আমাদের সম্পর্ক একটি যুগান্তকারী মুহূর্ত অতিক্রম করছে : প্রধানমন্ত্রী

আপডেট: December 17, 2020 |

বাংলাদেশ ও ভারতের অর্থনীতির ক্রমবর্ধমান পারস্পরিক নির্ভরতা আনন্দের সঙ্গে স্বীকৃতি দেন বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ ও ভারতের অর্থনীতির ক্রমবর্ধমান পারস্পরিক নির্ভরতা আমরা আনন্দের সঙ্গে স্বীকৃতি দিই। আমি বিশ্বাস করি, উভয় দেশ বিদ্যমান সহযোগিতামূলক ঐকমত্যের সুযোগ নিয়ে আমাদের অর্থনীতিকে আরও সংহত করে বৈশ্বিক এবং আঞ্চলিক ভ্যালু-চেইন আরও সমৃদ্ধ করতে পারে।’প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সম্পর্ক একটি যুগান্তকারী মুহূর্ত অতিক্রম করছে। একটি স্বাধীন জাতি হিসেবে বাংলাদেশ ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন করতে যাচ্ছে। বাংলাদেশ এবং ভারত কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠারও ৫০তম বছরে পা রেখেছে। এ ছাড়া আমরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করছি।’

মাত্র কয়েক মাস আগে, ‘আপনাদের জাতির পিতা মহাত্মা গান্ধীর অর্ধশততম জন্মবার্ষিকী আমরা উদযাপন শেষ করেছি। বাংলাদেশে আমরা বাপুজির প্রতি শ্রদ্ধার নিদর্শন হিসেবে একটি বিশেষ ডাক টিকিট অবমুক্ত করেছি। আমরা আজ বঙ্গবন্ধুর সম্মানে ভারতের ডাক বিভাগের একটি স্ট্যাম্পের উদ্বোধন করব’, যোগ করেন শেখ হাসিনা।

আজ বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টায় বাংলাদেশ-ভারতের প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ের দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন। ঢাকার গণভবন থেকে শেখ হাসিনা এবং নরেন্দ্র মোদি দিল্লিতে তার দপ্তর থেকে এ বৈঠকে অংশ নেন।

আজ শুরুতেই বক্তব্য দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। পরে ভাষণ দেন শেখ হাসিনা। ভাষণের পর চিলাহাটি–হলদিবাড়ি রেলসংযোগ চালুর ঘোষণা হয়।

তিনি আরও বলেন, ‘বেশ কিছু সংখ্যক ভারতীয় নাগরিক বাংলাদেশের উৎপাদন ও সেবাখাতে নিযুক্ত রয়েছেন এবং তারা ভারতে নিজ দেশে রেমিট্যান্স পাঠিয়ে থাকেন। অন্যদিকে, বাংলাদেশ থেকে সর্বোচ্চ সংখ্যক পর্যটক এবং চিকিৎসাসেবা গ্রহণকারীকে ভারত গ্রহণ করে থাকে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, আমাদের চলমান যোগাযোগের উদ্যোগগুলো এ ক্ষেত্রে অনুঘটক হিসেবে কাজ করতে পারে। এর অন্যতম উদাহরণ হলো ‘‘চিলাহাটি-হলদিবাড়ি’’ রেল সংযোগ পুনরায় চালু করা- যা আমরা আজ উদ্বোধন করছি।’

শুরুতে করোনা মহামারির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমানে বিশ্ব এক মহা বিপর্যয়ের সম্মুখীন এবং মানবজাতি কীভাবে এ অজানা শত্রুর মোকাবিলা করে, সে পরীক্ষার মুখোমুখি। লাখ লাখ মানুষ মারা যাচ্ছে, জীবন-জীবিকা বাধাগ্রস্ত হয়েছে, অর্থনীতি হয়েছে শ্লথ, বিঘ্নিত হয়েছে সমাজ ব্যবস্থা। সম্ভবত কোভিড-১৯ মহামারির সবচেয়ে বড় বহিঃপ্রকাশ হলো মানুষের সঙ্গে মানুষের যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতা। এ বছরের গোড়ার দিকে ঢাকায় আপনাকে স্বাগত জানানোর ইচ্ছা অপূর্ণ থেকে গেছে। তবু আমাদের গত শীর্ষ সম্মেলনের দিক-নির্দেশনা অনুযায়ী, এ ক্রান্তিকালে উভয় পক্ষের সংশিষ্ট কর্তৃপক্ষ যেভাবে আমাদের দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা এগিয়ে নিয়েছে-তা প্রশংসাযোগ্য।’

করোনা মহামারি মোকাবিলায় ভারত সরকারের নেওয়া পদক্ষেপগুলোর প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আপনার স্বাস্থ্যসেবা প্যাকেজগুলো ছাড়াও, ‘আত্মনির্ভর ভারত’- এর উদ্যোগে প্রবর্তিত অর্থনৈতিক প্যাকেজগুলোও প্রশংসনীয়। আমরা বিশ্বাস করি, আপনার নেওয়া নীতিমালার মাধ্যমে ভারত বৈশ্বিক অর্থনীতিতে আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।’

এ সময় করোনা মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকারের নেওয়া উদ্যোগগুলো তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। যোগাযোগ খাতে উন্নতির লক্ষ্যে দুই দেশের নেওয়া উদ্যোগগুলোর কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০২০ সাল জুড়ে রেলরুট দিয়ে বাণিজ্য, উচ্চ-পর্যায়ের পরিদর্শন ও সভা, সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ, কলকাতা থেকে উত্তর-পূর্ব ভারতে ভারতীয় পণ্যের প্রথম পরীক্ষামূলক চালান পাঠানো এবং অবশ্যই, কোভিড-১৯ বিষয়ে সহযোগিতার মতো বিভিন্ন উদ্যোগ আমরা গ্রহণ করেছি।’

করোনা পরিস্থিতি ভালো থাকলে আগামী ২৬ মার্চ নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশে উপস্থিতি প্রত্যাশা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানগুলো যৌথভাবে উদযাপনের জন্য স্বতঃস্ফূর্তভাবে একত্রিত হওয়ার জন্য আপনাকে এবং আপনার সরকারের প্রতি আমি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে আমাদের অবিচ্ছেদ্য যোগসূত্র স্মরণে আমরা বিশ্বব্যাপী বাছাই করা কিছু শহরে আগামী বছর জুড়ে যৌথ কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ২০২১ সালের ২৬ মার্চ ঢাকায় আপনার উপস্থিতি আমাদের যৌথ উদযাপনের গৌরবময় স্মৃতি স্মরণীয় করে রাখবে। আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’

বৈশাখী নিউজজেপা

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর