগে রাখুন। কখনও ইনসুলিন পেনেপ মুখ খোলা রাখবেন না এবং এক্সপায়ার হয়ে যাওয়া ইনসুলিনের কার্ট্রিজ বা পেন ব্যবহার করবেন না।’ সূত্র: এইসময়।
বৈশাখী নিউজ/ জেপা