জিনপিংয়ের দমন-পীড়নে চীন এখন অনেকটাই উত্তর কোরিয়ার মতো!
উইঘুর মুসলিমদের উপর চীন সরকার কর্তৃক নির্যাতনের ঘটনা সরেজমিনে দেখতে সম্প্রতি জিনজিয়াং ভ্রমণ করেছেন ওয়াশিংটন পোস্টের বেইজিং ব্যুরোর সাবেক প্রধান সাংবাদিক আন্না ফিফিল্ড। সেখানে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি লিখেছেন, জিনজিয়াংয়ে চীনা কমিউনিস্ট পার্টি দ্বারা সংগঠিত নির্যাতন-নিপীড়ন দেখে তাঁর মনে হয়েছে, এটা অনেকটা উত্তর কোরিয়ার কিমের শাসনের মতো। জিনজিয়াংয়ে পৌঁছাতে তিনি যেসব বাধার মুখে পড়েছিলেন সে বিষয়ে নিজের লেখা প্রতিবেদনে আলোকপাত করেছেন তিনি।
ফিফিল্ড বলেন, এটা ছিল চার দিনের তীব্র নজরদারি এবং উপদ্রব। অনেকগুলো চেকপয়েন্ট আমাদের পেরতে হয়েছে। প্রতিবেদন তৈরিতে আমাদের পদে পদে বাধার সৃষ্টি করা হয়েছে। স্থানীয় লোকেরা আমাদের সাথে কথা বলতে খুব ভয় পাচ্ছিল। এমনকি কয়েকটি গাড়ি সর্বত্র আমাদের পেছনে লেগেছিল। আমরা যখন তাঁদের দিকে নজর দিতাম তখন তাঁরা ঝোঁপঝাড়ের আঁড়ালে লুকিয়ে যেত, আবার অনেক সময় মোবাইলে কথা বলার ভান করতো। তাঁরা স্পষ্টত আমাদের অনুসরণ করছিল।
তিনি আরো লিখেছেন যে, পাবলিক সিকিউরিটি ব্যুরো অফিসাররা আমাদের হোটেল লবিতে ডেকেছিল। তাঁরা আমাদের স্থানীয় রিপোর্টিংয়ের নিয়ম-কানুন মেনে চলতে বলেন। কারো সাক্ষাৎকার নিতে হলে তাঁদের অনুমতি নেওয়ার কথা বলেন। এমনকি কোনো বিল্ডিংয়ের ছবি তোলার ক্ষেত্রেও।
কাশগরের ভ্রমণ (জিনজিয়াংয়ে) নিয়ে ফিফিল্ড লিখেছেন, এটা এশিয়ার দশ বছর পরে করা তাঁর কোনো প্রতিবেদন। আগের প্রতিবেদনটি ছিল উত্তর কোরিয়া নিয়ে। তবে এবার কাশগরে এই প্রতিবেদন তৈরি করতে গিয়ে ফিফিল্ডের মনে হয়েছে তিনি চীনে নয়, বরং উত্তর কোরিয়ার কোন অঞ্চলে সংবাদ কাভার করতে এসেছেন। উইঘুর সংস্কৃতির আবাস কাশগার শহরকে তাঁর কাছে পিয়ংইয়ংয়ের মতো মনে হয়েছে।
২০০৬ সালে ফিফিল্ড পর্যটক হিসাবে প্রথমবার কাশগারে ভ্রমণ করেছিলেন। সেই ভ্রমণের স্মৃতি উল্লেখ করে তিনি বলেন, সে সময় কাশগার ছিল আমার কাছে অনেকটা ম্যাজিক্যাল শহরের মতো। সেখানে মধ্য এশীয় উইঘুররা আরবী লিপিতে লিখতেন, তুর্কি ভাষায় কথা বলতেন।
তিনি লিখেছেন, এই মাসে কাশগারে ফিরে এসে আমার আগের ভ্রমণের সেই ছবিগুলোর একটাও দেখতে পাইনি। সে সময় আমি বিখ্যাত আইডি কাহ মসজিদ দেখেছি, সেখানে উইঘুরদের স্বতঃস্ফূর্তভাবে নামাজ আদায় করতে দেখেছি। সে সময় দাড়িওয়ালা পুরুষদের এবং মাথার স্কার্ফসহ নারীদের দেখেছি। ক্যামেরার সামনে পোজ দেওয়ার জন্য ছোট ছোট বাচ্চাদের হাসিমুখ দেখেছি। এবারের সফরে সেসবের কিছুই পাইনি। লেখক লিখেছিলেন, সেইসব শিশুদের ভাগ্যে কী ঘটেছিল? যাদের মধ্যে অনেকেরই বয়স এখন বছর কুড়ি হবে।
চীন সরকার উইঘুরদের সংস্কৃতি, ভাষা ও ধর্মকে ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য জিনজিয়াংয়ে কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প নির্মাণ করেছে। সেখানে কমপক্ষে ১০ লাখ উইঘুরকে জোরপূর্বক আটকে রাখা হয়েছে। এই বন্দি শিবিরগুলোতে উইঘুরদের দাড়ি কামানো এবং তাদের চুল উন্মুক্ত রাখতে বাধ্য করা হয়ে থাকে। তাদের চীনা কমিউনিস্ট পার্টির প্রতি আনুগত্যের শপথ নিতে হয়। বাচ্চাদের তাদের বাবা-মায়ের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে এবং এতিমখানায় রাখা হয়েছে।
কাশগারে ফিরে এসে অবাক হয়েছেন জানিয়ে ফিফিল্ড লেখেন, আগের সফরে আমি ওল্ড সিটিতে পরিবারগুলোকে রাতের বাজারে মাংস এবং রুটি খেতে ভিড় জমাতে দেখেছি। রাস্তার পাশ দিয়ে হেটে যেতে যেতে বাচ্চাদের হাসির শব্দ শুনেছি এমনকি যুবকদেরও। তবে এবারের সফরে সেসবের কিছুই চোখে পড়েনি।
এসব চীন সরকারের পুনর্নির্মাণ কর্মসূচীর ফল কি-না যদি প্রশ্ন করা হয় আমি বলবো, অবশ্যই। তবে আমি এ বিষয়ে স্থানীয়দের জিজ্ঞাসা করতে পারিনি। পিয়ংইয়ংয়ে যেমন আমি রাস্তায় লোকজনের সাক্ষাৎকার নিতে পারিনি। কাশগারেও এবার তেমনটাই হয়েছে। কাশগারের মানুষেরা এখন সাংবাদিকদের সাক্ষাৎকার দিতে ভয় পায়। সূত্র : ওয়াশিংটন পোস্ট।
বৈশাখী নিউজ/ ফারজানা