ইসরায়েলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হতে কেন এত তোড়জোড় তুরস্কের?

আপডেট: December 18, 2020 |

সম্প্রতি ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে চুক্তি করেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন ও সুদান। এ নিয়ে মুসলিম বিশ্বে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। এই প্রতিক্রিয়ার মধ্যেই নতুন করে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ঘোষণা দিয়েছে মরক্কো। মরক্কোর এই সিদ্ধান্তেও ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে মুসলিম বিশ্বে।

এর মধ্যেই ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে তোড়জোড় শুরু করেছে তুরস্ক। ইসরায়েলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়তে ইতোমধ্যে তেল আবিবে রাষ্ট্রদূত নিয়োগ করেছে দেশটি। তবে এমন প্রেক্ষাপটে প্রশ্ন উঠেছে কেন ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক ভাল করতে তুরস্ক এই তোড়জোড়!

মার্কিন গণমাধ্যম আল-মনিটর জানিয়েছে, ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে গবেষক উফুক উলুতাসকে রাষ্ট্রদূত করে তেল আবিবে পাঠিয়েছে তুরস্ক। উলুতাস পেশাদার কূটনীতিক না হলেও তিনি তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গবেষণা বিভাগের প্রধান হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। হিব্রু ভাষা জানা উলুতাস মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেছেন।

আল-মনিটর অবশ্য জানিয়েছে, তুরস্ককে ইসরায়েলের কাছে ইতিবাচকভাবে তুলে ধরতে উলুতাসকে ভালই কাঠখড় পোড়াতে হবে।

দীর্ঘদিন ইসরায়েলের সঙ্গে এক ধরণের বৈরিতা দেখানোর প্রবণতা দেখা গেছে তুরস্কের। যদিও দুই দেশের বাণিজ্য চলেছে পুরোদমেই।

তুরস্কের পরিসংখ্যান বিভাগের হিসাবে, গত আট বছরে প্রতিবছর বাণিজ্য হয়েছে ৬ বিলিয়ন ডলারের মতো। চলতি বছরের গত ১০ মাসে দেশ দু’টির মধ্যে বাণিজ্য হয়েছে ৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি। তবে তুরস্ক যেভাবে ইসরায়েলকে কাছে টানতে চাইছে তাতে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দুই দেশের বাণিজ্য আরও বেড়ে যাবে।

তবে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান শুধু বাণিজ্যের কথাই ভাবেননি। বাণিজ্যিক ও ভূরাজনৈতিক সুবিধা পেতে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো সম্প্রতি ইসরায়েলের দিকে ঝুঁকেছে। এরই ধারাবাহিকতায় সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন ও সুদনা ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করে নিয়েছে। ফলে ইসরায়েলও সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে।

এদিকে এরদোয়ান সরকারের আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নানা কার্যক্রমকে বাড়াবাড়ি মনে করছে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র। উভয় পক্ষই তুরস্ককে ভিন্ন কারণে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এমনিতেই গত এক দশকে লাগাতার খারাপ হচ্ছে তুরস্কের অর্থনীতি। মুদ্রা লিরার দাম লাফিয়ে লাফিয়ে কমছে। তুর্কি পণ্য বিক্রির ক্ষেত্রে অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা রয়েছে আরব রাষ্ট্রগুলোতেও। সব মিলিয়ে দূরাবস্থা থেকে মুক্তি চাইছেন এরদোয়ান। আর এ জন্যেই ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্কন্নয়নের চেষ্টা করছে তুরস্ক।

এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয় পেয়েছেন জো বাইডেন। তার প্রশাসন মানবাধিকার ও গণতন্ত্র নিয়ে অধিক সক্রিয় হয়ে উঠবে। এ নিয়ে চিন্তিত এরদোয়ান প্রশাসন। পাশাপাশি, সিরিয়া, লিবিয়া ও ককেশাস অঞ্চলে তুরস্কের প্রভাব হটিয়ে দেবে বাইডেন প্রশাসন এমন আশঙ্কাও রয়েছে।

আল-জাজিরাকে জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক লিসেল হিনৎজ এ নিয়ে বলেন, এরদোয়ান নিজেকে মুসলিমদের কথিত নেতা হিসেবে উপস্থাপন করতে চান। মুসলিমদের এ আবেগকে কাজে লাগিয়ে তিনি দেশে ও দেশের বাইরেও জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। আবার তিনিই এখন অর্থনৈতিক দূরাবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের চেষ্টা করছেন। এটিকেও হয়ত তিনি তুরস্কের বিজয় বলেই তুলে ধরবেন।

তুরস্কের কূটনীতিকরাও একই কথা বলছেন। ভূমধ্যসাগরের পরিস্থিতি নিয়ে তুরস্ক বাইরে খুব শক্ত কথা বললেও তারা নিজেদের দুর্বলতা সম্পর্কে জানে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুরস্ক এখন অনেকটাই একা হয়ে পড়েছে। অর্থনীতিও আর সমর্থন দিচ্ছে না। আরব রাষ্ট্রগুলোও ইসরায়েলের দিকে ঝুঁকছে আবার তুরস্কের সঙ্গেও আরবদের সম্পর্ক তলানিতে পৌঁছেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, তাই স্বাভাবিকভাবেই এখন ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে বাধ্য হচ্ছে তুরস্ক।

বৈশাখী নিউজজেপা

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর