ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে দারুচিনি ব্যবহার করবেন যেভাবে

আপডেট: June 19, 2020 |

কিছু গবেষণা ধারণা দিয়েছে, দারুচিনি ভাইরাসকে ধ্বংস করতে পারে। গবেষণায় কিছু ভাইরাসের বিরুদ্ধে দারুচিনি কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে, যেমন- এইচআইভি, অ্যাডিনোভাইরাস ও হার্পিস সিমপ্লেক্স ভাইরাস। ১৯১৮ সালে ইনফ্লুয়েঞ্জা মহামারির সময় যারা দারুচিনির ফ্যাক্টরিতে কাজ করেছেন তাদের মধ্যে ভাইরাসটিতে আক্রান্তের হার কম ছিল। স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তখনকার মহামারিতে (স্প্যানিশ ফ্লু) একটি জনপ্রিয় পথ্য ছিল দারুচিনির গুঁড়া অথবা দুধে দারুচিনি তেলের ব্যবহার।

কিছু ভাইরাসের প্রতি দারুচিনির কার্যকারিতা দেখে আমরা এটা আশা করতে পারি যে, এটি চলমান কোভিড-১৯ মহামারির পেছনে দায়ী করোনাভাইরাসকেও ধ্বংস করতে পারবে অথবা দমিয়ে রাখতে পারবে। তা না পারলেও অন্তত এ আশা করা যায় যে দারুচিনি করোনাভাইরাস সংক্রমণের তীব্রতা প্রতিরোধ করতে পারবে। উদাহরণস্বরূপ, দারুচিনি শরীরের প্রদাহ কমাতে পারে। আমাদের শারীরিক প্রতিরক্ষার জন্য প্রদাহ গুরুত্বপূর্ণ হলেও প্রয়োজনাতিরিক্ত প্রদাহে মারাত্মক ক্ষতি হয়।

একটি ভারতীয় গবেষণা দাবি করছে যে, দারুচিনির প্রোসায়ানাইডিন পলিমার এইচআইভি সংক্রমিত ব্যক্তিদেরকে এইচআইভি কন্ট্রোলারে পরিণত করতে পারবে। এইচআইভি কন্ট্রোলার হচ্ছেন তারাই যাদের শরীরে ভাইরাসটি থাকা সত্ত্বেও এইডসের পূর্ণ বিকাশ হয়নি। গবেষকদের মতে, তারা দারুচিনিতে যে মলিকিউল পেয়েছেন তা এইচআইভি ভাইরাসকে দমিয়ে রেখে একটি ডিফেন্স প্রোটিনকে সুরক্ষা দিতে পারে। তারা আশাবাদী যে এ পলিমার নিরাময় দিতে না পারলেও এইচআইভির বিরুদ্ধে ইমিউন রেসপন্স বৃদ্ধি করবে। ক্যাসিয়া দারুচিনিতে (অপরনাম চাইনিজ সিনামন) এইচআইভি-১ ও এইচআইভি-২ এর বিরুদ্ধে কার্যকর উপাদান পাওয়া গেছে, কিন্তু সিলন দারুচিনি নিয়ে এ বিষয়ে গবেষণা করা হয়নি। মনে রাখবেন, ক্যাসিয়া দারুচিনিতে উচ্চ মাত্রায় কৌমারিন থাকে যা লিভার ও কিডনিকে ড্যামেজ করতে পারে। তাই বেশি পরিমাণে ক্যাসিয়া দারুচিনি খাবেন না।

এশিয়ার ঐতিহ্যবাহী হার্বাল মেডিসিনের অন্যতম অনুষঙ্গ হলো দারুচিনি, বিশেষ করে বুকের অসুস্থতায় দারুচিনি ব্যবহৃত হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, দারুচিনির সিনামালডিহাইড শ্বাসতন্ত্রের রোগ অ্যাডিনোভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকর। সিনামন বার্ক অয়েলে উচ্চ পরিমাণে সিনামালডিহাইড পাওয়া যায়। নিয়মিত দারুচিনি খেলে নিউমোনিয়া, শ্বাসনালির ফোলা, কাশি, গলার কর্কশতা ও শ্বাসপ্রশ্বাসের অসুবিধা কমে যেতে পারে।

একটি জাপানি গবেষণায় দেখা গেছে, সিলন দারুচিনির সিনাজিলানিন বাকুলুভাইরাসের সংখ্যা বৃদ্ধিতে বাঁধা দিয়েছে। বাকুলুভাইরাস পোকামাকড়কে সংক্রমিত করে। আরেকটি গবেষণায় সিলন দারুচিনির ইউজিওলকে ভাইরাসিডাল হিসেবে পাওয়া গেছে, অর্থাৎ এটি ভাইরাসকে ধ্বংস করতে পারে। এ উপাদানটি হার্পিস সিমপ্লেক্স ভাইরাস-১ ও হার্পিস সিমপ্লেক্স ভাইরাস-২ এর বিরুদ্ধে কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। ইউজিওলের ভালো উৎস হচ্ছে সিলন সিনামন লিফ অয়েল।

দারুচিনিকে পানিতে সিদ্ধ করে অথবা গরম পানিতে দারুচিনির গুঁড়া মিশিয়ে পান করতে পারেন। এতে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট পলিফেনল ও প্রোঅ্যান্থোসায়ানাইডিন আপনার ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে তুলবে। দারুচিনির অ্যান্টিভাইরাল, অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিফাঙ্গাল প্রপার্টি বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি কমাতে পারে, যেমন- শ্বাসতন্ত্রের রোগ ও হার্টের রোগ।

চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া সিনামন বার্ক অয়েল অথবা সিনামল লিফ অয়েল ব্যবহার করতে যাবেন না।সিনামন অয়েল এত বেশি শক্তিশালী যে এক বা দুই ফোঁটার বেশি খেলে শরীরের ভেতর পুড়ে যেতে পারে। কোন খাবারে কতটুকু সিনামন অয়েল মেশালে ক্ষতির আশঙ্কা নেই তা জানতে কোনো এক্সপার্টের পরামর্শ নিন।

বৈশাখী নিউজজেপা

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর