আশুরার দিনে যা করণীয় ও বর্জনীয়

আসমান ও জমিন সৃষ্টির দিন থেকে বছরে আরবি ১২টি মাস ধার্য করে দিয়েছেন মহান রাব্বুল আলামীন। সৃষ্টির প্রথম দিন থেকেই যা লওহে মাহফুজে লেখা রয়েছে। আর এই ১২ মাসের প্রথম মাসটির নাম হলো মহররম। মহররম অর্থ সম্মানিত।

মহররম সঙ্গে জিলকদ, জিলহজ ও রজব মাসকেও সম্মানিত এবং রবকতপূর্ণ মাস হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ইমাম জাসসাস (র.) ‘আহকামুল কোরআন’ গ্রন্থে উল্লেখ করেন, পবিত্র কোরআনের ভাষ্য অনুযায়ী সম্মানিত চার মাসের এমন কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা অন্যান্য মাসে নেই। এ মাসে বেশি বেশি ইবাদত বন্দেগি করলে অন্য মাসগুলোতেও ইবাদত বন্দেগির তাওফিক ও সাহস লাভ করা যায়। এ মাসগুলোর মধ্যে পাপ কাজ থেকে বিরত থাকলে অন্যান্য মাসেও পাপ কাজ থেকে বিরত থাকার আদত গড়ে উঠে।

আশুরার দিনের আমল
রাসূলুল্লাহ (সা:) আশুরার রোজা নিজে রেখেছেন ও উম্মতকে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন, অসংখ্য হাদিসে আশুরার রোজার ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। হজরত আয়েশা (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- রাসূল (সা:) প্রথমে আশুরার দিনে রোজা পালনের নির্দেশ দিয়েছিলেন, পরে যখন রমজানের রোজা ফরজ করা হলো, তখন যার ইচ্ছা আশুরার রোজা রাখত আর যার ইচ্ছা রাখত না (বুখারি: ৪/২৪৪, মুসলিম: ১১২৫)

হজরত আবু কাতাদা সূত্রে বর্ণিত রাসূল (সা:) বলেন, ‘আশুরার দিনের রোজার ব্যাপারে আমি আল্লাহর কাছে আশা করি তিনি পূর্ববর্তী এক বছরের গুনাহ মাফ করে দেবেন।’ (মুসলিম: ১১৬২, আবু দাউদ:২/৩২১)

হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা: হতে বর্ণিত, তিনি বলেন ‘আমি নবী করিম (সা:)কে রোজা রাখার জন্য এত অধিক আগ্রহী হতে দেখেনি, যত আগ্রহী হতে দেখেছি এই আশুরার রোজা ও রমজান মাসের রোজার প্রতি’ (বুখারি: ৪/২৪৫, ২০০৬, মুসলিম: ১১৩২)। আশুরার আগে একদিন বা পরে একদিন রোজা রাখো’ (মুসনাদে আহমদ: ১/২৪১)

উল্লিখিত হাদিস ও অন্য হাদিসের আলোকে ফকিহরা বলেন, রোজা দুই দিন রাখা মোস্তাহাব ৯ ও ১০ তারিখ, তা না হলে ১০ ও ১১ তারিখ। কারণ, এ ক্ষেত্রে রাসূল সা:-এর নির্দেশনা অনুযায়ী ইহুদিদের বিরুদ্ধাচরণ করা উচিত। তাই ফকিহরা আশুরার দিনেই শুধু একটা রোজা রাখাকে মাকরূহ বলেছেন।

আশুরার দিনে অন্য আরেকটি আমল, হজরত আবু হুরাইরা রা: সূত্রে বর্ণিত, নবী করীম (সা:) ইরশাদ করেন- যে ব্যক্তি আশুরার দিনে আপন পরিবার-পরিজনের মধ্যে পর্যাপ্ত ভাল খানাপিনার ব্যবস্থা করবে, আল্লাহপাক পুরো বছর তার রিজিকে বরকত দান করবেন (তারাবানি: ৯৩০৩)।

অতএব, যদি কেউ উপরিউক্ত হাদিসের ওপর আমল করার উদ্দেশ্যে ওই দিন উন্নত খানাপিনার ব্যবস্থা করে তাহলে শরিয়তে নিষেধ নেই। তবে স্মরণ রাখতে হবে কোনোক্রমেই যেন তা বাড়াবাড়ি ও সীমালঙ্ঘনের স্তরে না পৌঁছে।

বর্জনীয় কাজ
আশুরার সম্মান, মর্যাদা ও ঐতিহ্য আবহমান কাল থেকে চলে আসছে। তবে আশুরাকে কেন্দ্র করে মুসলিম সমাজে কিছু নিষিদ্ধ কর্মকাণ্ড ও কুসংস্কারের প্রচলন হয়ে গেছে। সেসব থেকে বেঁচে থাকা মুসলমানদের জন্য অপরিহার্য কর্তব্য। আশুরার দিন ক্রন্দন-বিলাপ করা, বুকে চাপড়ানো, পিঠে চাবুক দিয়ে আঘাত করা, নিজেকে রক্তাক্ত করা ও শোক মিছিল করা কোনোটিই শরিয়তসম্মত কাজ নয়। কোরআন-হাদিসে এর কোনো ভিত্তি নেই।

ইসলামী চিন্তাবিদদের মতে, আশুরার দিনে তাজিয়া করা, দুলদুল পতাকা, আহাজারি করা, মর্সিয়া, জারি, হজরত ইমাম হাসান ও হোসাইন রা:-এর কবর বানানো এবং নজর নিয়াজ রাখা, বুক চাপড়ানো ও হাই হাসান-হাই হোসাইন বলে বিলাপ করা এগুলো সব বিদআত ও কুসংস্কার।

তবে এ কথা অনস্বীকার্য যে, রাসূল সা:-এর প্রিয়তম দৌহিত্র জান্নাতের যুবকদের দলপতি হজরত হোসাইন রা:-এর শাহাদাত ও নবী পরিবারের কয়েকজন সম্মানিত সদস্যসহ প্রায় ৭২ জন কারবালার ময়দানে শাহাদাত বরণ করা তথা কারবালার ইতিহাস মুসলিম জাতির জন্য অতিশয় হৃদয়বিদারক ও বেদনাদায়ক। প্রতি বছর আশুরা আমাদের সেই মর্মান্তিক শাহাদাতের ঘটনাই স্মরণ করিয়ে দেয়।

বৈশাখী নিউজ/ এপি